প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, রক্ত ও জল একসঙ্গে একই খাতে বইতে পারে না৷ তাই সিন্ধু নদের জলচুক্তি রদ করার সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও, বর্তমান চুক্তি পর্যালোচনা করার কথা বলছে ভারত৷ বলছে দেশের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ জল ধরে রাখার কথা৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, রক্ত ও জল একসঙ্গে একই খাতে বইতে পারে না৷ তাই সিন্ধু নদের জলচুক্তি রদ করার সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও, বর্তমান চুক্তি পর্যালোচনা করার কথা বলছে ভারত৷ বলছে দেশের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ জল ধরে রাখার কথাও৷
উরি সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব কীভাবে এবং কোন পথে দেওয়া হবে এই নিয়ে মোদী সরকারে চলছে বিস্তর ভাবনা-চিন্তা৷ প্রশ্ন হলো – সেটা কি এখন জলযুদ্ধের চেহারা নেবে? এমনটাই কিন্তু আশংকা করছেন অভিজ্ঞ মহল৷ ভারতের ভৌগলিক অবস্থান সিন্ধু নদের উজানে থাকায়, জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক সুবিধা আছে ভারতের৷ তাই সরকারি মতে, সর্বাধিক পরিমাণ জল নিজের দিকে ধরে রাখলে সেটা বর্তমান চুক্তির খেলাপ হবে না৷ এটা নাকি ভারতের অধিকারের মধ্যে পড়লেও, গত ৫৫ বছরে তার পূর্ণ অধিকার প্রয়োগ করেনি ভারত৷ অর্থাৎ পাকিস্তান সেটা চ্যালেঞ্জ করতে পারে না৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
এছাড়া সিন্ধু নদের জলবণ্টন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সালিশি কমিশন৷ বছরে অন্তত একবার কমিশনের বৈঠক বসে৷ ভারত সেই বৈঠক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, উত্তর কাশ্মীরের সোপোর জেলায় ঝিলাম নদীর ধারে উলার হ্রদের মুখে তুলবুল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু করার কথা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ১৫ বছর আগে পাকিস্তানের আপত্তিতে ঐ বাঁধের নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়৷ একটা সময় সন্ত্রাসীরা তুলবুল বাঁধের নির্মাণকাজেও হামলা চালিয়েছিল৷
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে এই ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মারপ্যাঁচই সঠিক পথ৷ সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না৷ প্রচলিত প্রবাদ – হাতে মারবো না, ভাতে মারবো৷ এক্ষেত্রে ভাতে মারা মানে সিন্ধু নদ চুক্তির সংস্থান অনুযায়ী পাকিস্তান যে পরিমাণ জল পায়, তাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের প্রায় এক লাখ দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ফসল চাষ হয়৷ ভারত যদি তার সর্বাধিক পরিমাণ জল নিজের দিকে ধরে রাখে, তাহলে পাকিস্তানের কৃষিকার্য কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বেষ মার খাবে সেদেশের অর্থনীতিও৷
প্রশ্ন হলো, এই অতিরিক্ত জল ধরে রাখার পরিকাঠামো কি ভারতের আছে? না নেই, সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানি ও নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাকিল আহমেদ৷ তিনি মনে করেন, অতিরিক্ত জল ধরে রাখার পরিকাঠামো বর্তমানে ভারতের নেই৷ তাই বিজ্ঞান-ভিত্তিক ভূমিগত বাস্তবতার দিক থেকে সেটা সম্ভব নয়৷ এ জন্য অতিরিক্ত জল অন্য খাতে প্রবাহিত করতে খাল কাটতে হবে বা বাঁধ নির্মাণ করে জলাধার তৈরি করতে হবে, আর সেটা সময়সাপেক্ষ৷ তা না করতে পারলে জম্মু-কাশ্মীরে দেখা দেবে বন্যা৷ সেজন্য ছোট ছোট বাঁধ তৈরি করে প্রয়োজন মতো জল ছাড়তে পারলে রাজ্য উপকৃত হবে৷ দ্বিতীয়ত, ভারত যদি জল আটকে রাখে, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে এক খারাপ নজির হয়ে থাকবে৷ কারণ ভুললে চলবে না যে, জল চিরদিনই মানুষের জীবনরেখা৷ তাই ভবিষ্যতে অন্য দেশ, যেমন পাকিস্তানের মিত্র দেশ চীন যদি সেই কাজ করে, তাহলে ভারত কি দোষ দিতে পারবে? ভারত দিয়ে প্রবাহিত অনেক নদনদীর উত্সমুখ তিব্বতে৷ সিন্ধু নদ বা ব্রহ্মপুত্র নদের উত্সমুখ চীনে৷ উল্লেখ্য, অতীতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তিন-তিনবার যুদ্ধ হয়েছিল, ৬৫,৭১ এবং ৯৯-এ কারগিল৷ তখন জলকে হাতিয়ার বানানো হয়নি৷ কাশ্মীর নিয়ে যে সংঘাত বর্তমানে চলছে দু'দেশের মধ্যে সেখানে জল নিয়ে আরেকটা ফ্রন্ট খোলা যুক্তিসংগত হবে না৷
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারো এই প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে৷ কি চায় কাশ্মীরের জনগণ? আর ভারত সরকার কি সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে? কাশ্মীরের বর্তমান সংকট নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Mustafa
সংঘর্ষের সূত্রপাত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সংঘর্ষে স্থানীয় হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে৷ বুরহান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা সড়কে নেমে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা গুলি চলে তাদের ওপর৷ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪০ এরও বেশি নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
কারফিউয়ে জনজীবন অচল
কাশ্মীরি নেতাদের বনধের ডাকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না প্রতিবাদকারীদের৷ অন্যদিকে, খাবার ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট এবং ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
আরো সেনা মোতায়েন
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বাড়তি ৮শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ
সাম্প্রতিক সহিংসতার নিহত ৪৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ৷ তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে৷ আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে শতাধিক মানুষ
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কারফিউয়ের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রক্তের অভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রায় শতাধিক মানুষের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা৷ দ্রুত চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷
ছবি: Reuters/D.Ismail
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করায় দু’পক্ষের সম্পর্ক আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারত সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে৷ ইসলামাবাদে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Information Bureau
চাপে মোদী সরকার
কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সরকারের একাংশের আশঙ্কা৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়েও৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে৷ পাঠানকোট হামলার পর পরিস্থিতি বদলে যায়৷ আর কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার৷
ছবি: DW/J. Akhtar
কাশ্মীর কার ভূখণ্ড?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে৷ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ওই অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই রাষ্ট্র৷ এই সময়ের মাঝে দুটি দেশই দুইবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
যে কারণে সহিংসতা
মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাশ্মীরের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়৷ এরপর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Tauseef
9 ছবি1 | 9
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের জলবণ্টন চুক্তি হয় ১৯৬০ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর নেহেরু ও আয়ুব খানের আমলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে৷ স্থির হয় সিন্ধু নদের জলপ্রবাহের সদ্ব্যবহারের জন্য ছয়টি নদীর মধ্যে পুব দিকের তিনটি নদী শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতি পড়ে ভারতের ভাগে আর পশ্চিম দিকের তিনটি নদী ঝিলাম, সিন্ধু ও চন্দ্রভাগা পড়ে পাকিস্তানের ভাগে৷ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশেরই নিজেদের ভাগের নদ-নদীর জল ব্যবহারের অবাধ অধিকার থাকে৷
পাশাপাশি পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেবার নীতি প্রত্যাহার করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে এখন৷ আগামী ২৯শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদী এ জন্য এক বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন৷ ১৯৯৬ সালে ডাব্লিউটিও-র অধীনে এই চুক্তি হয়, যাতে ভারত ও পাকিস্তান একে-অপরকে এমএফএন বা সবথেকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেয়৷ ভারত পাকিস্তানে বছরে রপ্তানি করে ২১৭ কোটি ডলারের পণ্য আর পাকিস্তান থেকে আমদানি করে মাত্র ৫০ কোটি ডলার৷ সোমবার সিন্ধুর জল চুক্তি পর্যালোচনা বৈঠকে মোদীর বক্তব্য – রক্ত ও জল একসঙ্গে একই খাতে বইতে পারে না৷ উরি সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন জওয়ানের জীবনদান বিফলে যেতে দেওয়া হবে না৷ তাই পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে৷ কূটনৈতিক অথবা অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে হবে পাকিস্তানকে৷
পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে সিন্ধু নদের পানি কি ভারত ধরে রাখতে পারে? মতামত জানান নীচের ঘরে৷