মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অবধি উঠেছিল৷ পাঁচ বছরের ছেলেটির বাবা অপর এক মহিলার সঙ্গে বিবাহিত৷ প্রশ্ন ছিল: বাবার জ্ঞান ও অনুমতি ছাড়া মা সন্তানের অভিভাবকত্ব পেতে পারেন কিনা৷
বিজ্ঞাপন
মহিলা খ্রিষ্টান, অবিবাহিত এবং একটি পাঁচ বছরের সন্তানের মা৷ তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলেকে তাঁর যাবতীয় বিনিয়োগের একমাত্র উত্তরাধিকারী করতে – এবং সেই কারণে প্রথমে গার্ডিয়ান কোর্টে এবং পরে হাইকোর্টে সন্তানের একক ‘কাস্টডি' বা রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন করেছিলেন৷ এমনকি ছেলেটির বাস্তবিক পিতার নাম প্রকাশেও তাঁর আপত্তি ছিল৷
উভয় আদালতে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে৷ সেখানে দুই বিচারক, বিক্রমজিৎ সেন এবং অভয় মনোহর সাপ্রু-র বেঞ্চ রায় দিয়েছেন যে, সন্তানের পিতাকে কোনোরকম নোটিস ছাড়াই মাকে অভিভাবক বলে ঘোষণা করা চলতে পারে৷ বিচারকরা বলেছেন, তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিভাবকত্ব আইন বিবেচনা করে ‘‘একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের কল্যাণ''-কে একজন ‘‘উদাসীন পিতা''-র অধিকারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন৷ সবচেয়ে বড় কথা, সুপ্রিম কোর্ট ‘‘একক জননী অথবা অবিবাহিত মা''-কে শুধুমাত্র ‘এফিডেভিট'-এর ভিত্তিতে তাঁর সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষদের৷
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা
ভালোবাসার মানুষ মায়ের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই ‘মা’ দিবসের সূচনা৷ দিনটির প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে৷ জার্মানিতে বিশেষ এই দিনটি পালনের ছবি ও তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
বিশ্ব মা দিবস
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়৷ নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রথম মা দিবস উদযাপন শুরু হয় গ্রিসে৷ গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবি ‘রেয়া’র নামে পূজা করত৷ ১৯১৩ সালে অ্যামেরিকান কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমতি দেয়৷ তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপন শুরু হয়৷ তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি এসেছে অ্যামেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল থেকেই শুরু
জার্মানিতে ‘মা’ দিবসে মা’কে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না৷ বাবাসহ বাচ্চারা সকালের নাস্তা তৈরি করে মায়ের জন্য উপহার সহ টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ সঙ্গে অবশ্যই থাকে ফুল৷ পরে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোনো রেস্তোরাঁয়৷ তবে সব পরিবারেই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
উপহার
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দ ‘মা’৷ তবে কারো কারো প্রশ্ন মা’কে ভালোবাসা দেখানোর জন্য ঘটা করে ‘মা দিবস’ পালন করার কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? কেউ মনে করেন প্রয়োজন নেই, আবার অনেকের মতে উপহার দিয়ে একটি বিশেষ দিনে মা’কে ভালোবাসা দেখানোর পরিকল্পনাটা খারাপ না৷
ছোটবেলা থেকেই শেখা
‘মা’ দিবস আসার আগে থেকেই জার্মানিতে একেবারে ছোট বেলা অর্থাৎ কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের মায়েদের জন্য নিজ হাতে কিছু না কিছু উপহার তৈরি করতে হয় বা ছবি আঁকতে হয়৷ একটু বড় বাচ্চারা কেউ কেউ আগে থেকেই নিজেদের হাত খরচ থেকে মায়ের জন্য উপহার কিনতে কিছু পয়সা জমিয়ে রাখে৷
ছবি: DW
মায়েদের ভাবনা
জার্মানিতে মা দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯২২ সাল থেকে৷ জার্মান মা’দের, বিশেষ করে বয়স্ক মায়েদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শুধু বিশেষ দিনে নয়, তাঁদের সন্তানরা যেন সময় সুযোগ পেলেই মায়েদের সাথে যোগাযোগ রাখে, মায়ের কথা মনে করে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বাণিজ্যিক দিক
মা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন জিনিস বাজারে আসে৷ ফুলের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়ে ওঠে৷ কত ভাবেই না সাজানো ফুল পাওয়া যায় এই দিনে৷ অন্যান্য উপহারের সাথে প্রিয় মায়ের জন্য এক গুচ্ছ ফুল সব ছেলে-মেয়ের হাতেই যেন থাকে৷
ছবি: DW/H. Sirat
দিনটা অবশ্যই রবিবার
প্রতিবছরই তারিখের একটু এদিক সেদিক হলেও বারটি থাকে রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিন৷ ফলে অনেক সন্তান কাছে এসে তাদের প্রিয় মা’কে ভালোবাসা জানাতে পারে৷ অনেক বৃদ্ধা মা শুধুমাত্র এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষাও করে থাকেন, বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশি পরিবার
জার্মানিতে বিদেশিদের মধ্যে তুর্কি বংশোদ্ভূত পরিবারের সংখ্যা সবচয়ে বেশি৷ তাছাড়া ওরা উপমহাদেশের পরিবারগুলোর মতো একসাথে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করে, যে-কোনো উপলক্ষ্যে তো অবশ্যই৷ তাই ‘মা’ দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়৷
ছবি: DW/K. Jäger
নিরাপদ আশ্রয়
মানুষ যখন ভয় পায়, অসুস্থ হয়, কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে তখন তারা মায়ের কাছেই ভয়ার্ত শিশুর মতোই আশ্রয় খোঁজে, আকড়ে ধরে৷ মাকেই তখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়৷ আর তা যে-কোনো দেশের সন্তান এবং মায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
ছবি: imago/imagebroker
মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ কমেছে৷ তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, যেসব মা প্রসবকালীন সময়ে মারা যান তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই ছিল ডায়েবেটিস বা মেদবহুল শরীর৷
ছবি: DW/S. Schlindwein
ফিনল্যান্ডের অবস্থা সবচেয়ে ভালো
শিশু সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’-এর এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের মায়েদের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ অর্থাৎ সেখানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, লেখাপড়া, মায়েদের আয় এবং সামাজিক অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে ওপরে৷ সেখানে শিশুর জন্মের পর মা ও শিশুকে বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
‘‘আজকের সমাজে, যেখানে ক্রমেই আরো বেশি মহিলা তাদের সন্তানদের একাই মানুষ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তেমন একটি সমাজে আমরা একটি কর্মক্ষম পারিবারিক নিউক্লিয়াসের উপর একজন অনিচ্ছুক ও উদাসীন পিতাকে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো অর্থ দেখি না'' – বলেছেন দুই বিচারকের বেঞ্চ৷ তবে শিশুটির তার নিজের জনকের নাম ও পরিচয় জানার অধিকারকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়েছেন আদালত: মার কাছ থেকে বাবার নামধাম জেনে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, যা-তে প্রয়োজনে শিলমোহর করা খুলে খামটি থেকে সে' তথ্য উদ্ধার করা যায়৷
ভারতের নারী অধিকারকর্মীরা স্বভাবতই সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে উৎফুল্ল৷ নিজে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং নারী অধিকার আন্দোলনকারী করুণা নন্দী আদালতের রায়ের পর একটি টুইটে বলেছেন: ‘‘দারুণ! অভিভাবকত্ব আইনকে স্ত্রী-পুরুষের সমানাধিকারের অনুবর্তী করার সময় এসেছিল৷''