সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মোদী
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সন্দেশখালি নিয়ে সমানে সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি থেকেও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা সন্দেশখালি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন। দিন কয়েক আগেই দিল্লি গিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার পর জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ৬ মার্চ কলকাতার কাছে বারাসতে জনসভা করবেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই জনসভায় সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের নিয়ে আসা হবে। তাদের জন্য আলাদা মঞ্চ থাকবে। তারা মুখ ঢেকে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ২৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সফর করার কথা ছিল। কিন্তু তার সেই সফর বতিল করা হয়েছে। বিজেপি এখন পুরোপুরি সন্দেশখালি নিয়ে ও মোদীর সফর সফল করার কাজেই ব্যস্ত থাকতে চায়।
ভারতে লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালিকে আঁকড়ে ধরে তারা জেতা আসন ধরে রেখে তা আরো বাড়াবার চেষ্টা করছে।
সরেজমিনে ডিজি
শাহজাহান ও তার দুই শাগরেদ শিবু ও উত্তমের বিরুদ্ধে জমি দখলের পাশাপাশি নারী নিগ্রহের অভিযোগে উঠেছে। পুলিশ ও প্রশাসন গ্রামবাসীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব অভিযোগ শুনছে। এই তিনজনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে। সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই ডিজিপি রাজীব কুমার সন্দেশখালি ঘুরে এলেন।
গতকাল, বুধবার সন্দেশখালিতে যান ডিজি। থানায় পুলিশ কর্তা ও আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। পুলিশ কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন রাজীব।
বুধবার সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ লঞ্চে চেপে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন রাজীব। তার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের অতিরিক্ত ডিজি সুপ্রতিম সরকার এবং অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। দু'ঘণ্টা পর লঞ্চেই সন্দেশখালি ফিরে আসেন ডিজি। সূত্রের খবর, এই সময়ে তিনি সন্দেশখালির বিভিন্ন দ্বীপে গিয়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ শোনেন।
আজ সকালে ধামাখালি ও মিনাখাঁয় যান ডিজি। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সুপ্রতিম সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজীব কুমার। কলকাতা রওনা হওয়ার আগে তিনি বলেন, ''যারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছিলেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।এখানকার মানুষের জমি বেদখল-সহ যা যা অভিযোগ আছে, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যান্য অভিযোগও শোনা হচ্ছে।''
কিন্তু এরপরেও সন্দেশখালি-কাণ্ডের মূল নায়ক শেখ শাহজাহানকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
ফের উত্তেজনা
সন্দেশখালির বিভিন্ন এলাকায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। চারপাশে রয়েছে পুলিশি নজরদারি। তারই মধ্যে আজ নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় বেরুমজুর গ্রামে। এখানে একটি ভেড়ি সংলগ্ন অস্থায়ী অফিসে গ্রামবাসী আগুন ধরিয়ে দেন। অভিযোগ, শেখ শাহজাহানের ভাই জমি দখল করে এখানে ভেড়ি তৈরি করেছেন।
আজ সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো এলাকায় এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেখ শাহজাহান ফ্যান ক্লাবের দখলে থাকা একটি মাঠ আজ মুক্ত করে দেয় পুলিশ-প্রশাসন। সেখানকার অনুষ্ঠানে বিধায়কের পাশাপাশি ছিলেন স্থানীয় বিডিও ও বসিরহাটের পুলিশ সুপার। গ্রামবাসীদের সঙ্গে সুপার কথা বলেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, এই খেলার মাঠ শাহজাহান বাহিনী দখল করে নিয়েছিল। গেটে তালা লাগিয়ে গ্রামবাসীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ দিন মাঠ খুলে দেয়ার পর গ্রামবাসী বিক্ষোভ দেখান সুকুমারকে ঘিরে। প্রশ্ন তোলেন, এতদিন অন্যায়-অবিচারের অভিযোগ তোলা হলেও কোথায় ছিলেন বিধায়ক?
এমনই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে আজ এলাকায় এসেছে জাতীয় এসটি কমিশনের একটি দল। তাদের কাছে শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামের নারীরা। তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে 'সাজানো' তকমা দিচ্ছে। যদিও পুলিশ ইতিমধ্যে উত্তম ও শিবুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা রুজু করেছে।
সাংবাদিকের জামিন
সন্দেশখালি থেকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় সাংবাদিক সন্তু পানকে। এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তব্যরত অবস্থায় তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। এই সাংবাদিককে আজ জামিন দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বিচারপতি কৌশিক চন্দ এই মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তিনি পুলিশের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেন। নারীর সম্ভ্রমহানির যে অভিযোগ উঠেছে, তার পক্ষে জুতসই প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিশ। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ''কেমন তদন্ত হয়েছে বুঝতে পারছি। কেন এফআইআর খারিজ করা হয়নি?''
সন্দেশখালির ঘটনায় গণমাধ্যমে যে খবর পরিবেশিত হচ্ছে, তার কিছু অংশ নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজ্য সরকার। একাধিক নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সাংবাদিক সুমন দে-কে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এবিপি আনন্দ।
এমন নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে সুবিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে সন্দেশখালি। বিরোধীরা তো বটেই, চলতি পরিস্থিতিতে একাধিক জাতীয় কমিশন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানিয়েছে। সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ''সন্দেশখালির মানুষ সমস্যার প্রতিকার চায়। বিজেপির বিভিন্ন কমিশন, যা আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বাধীন, তারা সেই কাজে কোনো ভূমিকা নিতে পারবে কি না, এ ব্যাপারে সকলেই সন্দিহান। তাদের ৩৫৬ ধারা জারির দাবি শুধুই নজর কাড়ার চেষ্টা।''