সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ফ্রান্সে কঠোর আইন আনছেন মাক্রোঁ। প্রস্তাবিত এই আইন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিজ্ঞাপন
চরমপন্থীদের মোকাবিলায় কড়া আইন চান ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। এ বার পার্লামেন্টে এই বিল আনা হবে। সেই বিলের কিছু প্রস্তাবিত ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। যেমন, মসজিদগুলিতে কীভাবে অর্থ আসছে, তা দেখা হবে। ধর্মীয় সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্ক্রুটিনি হবে।
কিন্তু এরপর বিতর্কের ঝড় তুলেছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফ্রান্স এখন চরমপন্থী মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। আর প্রস্তাবিত বিল নিয়ে তাঁর বক্তব্য, কোনো পুরুষ যদি চিকিৎসকের কাছে যান এবং বলেন মহিলা ডাক্তারের কাছে তিনি চিকিৎসা করাবেন না, তা হলে পাঁচ মাসের জেল ও ৭৫ হাজার ইউরো জরিমানা হবে। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে মেয়েদের ক্ষেত্রেও। কোনো সরকারি কর্মকর্তার উপর চাপ সৃষ্টি করলে বা কোনো শিক্ষকের কাছে পড়তে না চাইলেও শাস্তি হবে।
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
7 ছবি1 | 7
এরপরেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে চিকিৎসক বা নার্সের কাছে চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করলে জেলে যেতে হবে, বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এই ব্যবস্থার সমালোচনায় মুখর হন নেটিজেনরা।
এই বিল আনা হবে ডিসেম্বরে। ১৯০৫ সালে রাষ্ট্র থেকে চার্চকে আলাদা করতে আইন আনা হয়েছিল। সেই আইনকেই সংশোধন করে নতুন ব্যবস্থাগুলি ঢোকানো হবে।
তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য নতুন নয়। স্যামুয়েল প্যাটির হত্যার পর তিনি বলেছিলেন, সুপারমার্কেটে হালাল ও কোশার খাবার দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। তাঁর কাছে, এটাও বিচ্ছিন্নতাবাদের উদাহরণ।