ভারতে ধার্মিক নেতাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে হত্যা, সব ধরনের অপরাধের ঘটনা৷ কিন্তু এর কারণ কী?
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে এক স্বঘোষিত ‘সাধু' এক ২৩ বছর বয়সি আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণ করার প্রচেষ্টা করার পর, নির্যাতিত তরুণীটি ‘সাধুটির' লিঙ্গকর্তন করে৷ তথাকথিত সাধুটি গত আট বছর ধরে তরুণীটির যৌন অপব্যবহার করছিল৷ পলায়নের আর কোনো পথ না দেখে মেয়েটি নাকি এই চরম পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হয়৷
ঘটনাটি ঘটে তিরুবনন্তপুরম শহরে৷ গঙ্গেশানন্দ তীর্থপদ নামের সাধুটি নাকি প্রায়ই মেয়েটির বাড়িতে আসতেন তার শয্যাশায়ী পিতাকে নিরাময় করার ছলে৷ তীর্থপদর আরেক নাম হলো শ্রীহরি৷ কেরালা রাজ্যে তার শত শত ভক্ত পরিবার ছিল৷ আজ তিনি ধর্ষণের অভিযোগের আসামী৷
যৌন কেলেংকারি বাড়ছে
হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে সাধু-মহাত্মাদের আধিপত্য চিরকালের৷ তাদের উপর মানুষজনের অসীম বিশ্বাস৷ সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তথাকথিত ‘দৈবী মানুষরা' কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন৷
বছর তিনেক আগে উত্তরের হরিয়ানা রাজ্যে রামপাল সিং যতীন নামের এক বিতর্কিত গুরুকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে তার সমর্থকদের সঙ্গে বেশ কয়েক ঘণ্টা যুঝতে হয়৷ পরের তদন্তে গুরুর যৌনজীবন সম্পর্কে যে সব খুঁটিনাটি বেরিয়েছিল, তা রোমহর্ষক৷ গুরুজী নাকি ‘‘সাধিকা'' নাম দিয়ে ‘‘হোস্টেস'' পুষতেন৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
২০০৩ সালে আসারাম বাপু নামের এক স্বঘোষিত ‘গডম্যান'-কে গ্রেপ্তার করা হয়, কেননা তার বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল৷ ‘বাপু' নাকি পাপ খণ্ডন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিশোরীটিকে কবলে এনেছিলেন৷
২০১৩ সালে মহেন্দ্র গিরি নামের এক ‘সাধু'-কে গ্রেপ্তার করা হয়, কেননা তিনি নাকি এক ২৪ বছর বয়সের মহিলাকে চার মাস ধরে আটকে রেখে বারংবার ধর্ষণ করেছিলেন৷ মহিলাটির স্বামী ও শ্বাশুড়ি নাকি গিরির সহযোগী ছিলেন৷ তিনজনেই আজ জেলে৷
২০১০ সালে বিতর্কিত হিন্দু গডম্যান স্বামী নিত্যানন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়, কেননা একটি ফাঁস করা ভিডিও-য় তাঁকে দক্ষিণ ভারতের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল৷
বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস যে, গুরুদের উপর তাদের ভক্তবৃন্দের অপরিসীম বিশ্বাস ও আস্থার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে৷ বিজ্ঞানে যাদের আস্থা, তারা বলেন, ভারতীয়রা কোনো দৈব আশ্চর্যের মাধ্যমে তাদের দুঃখ-দুর্দশার সমাধান খোঁজে৷ সেটাই হলো গুরুদের ক্ষমতার উৎস৷
মুরলী কৃষ্ণান/এসি
ধর্ষকদের কী শাস্তি পাওয়া উচিৎ বলে আপনার মনে হয়? জানান মন্তব্যের ঘরে৷
হিন্দুরাই সবচেয়ে অশিক্ষিত: সমীক্ষা
সমস্ত জ্ঞানের উৎস ‘হিন্দুস্তান’ – মৌলবাদী হিন্দুরা যতই এ কথা বলুক, মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘পিউ’ হিন্দুদেরই সবচেয়ে অশিক্ষিত বলে আখ্যা দিয়েছে৷ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা গড়ে কত বছর স্কুলে যায়, তার ভিত্তিতেই সমীক্ষাটি চালায় পিউ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Lai Seng Sin
ইহুদি: ১৩ দশমিক ৪ বছর
পুরুষ: ১৩ দশমিক ৪ বছর, নারী: ১৩ দশমিক ৪ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ০ বছর)
ছবি: Getty Images/AFP/J. Guez
খ্রিষ্টান: ৯ দশমিক ৩ বছর
পুরুষ: ৯ দশমিক ৫ বছর, নারী: ৯ দশমিক ১ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ০ দশমিক ৪ বছর)
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. El-Mofty
নাস্তিক: ৮ দশমিক ৮ বছর
পুরুষ: ৯ দশমিক ২ বছর, নারী: ৮ দশমিক ৩ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ০ দশমিক ৮ বছর)
ছবি: picture-alliance/ David Wimsett/UPPA/Photoshot
বৌদ্ধ: ৭ দশমিক ৯ বছর
পুরুষ: ৮ দশমিক ৫ বছর, নারী: ৭ দশমিক ৪ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ১ দশমিক ১ বছর)
ছবি: DW/V. hoelzl
মুসলমান: ৫ দশমিক ৬ বছর
পুরুষ: ৬ দশমিক ৪ বছর, নারী: ৪ দশমিক ৯ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ১ দশমিক ৫ বছর)
ছবি: Getty Images/S. Gallup
হিন্দু: ৫ দশমিক ৬ বছর
পুরুষ: ৬ দশমিক ৯ বছর, নারী: ৪ দশমিক ২ বছর (নারী-পুরুষে ব্যবধান: ২ দশমিক ৭ বছর)