উগ্র ইসলামপন্থি ওয়াহাবি ভাবাদর্শ রপ্তানির অভিযোগের মুখে সৌদি আরব এবার প্রধানত মুসলিম দেশগুলির এক সামরিক জোট গঠন করেছে৷ পারস্য উপসাগরীয় এলাকা ছাড়াও এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশও তাতে যোগ দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
Obama warns 'IS' leaders: 'You are next'
00:32
একদিকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার মতো এশিয়ার দেশ, অন্যদিকে আফ্রিকার লিবিয়া, মালি, চাড ও সোমালিয়ার মতো সংকটে জর্জরিত দেশও সৌদি নেতৃত্বে সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে৷ উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি তো রয়েছেই৷ মোট ৩৪টি দেশ এই জোটে যোগ দিয়েছে৷
তবে শিয়া-প্রধান ইরান ও ইরাককে তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি, যদিও তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে তারা বড় ভূমিকা পালন করছে৷
উগ্র ইসলামপন্থি ওয়াহাবি ভাবাদর্শ ও দেশের মধ্যেই চরম শাস্তির বিধানের কারণে গোটা বিশ্বে সৌদি আরবের নিজস্ব ভাবমূর্তি মোটেই অনুকূল নয়৷ সে দেশকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বলে মনে করছে অনেক মহল৷ তাই এমন এক দেশের নেতৃত্ব নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে৷
অনেক সৌদি নাগরিক সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন চালিয়ে যাচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ উঠছে৷ তাই সবার আগে সেই প্রবণতা থামানোই জরুরি বলে মনে করেন আদেল এলসায়েদ স্পার৷
যে রাষ্ট্র নাস্তিকতাকে সন্ত্রাসবাদের সমান হিসেবে দেখে, সে দেশের নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন জোট সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷