1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঘর নাই, খাবার নাই, ঈদ হবে কীভাবে?’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের ৩২ জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ বন্যায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন৷ একবেলা এক মুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছেন বন্যা দুর্গতরা৷ এবারের ঈদ উল-আজহায় তাই তাঁদের মনে নেই কোনো আনন্দ৷ বেঁচে থাকাটাই এখন তাঁদের জন্য বড় দায়৷

ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Asad

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চৈতার খামার গ্রাম৷ ধরলা নদীর তীরে এই গ্রামের মোটামুটি সম্পন্ন কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম৷ ছয় বিঘা কৃষি জমি ছাড়াও তাঁর নিজের বাড়ি ছিল৷ গত ঈদ উল-আজহায় কোরবানি দিয়েছেন৷ কিন্তু এবার তিনি নিঃস্ব৷ কোরবানি তো দূরের কথা, সামনের সংকট কীভাবে সামাল দেবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা তিনি৷ ‘‘আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের চোখের দিকে তাকাতে পারি না৷ ওরা তো আর বোঝে না৷ গতবারও গরু কোরবানি দিয়েছি৷ এবার তো ঘরে খাবারই নাই৷ কোরবানি দেব কীভাবে?'' আহাজারি ইব্রাহিমের৷

‘এবারতো ঘরে খাবারই নাই, কোরবানি দেব কীভাবে?’

This browser does not support the audio element.

তিনি জানালেন যে, তাঁর জমির সব ফসল ভেসে গেছে৷ এতদিন বাঁধের ওপর ছিলেন৷ পানি কমার পর ফিরেছেন বাড়িতে৷ কিন্তু ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারছেন না৷ জমিতে নতুন ফসল বুনতে বীজ লাগবে, সেটা কেনার টাকা নেই৷ ধার দেনা করে দু'মুঠো খাবার জোগাড় করছেন৷ কিন্তু সরকারের কোনো সহায়তা নেই৷ অনেকে ধারও দিতে চায় না৷ কেননা তাঁর মতো অনেক মানুষই বন্যায় সব হারিয়েছে৷ কত মানুষকে আর ধার দেবে তারা! ইব্রাহিমের কাছ থেকে জানা গেল তাঁদের গ্রামের শতাধিক পরিবার বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ এখানে ঈদের আনন্দ নাই৷ আছে কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস৷

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান শাহ আলম জানালেন, ‘‘বন্যায় এই এলাকার চরম ক্ষতি হয়েছে৷ অনেক অবস্থাপন্ন পরিবারও পথে বসে গেছে৷ আমরা আমাদের সাধ্যমত তাদের সহায়তার চেষ্টা করছি৷ সরকারও কিছু ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছে৷ তবে যে ক্ষতি হয়েছে, এই সামান্য সহায়তা তার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল৷ অনেক পরিবারেই এবার ঈদের আনন্দ নেই৷''

‘আমাদের কেউ খোঁজও নেয় না, ঈদ যে এসেছে তাও মাথায় নাই’

This browser does not support the audio element.

উত্তরের আরেক জেলা নীলফমারীর ডিমলা উপজেলার ধানিসেন চরের হামিদুল ইসলাম এখনো বাঁধের ওপর বসবাস করছেন৷ বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় সেই যে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন পরিবার পরিজন নিয়ে এখনো সেখানেই থাকতে হচ্ছে তাঁকে৷ বললেন, ‘‘পানি  কমে গেছে৷ কিন্তু ফিরবো কোথায়? বাড়ি-ঘর তো আর নাই৷ বাঁধের ওপর কত দিন থাকতে হবে তাও জানি না৷ ঘর তুলবো তার জন্য টাকা কোথায় পাব?''

কোরবানির কথা জিজ্ঞেস করতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠেন, ‘‘খাবারই জুটছে না, আবার কোরবানি! এই বাঁধে প্রায় ৫০টি পরিবার আমরা৷ আমাদের কেউ খোঁজও নেয় না৷ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেখা নাই৷ ঈদ যে এসেছে, তা-ও আমাদের মাথায় নাই৷''

হামিদুল ছোটখাট ব্যবসা করতেন৷ বন্যায় সেই ব্যবসাও বন্ধ৷ দোকান ঘরটিও বন্যায় ভেসে গেছে৷ বললেন, ‘‘পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই ছিলাম৷ কিন্তু এখন সামনে শুধু অন্ধকার দেখছি৷ কোরবানির মাংস এবার আমাদের কপালে নাই৷ সন্তানরাও বুঝে গেছে৷ তাই ওরাও কিছু বলে না৷''

‘এখানকার মানুষ শুধু আটা খেয়ে বেঁচে আছে’

This browser does not support the audio element.

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে ৩০শে আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত দেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩২ জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে৷ এ সব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মোট সংখ্যা ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৭ জন৷ বন্যার পানিতে ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৬ লাখ ৫৮৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এবারের বন্যায় ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৫৬টি বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৩৩১টি ঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে৷

মজুদ সংকটের কারণে এবার ঈদ উল-আজহায় ভিজিএফ (ভার্নারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে৷ ফলে এই কর্মসূচির আওতায় তালিকাভুক্ত দেশের ৮৮ লাখ গরিব পরিবার এবারের কোরবানির ঈদে সরকারি এই সহায়তা পাচ্ছেন না৷ সরকারের এই কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারকে বিনা মূল্যে প্রতি ঈদের সময় বছরে দু’বার ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হত৷

‘এখানে ঈদের আনন্দ নেই, বেঁচে থাকাই দায়’

This browser does not support the audio element.

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল ভিজিএফ কর্মসূচি বন্ধের কথা স্বীকার করেন বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ খাদ্য মন্ত্রণালয় যদি চাল বরাদ্দ না দেয় তাহলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে কীভাবে? তবে অন্য কর্মসূচি যথানিয়মে চলবে৷''

সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষের অবস্থাও করুন৷ তাহেরপুর বাদাঘাট এলকার জয়পুর স্কুল-এর শিক্ষক নূরে আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এবার ঈদে ওই এলাকার দরিদ্র মানুষ ভিজিএফ-এর চাল পাচ্ছে না৷ ঈদের সময় কিছু নগদ টাকা দেয়ার কথা বলেছিল সরকার৷ কিন্তু তা দেয়নি৷ এখানকার মানুষ শুধু আটা খেয়ে বেঁচে আছে৷ কোরবানি দেয়ার প্রশ্নই আসে না৷ পুরো গ্রামে মাত্র একটি গরু কোরবানি হচ্ছে৷''

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘‘আমিসহ কয়েকজন মিলে একটি গরু ভাগে কোরবানি দিচ্ছি ধর্মীয় নিয়ম পালনের কারণে৷ কিন্তু আমাদেরও কোরবানি দিতে ভালো লাগছে না৷ এই মাংস আমরা খেতে পারব না৷ আমাদের চারপাশে এত অভুক্ত মানুষ৷ অনেকেই খাবার পায় না৷ এমনিতেই হাওর এলাকার মানুষ দরিদ্র৷ আর বন্যার কারণে তারা এখন বলতে গেলে নিঃস্ব৷ সরকারি কোনো সহায়তাও নেই৷ এরা বড় কষ্টে আছে৷ এখানে ঈদের আনন্দ নেই, বেঁচে থাকাই দায়৷''

আপনারা কীভাবে এই মানুষগুলোকে সহায়তা করতে চান? লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ