এর আগে সন্দেশখালি গিয়ে শাহজাহান শেখের বাড়ির সামনে মার খেতে হয়েছিল ইডিকে। বৃহস্পতিবার ভোরে আবার সেখানে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। এদিন সকালে ধামাখালি এলাকার মাছবাজার, ফেরিঘাট অঞ্চল ঘিরে রেখে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতিতে বিষয়ক একটি মামলা রুজু হয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। ইডি সেই মামলার তদন্ত করছে। সেই মামলার সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে সন্দেশখালি অঞ্চলে পৌঁছে যায় ইডি। সঙ্গে বিরাট কেন্দ্রীয় বাহিনীও আছে। তারাই নদীপার ঘিরে রেখেছে। ধামাখালি বাজার ছাড়াও বেশ কিছু অঞ্চলে ইডি তল্লাশি চালাচ্ছে।
সন্দেশখালি : তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য করলেন বিক্ষুব্ধ নারীরা
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অজিত মাইতিকে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করেন নারীরা। নারীদের হাত থেকে বাঁচতে এক বাড়িতে ঢুকে ভিতর থেকে তালা মেরে দেন অজিত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের তাড়া
অজিত মাইতি হলেন সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের কাছের মানুষ। তার বিরুদ্ধেও জমি জবরদখল করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। রবিবার তাকে দেখামাত্রই তাড়া করেন সন্দেশখালির নারীরা। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ঝাঁটা। তাদের দাবি ছিল, অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেই বাড়ি
প্রাণের ভয়ে অজিত এই বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। চার ঘণ্টা এ বাড়িতেই ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে সেখান থেকে আটক করে। সোমবার সকালে জানানো হয়, পুলিশ অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করেছে। এতদিন অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। নারীরা তাড়া করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অজিত মাইতির বাড়ি
এই বাড়িটি অজিত মাইতির। সকাল থেকে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ি ছিল পুরো শুনশান। পরে তাকে দেখতে পান নারীরা। দেখার সঙ্গে সঙ্গে অজিত মাইতি পালিয়ে গিয়ে একটা বাড়িতে লুকিয়ে পড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের বিক্ষোভ চলছে
সন্দেশখালির বেড়মজুরের নারীরা এবার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হলধপ আড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অজিত মাইতিকে সরিয়ে হলধরকেই অঞ্চল সভাপতি করে তৃণমূল। কিন্তু রাতে তার খড়ের গাদায় আগুন ধরানো হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাবেক পঞ্চায়েত সদস্য তপন সর্দার ও বর্তমান সদস্য শঙ্কর হালদারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনেক অভিযোগ
সন্দেশখালিতে একাধিক অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছে পুলিশ। সেখানে গিয়ে মানুষ তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানেই একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে। অধিকাংশই হলো জমি জবরদখল, অত্যাচার ও নারীনিগ্রহের। পুলিশ সব অভিযোগ লিখে নিচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং জবরদখল জমি ফেরত দেয়া হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
একজন অভিযোগকারী
এই অভিযোগকারী বেড়মজুরের। তার জমি জবরদখল করা হয়েছিল। এর জমি নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। টাকা চাইতে গেলেই মারধর করা হতো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হামলার শিকার এক গ্রামবাসী
এই মানুষটি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, শেখ শাহজাহানের নির্দেশে সিরাজ ও অজিত মাইতি মিলে তার বাড়িতে হামলা করে। ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার ছেলেরা এখনো ঘরছাড়া। তিনি আয়লা, আমফানের ত্রাণের টাকাও পাননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেখ শাহজাহান কোথায়?
সন্দেশখালি-কাণ্ডে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তার তিন সহযোগী উত্তম সর্দার, শিবু হাজরা ও অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু শেখ শাহজাহান এখনো ফেরার। তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ এখনো তার খোঁজ পায়নি। স্থানীয় মানুষের জানিয়েছেন, কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে বলা হতো, শাহজাহানের কাছে যেতে, শাহজাহানই নাকি বিচার করে দেবেন। বেড়মজুরে এই বিচার করত শাহজাহানের ভাই সিরাজ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেখানে এখন শুধু পুলিশ
বেড়মজুরে কাঠপোল এলাকায় চারপাশে শুধু পুলিশ। একসময় যেখানে পুলিশের দেখা পাওয়া যেত না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন সেখানে কিছুটা দূরদূর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সারাদিন ধরে টহল
পুলিশ সারাদিন ধরে এলাকায় টহল দিচ্ছে। তারা এখন অতি-সক্রিয়। কিন্তু তাই বলে বিক্ষোভ থামছে না। সমানে চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশি নজরদারি
এভাবে পুলিশ নজর রাখছে চারিদিকে। এলাকাবাসীর বক্তব্য- একসময় তারা চাইতেন পুলিশ আসুক এবং তাদের অভিযোগের সুরাহা করুক। কিন্তু তখন তাদের এখানে দেখা যেতো না। শেখ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
13 ছবি1 | 13
ইডি-র সূত্র জানিয়েছে, ধামাখালির মাছ বাজারের অংশীদার নজরুল মোল্লা। মাছবাজারের পাশাপাশি নজরুলের বাড়িতেও ইডি অভিযান চালিয়েছে। বাড়ি ঘিরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই নজরুলের সঙ্গে শাহজাহানের আর্থিক লেনদেন ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। শাহজাহানকে জেরা করেই নজরুলের কাছে ইডি পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রেশন দুর্নীতি মামলাতেও জড়িত শাহজাহান। সেই মামলারও তদন্ত চলছে। এদিনের অভিযানে রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে ইডি সূত্র জানিয়েছে।
ইডি-র এক কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, মাছ এবং চিংড়ির ব্যবসায় টাকা লাগিয়ে শাহজাহান কালো টাকা সাদা করতো। সে জন্যই এলাকার মাছ এবং চিংড়ির বাজারগুলিতে বার বার অভিযান চালানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে উঠে এসেছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
ইডি কর্মকর্তাদের উপর হামলা চলার পর দীর্ঘদিন ফেরার ছিলেন শেখ শাহজাহান। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাকে মিনাখা থেকে গ্রেপ্তার করে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টেরনির্দেশে সিবিআই তাকে হেফাজতে নেয়। তারপর টানা জেরা করা হচ্ছে শাহজাহানকে। তার বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি একাধিক মামলা করেছে। ২৫০টি প্রশ্নের একটি প্রশ্নবালি তৈরি করা হয়েছে তার জন্য।
ইডি-র দাবি, জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে এসেছে।