ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর দেশেই ইমাম প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছে জার্মানি। ‘ইসলাম সম্মেলনে এমনটাই জানালেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে অভিনব পরিকল্পনা করেছে জার্মান সরকার। জার্মানভাষী ইমামরা যাতে জার্মানিতেই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার থেকে জার্মানিতে শুরু হয়েছে 'ইসলাম কনফারেন্স'। সেখানেই এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার।
সম্প্রতি প্যারিস, নিস এবং ভিয়েনায় ইসলামি চরমপন্থীরা বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। নিহত হয়েছেন এক শিক্ষক সহ সাধারণ মানুষ। তারপরেই ইউরোপ জুড়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন পাকিস্তান এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানরা। মাক্রোঁও বাকস্বাধীনতার নামে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিভেদের আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বহু বিশেষজ্ঞ। জার্মানির পদক্ষেপ সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
5 ছবি1 | 5
ভার্চুয়াল ইসলামিক কনফারেন্সের প্রধান বক্তা ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফার। তিনি বলেছেন, যে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ইউরোপে এখন এত আলোচনা চলছে, তা রুখতে ইসলামিক গোষ্ঠীগুলিকেই আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে হবে। সে কারণেই জার্মান বলতে পারা ইমামদের জার্মানিতেই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন এবং সবার কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেবেন।
সাধারণত, জার্মানির ইমামরা তুরস্কে গিয়ে ইমাম হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। তুরস্কেই ইসলামিক স্কুলে তাঁরা পাঠ নেন। কিন্তু জার্মানি চাইছে, জার্মানিতেই সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে।
শুধু ইমামদের প্রশিক্ষণই নয়, জার্মানির মসজিদগুলোকে আরো সাহায্য দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। মসজিদগুলোতে যাতে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা যায় সেই পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে মসজিদগুলো পরিচালনার দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।