ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ইউরোপের নেতারা নিরাপত্তা বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন৷ শেঙেন ও ইইউ স্তরে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপে শেঙেন এলাকার মধ্যে অবাধ চলাচলের সুযোগ বৈধ নাগরিকদের ভ্রমণ সহজ করে তুললেও দুষ্কৃতিরা খোলা সীমানার অপব্যবহার করে চলেছে৷ বিশেষ করে মাত্র এক মাসের মধ্যে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ইউরোপে উগ্র ইসলামপন্থিদের মধ্যে নিবিড় সহযোগিতার ফলে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে৷ নিস ও ভিয়েনা শহরের হামলাকারীরা শেঙেন-ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে অবাধ চলাচলের সুযোগের অপব্যবহার করেছিল বলে জানা গেছে৷
মঙ্গলবার ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের শীর্ষ নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন৷ ইইউ কমিশনের কর্তাব্যক্তিরাও সেই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একদিকে শেঙেন ব্যবস্থার সংস্কার ও অন্যদিকে শেঙেন এলাকার বহির্সীমানা আরও মজবুত করে তোলার ডাক দেন৷ মাক্রোঁ বলেন, গোটা ইউরোপের জন্য সন্ত্রাসবাদের হুমকি গুরুতর হয়ে উঠেছে৷ ফলে এর মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে৷ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে শরণার্থীদের লাগামহীন ঢল নামার ফলে এবং বর্তমান করোনো সংকটের ফলে শেঙেন এলাকার মধ্যে অনেক সীমানায় নিয়ন্ত্রণ চালু করতে হয়েছে৷
শেঙেন ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে শীর্ষ নেতারা অবাধ চলাচলের বর্তমান সুযোগ সঙ্কুচিত করতে চাইছেন না৷ তার বদলে ২৬টি দেশের শেঙেন এলাকার বহির্সীমানায় আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করতে চাইছেন তাঁরা৷ ম্যার্কেল বলেন, কারা এই এলাকায় প্রবেশ করছে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তা জানা অত্যন্ত জরুরি৷
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎস বিদেশি জঙ্গিদের দমন করতে শেঙেন এলাকার মধ্যে আরও সমন্বয়ের পরিকল্পনার ডাক দেন৷ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় বিদেশ থেকে ‘অবাঞ্ছিত' অর্থায়ন বন্ধ করার উপর জোর দিয়েছেন৷ এছাড়া জঙ্গিবাদ দমন করতে অনলাইন মঞ্চগুলির উপর আরও কড়া নিয়ম চালু করারও প্রস্তাব আনা হয়েছে৷ সেইসঙ্গে ইমামদের প্রশিক্ষণের জন্য এক ইউরোপীয় ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগের কথাও শোনা যাচ্ছে৷ আবেদন নাকচ হলে শরণার্থী এবং অপরাধী ও সন্দেহভাজন উগ্রবাদীদেরও প্রত্যর্পণ তরান্বিত করার কার্যকর প্রক্রিয়ার দাবি উঠছে৷
শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাম্প্রতিক হামলাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে সম্মিলিত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করতে মিলিত হচ্ছেন৷ পাঁচ বছর আগে ঠিক ওই দিনে প্যারিসে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের হামলায় ১৩০ জনেরও বেশ মানুষ নিহত হয়েছিলেন৷ ইইউ স্তরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যের আদানপ্রদান আরও তরান্বিত করতে এবং ইইউ বহির্সীমানায় সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ফ্রনটেক্স-কে আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্যোগ চলছে৷ তবে সীমান্তে সুরক্ষা, অভিবাসন, শরণার্থীদের বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে ইইউ দেশগুলির মধ্যে ঐকমত্যের অভাবের ফলে এতকাল অনেক কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় নি৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)
মুসলিম বিশ্বে ফ্রান্সের গির্জায় হত্যার প্রতিবাদ
মুসলিম বিশ্বেও চলছে নিস শহরে ছুরি মেরে তিনজনকে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ৷ ছবিঘরে দেখুন কী বলছে মুসলিম বিশ্ব...
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
কী ঘটেছিল?
ফ্রান্সের নিস শহরের এক গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আহত হয়েছেন কয়েকজন৷ তিউনিশিয়া থেকে আসা হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Gaillard Eric/abaca/picture alliance
ফ্রান্সের মুসলিম সংগঠনের নিন্দা
ফ্রান্সের মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর দ্য মুসলিম ফেইথ-এর মুখপাত্র বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আমরা ফ্রান্সের সকল মুসলমানকে (ঈদে মিলাদুন্নবী) উদযাপন স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ এই হামলার নিন্দাও জানায় সংগঠনটি৷
ছবি: NorbertScanella/PanoramiC/imago images
৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসি-র বক্তব্য
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বলেছে এই হামলার ঘটনায় তাদের ‘‘কড়া অবস্থান, যা সব ধরনের চরমপন্থা ও স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷’’ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘‘কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবস্থান সব ধরনের ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে৷’’
ছবি: Laily Rachev/Biro Pers Setpres
তুরস্ক যা বলেছে
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়াভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘কাউকে মেরে ফেলা বা সহিংসতার জন্য কোনো কারণই যথেষ্ট নয়৷ একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানে যারা এই কাজ করেছে, তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ধর্মীয়, মানবিক বা নৈতিক গুণ নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এক টুইটে বলেন, এই ধরনের হামলা আসলে ধারাবাহিক উসকানি ও সহিংসতার অংশ, যা অবলিম্বে বন্ধ হওয়া উচিত৷ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই চলমান ঘৃণা, উসকানি ও সহিংসতার ধারাবাহিকতাকে যুক্তি দিয়ে থামাতে হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, চরমপন্থা থেকে কেবল চরমপন্থাই জন্ম নেয়, এমন উসকানির মাধ্যমে শান্তি সম্ভব নয়৷’’
মিশরের রাজধানী কায়রোর আল-আজহার গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আল-তায়েব বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না৷ এর সাথে উসলাম বা মহানবির কোনো সম্পর্ক নেই৷’’
হামলাকারীর দেশ তিউনিশিয়াও কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ তিউনিশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই সন্ত্রাসবাদী কাজের তীব্র নিন্দা করছে এবং পুরোপুরি ফ্রান্সের পাশে আছে৷
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল
যুক্তরাজ্যের মুসলিম কাউন্সিল টুইট করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে একটি ধর্মীয় স্থানে, কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/empics/D. Dawson
এবং সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও টুইটারে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেশটি বলেছে, সৌদি আরব ‘‘এমন সব আচরণকেই পুরোপুরি নাকচ করে, যা সব ধর্মীয় ও মানবিক বিশ্বাসের বিরোধী৷’’