সন্তানের জন্য রিকশা চালান যে মা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭নারীবাদীদের কাছে এক দৃষ্টান্ত হতে পারেন জেসমিন৷ পুরুষশাসিত সমাজে তিনি বেছে নিয়েছেন এমন এক পেশা, যা মূলত পুরুষের কাজ হিসেবেই বিবেচিত৷ রিকশায় চালকের আসনে মেয়েদের সচরাচর দেখা যায় না বাংলাদেশে৷ জেসমিন তাই ব্যতিক্রম৷ জীবন চালাতে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আল্লাহ আমাকে একজোড়া হাত এবং একজোড়া পা দিয়েছেন৷ আমি ভিক্ষা করিনা - তারচেয়ে তার দেয়া উপহার কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি৷’’
পাঁচ বছর আগে রিকশা চালানো শুরু করেন জেসমিন৷ তাঁর এক প্রতিবেশী তাঁকে কয়েকদিন রিকশা চালানোর আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন৷ জেসমিন বলেন, ‘‘শুধু নিজের কথা ভাবলে পরের বাড়িতে দাসী হতে সমস্যা ছিল না৷ কিন্তু সন্তান থাকলে সেটা সম্ভব নয়৷ আর ফ্যাক্টরির কাজ অনেক কঠিন এবং পয়সা অনেক কম৷’’
সবকিছু বিবেচনা করে শেষমেশ রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে নেন চট্টগ্রামের এই নারী৷ তবে শুরুটা সহজ ছিল না৷ সমাজ থেকে বাধা এসেছিল৷ ‘‘আমি নারী বলে কেউ কেউ আমার রিকশায় উঠতে অস্বীকার করেছে৷ কেউ কেউ মনে করতেন, আমি যেভাবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি ইসলামে তা করা বারণ৷ কেউ কেউ আবার আমি নারী বলে আমাকে ভাড়া কম দিয়েছে,’’ বলেন তিন সন্তানের মা জেসমিন৷
স্থানীয়রা জেসমিনের নাম দিয়েছে ‘পাগলি খালা৷’ এখনো সুযোগ পেলে কেউ কেউ তাঁকে চটানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু সেসব গায়ে মাখেন না জেসমিন৷ বরং রিকশা চালান সচেতনভাবেই৷ স্থানীয় এক ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছেন, রাস্তায় নিয়মকানুন মেনেই রিকশা চালান জেসমিন৷ এমনকি হেলমেটও পরেন, যা অন্য রিকশাওয়ালারা সচরাচর পরেন না৷
চট্টগ্রামে জেসমিনের এলাকার মসজিদের ইমামও তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন৷ নুরুল আলম আজমিরি বলেন, ‘‘তিনি আমাদের সমাজে একটি ভালো উদাহরণ, কেননা, অনেক ক্ষেত্রে কঠিন সময়ে মেয়েরা পতিতাবৃত্তি বা মাদক বেচার মতো কাজে জড়িয়ে পড়েন৷ সেক্ষেত্রে তিনি যা করছেন তা প্রশংসার যোগ্য৷ তাছাড়া সন্তানের উন্নতির কথাও ভাবছেন তিনি৷’’
গত বছর জেসমিনের রিকশায় পরিবর্তন এসেছে৷ এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান তিনি৷ গড়ে দৈনিক রোজগার আটশো টাকার মতো৷ আট ঘণ্টা কাজ করলে এমন আয় করতে পারেন তিনি৷ এ থেকে রিকশার দৈনিক ভাড়া মিটিয়ে বাকিটা তাঁর নিজেরই থাকে৷
এআই / এসিবি (এএফপি)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন...