সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন নারীরা৷ অবিবাহিত, বয়সে তরুণ ও শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা নারীরা এ ধরনের নির্যাতনের শিকার বেশি হন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
তবে এ বিষয়ে সাধারণত মুখ খোলেন না নির্যাতিতারা, বলছে সংস্থাটি৷
গত অক্টোবর মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা এ গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৪২ ভাগ নারী সন্তান জন্মদানের সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শারীরিক, মৌখিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হন৷
গবেষণাটি ২০১৬ জন সন্তান জন্মদানকারী মা-কে পর্যবেক্ষণ ও সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ার পর ২৬৭২ জন নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা হয়েছে৷
কী বলছে গবেষণাটি?
ঘানা, গিনি, নাইজেরিয়া ও মিয়ানমারের এক তৃতীয়াংশ নারী এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷
তবে এ ধরনের ঘটনা সারা বিশ্বেই ঘটে থাকে৷
সন্তান জন্মদানের ৩০ মিনিট আগ থেকে ১৫ মিনিট পর পর্যন্ত সময়ে নারীরা এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷
গবেষণায় অংশ নেয়া শতকরা ৩০ ভাগ মা জানিয়েছেন, অনুমতি ছাড়াই তাঁদের সিজার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে৷
শতকরা ৫৭ ভাগ জানিয়েছেন, সন্তান জন্মদানের পর তাঁদের কোনো ব্যাথানাশক দেয়া হয়নি৷
সন্তান জন্মদানের পর হাসপাতালের বিল দিতে না পারার কারণে অনেককেই আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে৷
সমাধান কী?
সন্তান জন্মদানের সময়টিতে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় মায়েদের সাথে আলোচনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন গবেষকরা৷ অর্থাৎ, কোনো ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার আগে মায়েদের এ সম্পর্কে জানানো ও তাঁদের অনুমতি নেওয়া৷ হাসপাতালগুলোর প্রসূতিসেবা বিভাগগুলো ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবও দিয়েছে গবেষণাটি, যেন মায়েদের গোপনীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়৷
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সুইডেনের একজন ডাক্তার কাজ করতেন দক্ষিণ ভারতের একটি হাসপাতালে৷ তিনি জানান, ডাক্তাররা অনেক চাপের মধ্যে কাজ করেন৷ যেমন, একটি ওয়ার্ডে ২০ জন, কোনো কোনো ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগীও থাকে৷ আর ডাক্তার থাকেন মাত্র দু'জন৷ ডাক্তারদের দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
রোগীর এ চাপ সামলাতে গিয়ে ডাক্তাররা বার্থ ক্যানেল চিড়ে বড় করে দেওয়ার মতো প্রক্রিয়াও গ্রহণ করেন যেন জন্মদান প্রক্রিয়াটি দ্রুত হয়৷ অনেক সময়ই এটি করা হয় মায়েদের অনুমতি না নিয়ে৷
এ ধরনের পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি সীমিত জনবল, প্রযুক্তি এবং ডাক্তারদের সময়ের চাপের কথা উল্লেখ করেছেন৷ এ অবস্থা কাটাতে প্রয়োজন একটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসেবা, বলেন তিনি৷
মেলিসা ফান ব্রুনেরজুম/আরআর
সন্তান জন্ম দেয়ার সাত উপায়
সন্তানের মা হওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু অনেকেই খুঁজে পাবেন না৷ এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি৷ তবে সেই সন্তান জন্ম দেয়ার বা মা হওয়ার রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়৷ চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেজাইনাল বা যোনি ডেলিভারি
প্রাকৃতির নিয়মে সবচেয়ে আদিম উপায় হচ্ছে ‘ভেজাইনাল ডেলিভারি’৷ এই উপায়ে সন্তান ‘বার্থ ক্যানেলের’ মাধ্যমে, মানে যোনিনালী দিয়ে মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে৷ অবশ্য ঠিক কখন প্রসব হবে, তা আগেভাবে সঠিকভাবে জানা যায় না৷ অধিকাংশ নারী এই প্রক্রিয়াতেই গর্ভধারণের ৩৮-৪১ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেন৷ এভাবে জন্ম নেয়া শিশুর রোগবালাই সংক্রমণের মাত্রা কম৷ তবে সন্তান প্রসবের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Yongrit
সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন
বাস্তবতা হচ্ছে, সব শিশুর জন্ম ভেজাইনাল বার্থের মাধ্যমে হয় না৷ বিশেষ করে জন্মদানের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে ‘সি-সেকশন’, অর্থাৎ নারীর তলপেট এবং জরায়ুর চামড়া কেটে বাচ্চা বের করে আনতে হয়৷ কেউ কেউ প্রসববেদনা এড়াতে এবং যোনির প্রসারতা ঠেকাতেও সিজারিয়ান অপশন বেছে নেন৷ কারো কারো বিশ্বাস যে, যোনিপথে সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তীতে যৌনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/D. Karmann
সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ
অতীতে মনে করা হতো, একবার সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে সেই নারী পরবর্তীতে আর প্রাকৃতিক উপায়ে, অর্থাৎ যোনিনালীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ সিজারিয়ানের পর ভেজাইনাল বার্থ অবশ্যই সম্ভব৷ আর সিজারিয়ানে বাচ্চা জন্মদানের পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে নারীর নানারকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির নজিরও রয়েছে৷
ছবি: Imago/Westend61
ভেক্যুয়াম এক্সট্রাকশন
ভেজাইনাল ডেলিভারির সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভেক্যুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়৷ এই পদ্ধিততে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেয়া হয়৷ এরপর ভেক্যুয়ামের মাধ্যমে সেটি টেনে বের করে আনা হয়৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
ফোরক্যাপস ডেলিভারি
এটাও ভেজাইনাল বা নর্মাল ডেলিভারির সময় জটিলতা তৈরি হলে ব্যবহার করা হয়৷ এই পন্থায় বড় দু’টো চামচের মতো দেখতে ফোরক্যাপস শিশুর মাথা আটকে বার্থ ক্যানেল থেকে তাকে সহজে বের করে আনা হয়৷ সাধারণত গর্ভধারিণী প্রসবের সময় পর্যাপ্ত চাপ দিতে না পারলে এই পন্থা কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/J. Meyer
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)
অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণই জটিল৷ এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার একটি আধুনিক পন্থা হচ্ছে আইভিএফ৷ এ পন্থায় চিকিৎসক নারীর ডিম্বাণু সূচের মাধ্যমে বের করে আনেন এবং ল্যাবরেটরিতে তা শুক্রাণুর সঙ্গে মেলান৷ পরে ভ্রুণ সৃষ্টির পর সেটা ক্যাথিটার ব্যবহার করে নারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরপর ভ্রুণটি নিজে থেকেই মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়৷ দাতার ডিম্বাণু ও শুত্রাণুর মাধ্যমেও এভাবে মা হওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সারোগেসি
যেসব নারী একেবারেই সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম বা সন্তান জন্ম দেয়া যাঁদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার, তাঁদের ক্ষেত্রে মা হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে সারোগেসি বা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নেয়া৷ এক্ষেত্রে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া দেয়া নারীর জরায়ুতে ভ্রুণ বা শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়৷ দ্রষ্টব্য: জনসন ম্যামোরিয়াল হেল্থ ব্লগ এবং উইম্যান’স হেল্থ ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্যালারিটি তৈরি করা হয়েছে৷