1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায়ন নিয়ে রাজনীতি

৮ এপ্রিল ২০১৯

সন্ত্রাসবাদ বা ‘টেররিজম' একটি জটিল বিষয়৷ এ নিয়ে গবেষকরা প্রচুর কাজ করেছেন৷ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে৷ কোনো ঘটনা ঘটলে তাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, তা নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব৷

ছবি: picture-alliance/dpa/Sputnik/A. Chapligin

পৃথিবীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সহিংসতা৷ সুইজারল্যান্ডের এক গবেষণা বলছে, ২০১৬ সালে সহিংসতায় সারা বিশ্বে মারা গেছেন ৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ৷ এই সহিংসতার নানা ধরন রয়েছে৷ বিশ্লেষকদের মতে, অনেক ঘটনাই যেখানে মানসিক অসুস্থতার কারণে হয়, অনেকগুলো হয় রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক আদর্শের সংঘাতের কারণে৷ সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে ৫০ জন মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনাটিকেও আদর্শিক সংঘাতের জায়গা থেকে দেখেছেন অনেকে৷

বৈশ্বিক ‘সন্ত্রাসবাদ' শব্দটি বহুল আলোচিত হয় ওয়ান ইলেভেনের ঘটনার পর যখন মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রে বুশ সরকার ‘ওয়ার অন টেরর' ঘোষণা করেন, যদিও এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘জঙ্গিবাদ' ও ‘সন্ত্রাসবাদ' শব্দ দু'টোর অর্থ ও ব্যবহার কোথায় ও কীভাবে হচ্ছে তা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য ও ধোঁয়াশা দেখা যাচ্ছে৷ কোনটাকে জঙ্গিবাদ ও কোনটাকে সন্ত্রাসবাদ বলা হচ্ছে তা নিয়েও পরিষ্কার ধারণার অভাব দেখা গেছে৷

সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন যে, জঙ্গিবাদ হলো এক ধরনের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য থেকে উৎসারিত, যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত নয় এবং তার জন্য সহিংসতার পথ বেছে নেয়া হতে পারে৷ আর সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদের একটি পথ হতে পারে আবার আলাদা একটি আচরণ হতে পারে যেখানে মূল লক্ষ্য আতঙ্ক তৈরি৷

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পার্থক্য

অ্যাসোসিয়েশন ফর সাইকোলজিকাল সায়েন্সের ২০০৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা ‘প্যাটার্নস অফ থিংকিং ইন মিলিট্যান্ট এক্সট্রিমিজম'-এ বলা হয়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে সাধারণ কিছু বিষয় থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দু'টো সম্পূর্ণ আলাদা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা ভবন ও সম্পদ ধ্বংস করেন, কিন্তু এমনভাবে পরিকল্পনা করেন যেন সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে তাদের এই কাজকে সন্ত্রাসবাদ বলা যাবে না৷ কিন্তু এ ঘটনা কোনো আদর্শিক স্বার্থ রক্ষায় করা হলে তা জঙ্গিবাদ হতে পারে৷ আবার নেতারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় আইনের তোয়াক্কা না করে জনগণকে ভয় দেখাতে সহিংসতা ব্যবহার করেন, তাকে আবার জঙ্গিবাদ বলা যাবে না৷

গবেষক আটরান ও ম্যাক কলি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, মানসিক সমস্যা সন্ত্রাসবাদের কারণ নয়৷ ঠিক যেমন মোঘাদাম ২০০৬ সালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণায় লিখেছেন, ‘‘সন্ত্রাসীরা জন্মান না, তারা তৈরি হন৷ সামাজিক কারণেই সন্ত্রাসবাদের উৎপত্তি, ব্যক্তিগত কারণে নয়৷''

আফসান চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

হেল্প ইউনিভার্সিটির ক্রাইম ও ক্রিমিনোলজি বিভাগের পরিচালক দাতুক আখবার সাতার লিখেছেন যে, মিডিয়াগুলোতে অনেক সময়ই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং কট্টর বা উগ্রপন্থাকে গুলিয়ে ফেলা হয়৷ তিনি তাঁর লেখায় কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরেন৷ সেগুলো হলো: ‘‘সব সন্ত্রাসীই জঙ্গি, কিন্তু সব জঙ্গি সন্ত্রাসী নন৷ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় সাধারণত বেসরকারি কোনো দল, যাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই৷ কিন্তু জঙ্গিদের সাধারণত ‘মিলিশিয়া' ধরনের পোশাক থাকে৷ সন্ত্রাসীরা সহিংসতায় বিশ্বাসী৷ তারা সন্ত্রাসকে তাদের রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক বা আদর্শিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন৷ এতে নিরীহ মানুষ মারা যান৷ সম্পদের সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ তারা নিরীহ মানুষের কথা ভাবেন না৷ অন্যদিকে, জঙ্গিরা সহিংসতার ব্যবহার করতেও পারেন, নাও পারেন৷ তবে তাদের মধ্যে আগ্রাসী ভাব থাকে৷ তারা সবসময় যুদ্ধের মানসিকতাতে থাকে৷ আর তারা তাদের সহিংস আচরণ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে না৷ বরং কোনো সরকার, রাষ্ট্র বা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে৷ যেমন, স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো যেটি করে থাকে, তা জঙ্গিবাদ৷ তবে অন্য কোনো উপায় না পেলে জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো সন্ত্রাসবাদের পথও বেছে নিতে পারে৷''

এ বিষয়ে গবেষক আফসান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পৃথিবীতে কোনো জঙ্গিবাদ হয়না, রাষ্ট্রকে আঘাত না করলে বা রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা না করলে৷ আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি, এলটিটিই, আল কায়দা সবাই তাই করেছে৷ আইএস-ও তাই করেছে৷ চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস-এও তাই৷ আলাদা জুম্ম স্টেট করতে চেয়েছিল৷''

সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি

জাতিসংঘের কাছে জঙ্গিবাদের সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই৷ সংস্থাটি বলছে, তারা সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায়নসহ এর বিরোধী একটি সর্বসম্মত কৌশল তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ কারণ হিসেবে বলেছে যে, সদস্যরাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি৷ তাই তারা সবার কাছে কোনো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার বার্তা দিতে পারছে না৷

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘এটার একটা বড় কারণ যেহেতু সন্ত্রাসবাদ ব্যবহার করা হয়, রাজনৈতিক কারণেই৷'' ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘‘একেবারেই করা হয়নি বললে ভুল হবে৷ সার্কের ইসলামাবাদ প্রটোকলে বলা হয়েছিল, আনআর্মড সিভিলিয়ান পপুলেশনকে যদি আঘাত করা হয়, তাহলে সেটা টেররিজম হবে৷''

তবে সর্বসম্মতভাবে উগ্র সহিংসতার সংজ্ঞা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷ ‘‘ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজমের সংজ্ঞা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে,'' বলেন ড. ইমতিয়াজ৷ তবে সেটি শুধু ধর্মীয়ই হবে, এমন নয়৷

তবে পশ্চিমাদের কাছে সন্ত্রাসবাদ বা টেররিজম-এর মানে ইসলামি জঙ্গিবাদ, বলে মনে করেন গবেষক আফসান চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমারা ইসলামি জঙ্গিবাদ ছাড়া তো আর কোনো জঙ্গিবাদ দেখতে পায় না৷ তারা যখন এই দেশে কথা বলে, তখন তারা ওদের কথাই বলে৷''

তবে নিউজিল্যান্ডের ঘটনাকে ‘টেররিজম' বলা উচিত বলে মনে করেন ড. ইমতিয়াজ৷ ‘‘নিউজিল্যান্ডের যে ঘটনা সেটি টেররিজম বলা হবে৷ কারণ, এটা ইডিওলজিক্যালি মোটিভেটেড ছিল এবং আনআর্মড সিভিলিয়ানদের ওপর হামলা করা হয়েছে,'' বলেন তিনি৷

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ পশ্চিমাবিশ্বের অনেকেই করেছে৷ আফসান চৌধুরীর কাছে বিষয়টি বিরল ঘটনা৷

‘‘পশ্চিমারা এই প্রথম না হলেও রেয়ার কেসে এগুলোকে টেররিজম বলছে৷ এটাকে তারা বড় সমস্যা হিসেবে দেখে না৷ একটা ঘটনা হিসেবে দেখে,'' বলেন তিনি৷ 

সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায়নের দুর্বলতা বা রাষ্ট্রগুলোর ভিন্নতার কারণে এ বিষয়ে বিশ্ব এক প্লাটফর্মে আসতে পারছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ এমনকি কোনো দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকেও সর্বজনস্বীকৃতভাবে নিন্দা করা বা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না৷

তাছাড়া রাজনৈতিক কারণেও একই সংগঠন বা দলকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক জৈশ-ই-মোহাম্মদের ভারতের সেনা কনভয়ের ওপর হামলার ঘটনাকে তুলে ধরে ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘কোনো দেশ কোনো গ্রুপকে টেররিস্ট বললে, অন্য দেশ সেটা নাও বলতে পারে৷ যেমন, ভারতের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, ভারতের মিলিটারি কনভয়ের ওপর হামলা হয়েছে৷ ভারত এদের সন্ত্রাসী বলতে চাইলেও, অনেকেই বলতে চাইছে না৷ কারণ, তারা আর্মড গ্রুপের ওপর হামলা করেছে৷ তো (সংজ্ঞায়নের) সেই জায়গায় এখনো ঝামেলা রয়ে গেছে৷''

এই সংজ্ঞায়নের ঝামেলার কারণেই বৈশ্বিক অনেক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন গবেষকরা৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ