বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে গত এক বছরে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন শতকরা ৬৫ ভাগ বেড়েছে। আর বিশ্লেষকেরা বলছেন এই সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধি প্রমাণ করে দেশ থেকে অর্থপাচার বেড়েছে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এই সন্দেহজনক লেনদেন এবং অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম কোনো উদ্যোগ নেই। তারা অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে সরকারের এমন সংস্থাগুলোর কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে বলে জানান বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, অর্থপাচার হয়ে যাওয়ার আগেই অর্থ যাতে পাচার না হয় তার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত সপ্তাহে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশের আর্থিক খাতে গত এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪.৫৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল আট হাজার ৫৭১টি। এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে পাঁচ হাজার ৫৩৫টি।
বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের কাছে পাঠানো ঋণসংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০, যা এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৪১টি। এ ধরনের লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দেড় গুণ হয়েছে। আর গত অর্থবছরে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউতে সব মিলিয়ে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল আট হাজার ৫৭১টি।
'ঋণের যোগ্য না হলেও তা দেয়া হয়েছে'
কোনো ছোট গ্রাহকের হিসাবে বড় লেনদেন, কোনো গ্রাহকের একসঙ্গে বড় অঙ্কের নগদ টাকা উত্তোলন, ছোট ব্যবসায়ীর নামে বড় ঋণ, অপরিচিত হিসাবে টাকা স্থানান্তর এমন হিসাবে লেনদেনকে সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন," এই সন্দেহজনক লেনদেনের একটি অংশ পাচারও হয়েছে। মূল কথা হলে লোন পাওয়ার যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লোন দেয়া হয়েছে। আবার যা পায় তার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। লোন নিয়ে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নানা রকম বিষয় আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হলো এগুলো দেখা। তারা শুধু প্রতিবেদন প্রকাশ করলেই হবেনা। মনিটরিং বাড়িয়ে এটা আগেই বন্ধ করতে হবে।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন," ২০০৯ সালে আমি যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসি তখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন অফিসিয়ালি এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কোথায় গেছে?”
ব্র্যাক বাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন," যে টাকা দেশের বাইরে পাচার হয় তা এইখেলাপি ঋণের টাকা। ঘুস-দুর্নীতির টাকা।সন্দেহজনক যে লেনদেনের কথা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ওই টাকা কেথায় গেছে? ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের সঙ্গে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের একটা বড় সম্পর্ক আছে। আমরা যে বলেছিলাম যে অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদন তার ইঙ্গিত দেয়।”
তার কথা," এই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কোনো শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়না তাই অর্থ পাচার বেড়ে যচ্ছে। ভারতে অনেক বড় বড় পাচারকারীকে ধরে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাদের এখানে হয়নি। যারা পাচার করে তাদের সবাই চেনে। তাদেরও লজ্জা নাই। লেজকাটা শিয়ালের আবার লজ্জা কী?”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," দেখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রতিবছরই এই সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে। প্রতি বছর যদি বাড়তে থাকে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে? তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। ব্যবস্থা নিলে তো আর বাড়ত না।”
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা ১৩৩টি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে। এর মধ্যে সিআইডিতে ৮৫টি, দুদকে ৩৩টি, এনবিআরে ১০টি ও অন্যান্য সংস্থায় পাঁচটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
বাংলাদেশ থেকে বছরে কত অর্থ পাচার হয় তার কোনো হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নাই। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাবে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তার পাঁচ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে সরকার। আর গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন," সন্দেহজনক লেনদেনের এই অর্থ পাচার হতে পারে আবার দেশের ভেতরেও থাকতে পারে। তবে অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে । তাতে এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়েছে ধারণা করা যায়।”
'অর্থপাচার বেড়ে গিয়েছে'
তার মতে ," মনিটরিং বাড়িয়ে পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি না দিলে এই পরিস্থিতির অবসান হবেনা। কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়েছে আমি এখনো দেখিনি। তবে তিনি মনে করেন," বাংলাদেশ ব্যাংক যে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার একটা গুরুত্ব আছে। আমরা জানতে পারি। পরিস্থিতি বুঝতে পারি।”
এ নিয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন," পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।”
দেশ থেকে আর কারা অর্থ পাচার করেছেন ও পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনতে কী করা হচ্ছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, "বিদেশের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে সব সময় তথ্য পাওয়া যায় না। এ জন্য ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। দেশ থেকে অর্থপাচারের ৭০-৮০ শতাংশ হয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যেম।কোনো অর্থ পাচার হয়ে গেলে ফেরত আনা কঠিন। কারণ, দুই দেশে দুই রকম আইন প্রচলিত আছে। চুক্তি হলে টাকা ফেরত আনা সহজ হতে পারে।”
বাণিজ্য ও হুন্ডির আড়ালে টাকা পাচারের যত কৌশল
বৈধভাবে স্থানান্তরের সহজ উপায় না থাকলেও বিদেশে ঠিকই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছেন অনেক বাংলাদেশি৷ বিপুল টাকা রাখছেন ব্যাংকেও৷ এই অর্থপাচারের কৌশলগুলো কী জেনে নিন ছবিঘরে...
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো
ধরা যাক শিল্প কারখানার জন্য এক লাখ ডলারের যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খুললেন দেশের কোনো আমদানিকারক৷ কিন্তু এই পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৫০ হাজার ডলার৷ মূল্য বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি এক লাখ ডলার পাঠিয়ে দিলেন বিক্রেতাকে৷ সেই ব্যক্তি তার দামটি রেখে বাকি টাকা আমদানিকারকের বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ এতে দেশ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাচার হয়ে গেল৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘ওভার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images
রপ্তানির মূল্য কম দেখানো
ধরা যাক দেশের কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার ডলারের পণ্য বা সেবা রপ্তানির ঘোষণা দিলেন, যদিও তার প্রকৃত মূল্য এক লাখ ডলার৷ পণ্য পৌঁছানোর পর ক্রেতা দেশে ৫০ হাজার ডলার রপ্তানিকারককে পাঠালেন, আর অঘোষিত ৫০ হাজার ডলার তার বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে এভাবে রপ্তানিকারক দেশে অর্জিত ৫০ হাজার ডলার পাচার করলেন৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Yu Fangping/Costfoto/picture alliance
পণ্যের পরিমাণে হেরফের
শুধু টাকার গড়মিল না, আমদানি বা রপ্তানিকৃত পণ্যের হিসাবের গড়মিলের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়৷ যেমন, কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার পিস পোশাক রপ্তানির ঘোষণা দিয়ে এক লাখ পিস রপ্তানি করতে পারেন৷ এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০ হাজার পিসের টাকা তিনি বিদেশে পাচার করলেন৷ উল্টোভাবে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ অতিরিক্ত দেখিয়ে বেশি দাম পরিশোধের মাধ্যমে টাকা পাচার হতে পারে৷
ছবি: Saudi Press Agency/REUTERS
ভুয়া কাগজপত্র তৈরি
বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচারের আরেকটি উপায় হলো ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা৷ কোনো পণ্য আমদানি না করেই ভুয়া ঋণপত্র এবং শুল্ক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুয়া ছাড়পত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়৷ অনেক সময় একই পণ্যের আমদানির বিপরীতে একাধিক ঋণপত্র খুলে সেই পণ্যের নামে একাধিকবার টাকা পাঠানো হয়৷ সহজে যাতে ধরা না পড়েন তার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন টাকা পাচারকারীরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টাকা পাঠানোর ভিন্ন চ্যানেল বা হুন্ডি
প্রবাসীরা জটিলতা এড়াতে স্বীকৃত পদ্ধতির বদলে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে টাকা পাঠান, যা হুন্ডি নামে পরিচিত৷ এই পদ্ধতিতে তারা বিদেশে কোনো ব্যক্তির কাছে বা কোনো মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করেন৷ হুন্ডি পরিচালনাকারী নেটওয়ার্ক সমপরিমাণ টাকা প্রবাসীর পরিবারকে পরিশোধ করে দেয়৷ এতে পরিবার টাকা বুঝে পেলেও প্রবাসীর অর্জিত মূল্যবান অর্থ দেশে পৌঁছে না৷ টাকা পাচার করতে চান- এমন কারো বিদেশি অ্যাকাউন্টে হয়ত তা চলে যায়৷
ছবি: Imago/Steinach
কর স্বর্গে ছায়া কোম্পানি
পাচার করা অর্থ বিদেশে রাখা ও কর ফাঁকি দেয়ার আরেকটি প্রচলিত উপায় হলো ‘কর স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে বেনামে কোম্পানি খোলা৷ এই কোম্পানিগুলোর সাধারণত কাগজ-কলমেই অস্তিত্ব থাকে৷ কয়েক স্তরে এমনভাবে এর মালিকানা আড়াল করা হয় যে প্রকৃত ব্যক্তির নাম জানা কঠিন হয়ে পড়ে৷ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ জমা রাখা, নিজ দেশের বড় অংকের কর ফাঁকি দেয়া ও পাচারকৃত টাকা আড়াল করতে এই ধরনের কোম্পানি ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷
ছবি: Imago/M. Bäuml
বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব
বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মেলে৷ উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা এই সুযোগ লুফে নেন৷ ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের মাল্টা, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, লুক্সেমবুর্গে বিদেশিদের জন্য এমন স্কিম আছে৷ এই ‘গোল্ডেন ভিসা স্কিম’-এর মাধ্যমে ইইউ দেশগুলো গত দশকে আড়াই হাজার কোটি ডলার আয় করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সাইপ্রাস ও স্পেন৷
ছবি: DW/A. de Loore
কর স্বর্গে বাংলাদেশিরা
পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা হংকংয়ের মতো কর স্বর্গে বিভিন্ন সময়ে কোম্পানি খুলেছেন বাংলাদেশিরাও৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে-র ফাঁস হওয়া চারটি নথিতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ১০২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে দুদক ২০২১ সালে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে উঠে আসা ৪৩টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০২১-২২ অর্থবছরে শতকরা ২০ থেকে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি মূল্যের ৮,৫৭১টি অর্থপাচারের ঘটনা শনাক্ত করে৷ এই সংখ্যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬২.৩৩ শতাংশ বেশি৷ ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩৩টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ৮২১ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর৷ ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বছরে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের হিসাবে, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করে কর ফাঁকির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় চার হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা হারাচ্ছে৷ এই অর্থ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেটের ৩১ শতাংশ ও শিক্ষার ছয় শতাংশের বেশি৷ মাথাপিছু হিসাবে দুই ডলার বা ২০০ টাকার উপরে৷ এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ৩৭ কোটি ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ফাঁকির পরিমাণ দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
গোল্ডেন ভিসায় বাংলাদেশিরা
বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেয়ার পদ্ধতি পরিচিত গোল্ডেন ভিসা স্কিম নামে৷ গত কয়েক বছরে ক্যানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের এই সুযোগ নেয়ার খবর উঠে এসেছে৷ যেমন মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে ন্যূনতম এক লাখ ২৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হয়৷ দেশ থেকে বৈধভাবে এত টাকা স্থানান্তরের সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিকেরা এই স্কিম ব্যবহারে উপরের দিকে আছেন৷
ছবি: bdnews24.com
পরিসংখ্যানে অর্থ পাচার
কোন দেশ থেকে কত টাকা পাচার হয় তা বোঝার একটি কৌশল আমদানি-রপ্তানি করা দেশ ও গন্তব্যের পরিসংখ্যান তুলনা করা৷ তার ভিত্তিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি জানাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে বছরে সম্ভাব্য ৮২৭ কোটি ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে৷ অন্যদিকে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমান ছিল ৮৭ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি৷