বৃহস্পতিবার ইস্তানবুলের জার্মান কনস্যুলেট ও স্কুলও বন্ধ রাখা হয় একই কারণে৷ অপরদিকে এদিন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষবৈঠকে তুরস্কের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা৷ বিষয়: উদ্বাস্তু সংকট৷
বিজ্ঞাপন
ইস্তানবুল কনস্যুলেট থেকে প্রকাশিত একটি ই-মেলে জার্মান নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে৷ কনস্যুলেটটি ইস্তানবুলের টাকসিম চত্বরের কাছে; জার্মান স্কুলটি তার প্রায় এক মাইল দূরে৷
অপরদিকে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, আংকারায় জার্মান দূতাবাস নিরাপত্তাজনিত সাবধানতার কারণে বন্ধ থাকছে৷ কী ধরনের সাবধান বার্তা পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে দূতাবাস কিছু জানায়নি৷ দৃশ্যত তা নিয়ে এখনও খোঁজখবর ও তদন্ত চলেছে৷
আংকারার গাড়িবোমা
অপরদিকে গত রবিবার আংকারায় যে গাড়িবোমা আক্রমণে ৩৭ জন প্রাণ হারায়, ‘কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার বাজপাখি' বা টিএকে নামধারী একটি জঙ্গিগোষ্ঠী তার জন্য নিজেদের দায়ী বলে ঘোষণা করেছে৷ একটি অনলাইন পোস্টিংও টিএকে বলেছে যে, তাদের বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করার অভিপ্রায় ছিল না; বরং তারা তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রণ চালাতে চেয়েছিল৷ পুলিশ হস্তক্ষেপ করার পরে নাকি বহু বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন, যদিও টিএকে-র বিবৃতিতে যোগাযোগটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়নি৷ টিএকে বলে থাকে যে, তারা নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান শ্রমিক দল পিকেকে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে পূর্বাপর সংযোগ আছে৷
‘ডের স্পিগেল' পত্রিকার তুরস্ক প্রতিনিধি
জার্মানির প্রখ্যাত সংবাদ-সাপ্তাহিকী ‘ডের স্পিগেল'-এর প্রতিনিধি হাসনাইন কাজিম তিন মাস ধরে তাঁর প্রেস আইডি-র মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার তুরস্ক পরিত্যাগ করেছেন৷ জার্মান কূটনীতিকরা কাজিম ও তাঁর পরিবারকে বিমানবন্দর অবধি নিয়ে যান, যাতে তিনি বিনা বিপত্তিতে যাত্রা করতে পারেন৷
এর্দোয়ানের কাছে সন্ত্রাস রোখা গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি জরুরি
ওদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ঘোষণা করেছেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখন তুরস্কের কাছে সবচেয়ে জরুরি; এর স্থান গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা বা আইনের শাসনেরও ওপরে৷ তুরস্ক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘‘লৌহমুষ্টি'' প্রয়োগ করবে বলে এর্দোয়ান বুধবার প্রাদেশিক জেলা পর্যায়ের নেতাদের একটি সম্মেলনে মন্তব্য করেন৷ এ নিয়ে লন্ডনের ‘দ্য ইকনমিস্ট' পত্রিকায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হয়েছে: সেখানে এর্দোয়ান ডাক্তারকে বলছেন, ‘এই লৌহমুষ্টি আরো বড় করা যায় না?'
যুগপৎ তিনি কুর্দি-সমর্থক পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা এইচডিপি দলেরও সমালোচনা করেন - যাদের সংসদে ৮০টি আসন আছে৷ মিডিয়ায় যারা ‘সহিংস কার্যকলাপের সমর্থন বা প্রশংসা করেন', তাদেরও ‘সন্ত্রাসী অপরাধের' আওতায় আনার কথা ভাবছে এর্দোয়ানের একেপি দল৷
অথচ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইউরোপীয় পর্যায়ে চলতি উদ্বাস্তু সংকট সমাধানের যে পন্থার কথা ভাবছেন, তা তুরস্কের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়৷ যুগপৎ এর্দোয়ানের দমন নীতি ম্যার্কেলের পক্ষে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ ম্যার্কেল সম্প্রতি সংসদে বলেছেন যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হলো এমন একটি বিষয় যা নিয়ে জার্মানির তুরস্কের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন৷
ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে, আহতদের আর্তনাদ শুনে সেদিন অসহায় বোধ করেছেন অনেকে৷ মৃতদেহ ডিঙ্গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কেউ কেউ৷ পুলিশ তখনো এগিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মানুষদের তখন পুলিশের প্রতি হামলার শিকারদের সহায়তার এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/T. Berkin
শান্তির বাণীতে ঢাকা মৃতদেহ
শান্তি সমাবেশে এসে মৃত্যু বরণ করা মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহগুলো ঢাকার মতো কাফনের কাপড় তখন ছিল না৷ তাই ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েই ঢেকে দেয়া হয় তাঁদের দেহ৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
স্বজন এবং সমমনাদের কান্না
বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে শত শত মানুষ৷ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে চিরবিদায় নেয়া স্বজন এবং সমমনাদের জন্য তখন অবশ্য কেঁদে ভাসানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA
তদন্তের তৎপরতা
একটু দেরিতে হলেও শনিবারই ঘটনার তদন্তে সক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে৷ ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা সেদিনই ঘটনাস্থলে ব্যস্ত সময় কাটান৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ৷ বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশের এই গাড়িটিও জনবিক্ষোভের শিকার৷
ছবি: picture-alliance/AA
বিক্ষোভ চলছে
আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ হামলার জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী করেছে তুরস্কের সরকার৷ তবে হামলার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ আংকারা এবং ইস্তানবুলসহ কিছু শহরে বোমা হামলার বিক্ষোভ জানানোর সময় এর্দোয়ান-বিরোধী স্লোগানেও ফেটে পড়েছেন বিক্ষু্ব্ধরা৷
শনিবারের হামলাটি হয়েছে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে৷ নিহত এবং আহতরা মূলত কুর্দি এবং বামপন্থি দলের নেতা-কর্মী৷ তাই সারা বিশ্বের সব কুর্দির মাঝেই দানা বেঁধেছে ক্ষোভ৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুর্দি ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল৷