1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্দেহজনক লেনদেনের অর্থ কোথায় যায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে গত এক বছরে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন শতকরা ৬৫ ভাগ বেড়েছে। আর বিশ্লেষকেরা বলছেন এই সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধি প্রমাণ করে দেশ থেকে অর্থপাচার বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
সন্দেহজনক লেনদেন এবং অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম কোনো উদ্যোগ নেই।ছবি: Mortuza Rashed/DW

কিন্তু এই সন্দেহজনক লেনদেন এবং অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম কোনো উদ্যোগ নেই। তারা অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে সরকারের এমন সংস্থাগুলোর কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে বলে জানান বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, অর্থপাচার হয়ে যাওয়ার আগেই অর্থ যাতে পাচার না হয় তার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত সপ্তাহে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে  জানিয়েছে, দেশের আর্থিক খাতে গত এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪.৫৮ শতাংশ।  ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল আট হাজার ৫৭১টি। এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে পাঁচ হাজার ৫৩৫টি।

বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের কাছে পাঠানো ঋণসংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০, যা এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৪১টি। এ ধরনের লেনদেন প্রতিবেদনের সংখ্যা বেড়ে দেড় গুণ হয়েছে। আর গত অর্থবছরে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউতে সব মিলিয়ে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল ১৪ হাজার ১০৬টি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল আট হাজার ৫৭১টি।

'ঋণের যোগ্য না হলেও তা দেয়া হয়েছে'

This browser does not support the audio element.

কোনো ছোট গ্রাহকের হিসাবে বড় লেনদেন, কোনো গ্রাহকের একসঙ্গে বড় অঙ্কের নগদ টাকা উত্তোলন, ছোট ব্যবসায়ীর নামে বড় ঋণ, অপরিচিত হিসাবে টাকা স্থানান্তর এমন হিসাবে লেনদেনকে সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন," এই সন্দেহজনক লেনদেনের একটি অংশ পাচারও হয়েছে। মূল কথা হলে লোন পাওয়ার যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লোন দেয়া হয়েছে। আবার যা পায় তার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। লোন নিয়ে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নানা রকম বিষয় আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হলো এগুলো দেখা। তারা শুধু প্রতিবেদন প্রকাশ করলেই হবেনা। মনিটরিং বাড়িয়ে এটা আগেই বন্ধ করতে হবে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন," ২০০৯ সালে আমি যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসি তখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন অফিসিয়ালি এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কোথায় গেছে?”

ব্র্যাক বাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন," যে টাকা দেশের বাইরে পাচার হয় তা এইখেলাপি ঋণের টাকা। ঘুস-দুর্নীতির টাকা।সন্দেহজনক যে লেনদেনের কথা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ওই টাকা কেথায় গেছে? ওই টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের সঙ্গে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের একটা বড় সম্পর্ক আছে। আমরা যে বলেছিলাম যে অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদন তার ইঙ্গিত দেয়।”

তার কথা," এই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কোনো শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়না তাই অর্থ পাচার বেড়ে যচ্ছে। ভারতে অনেক বড় বড় পাচারকারীকে ধরে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাদের এখানে হয়নি। যারা পাচার করে তাদের সবাই চেনে। তাদেরও লজ্জা নাই। লেজকাটা শিয়ালের আবার লজ্জা কী?”

পাচার হওয়া টাকা দুর্নীতির টাকা: ড. আহসান এইচ মনসুর

This browser does not support the audio element.

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," দেখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রতিবছরই এই সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে। প্রতি বছর যদি বাড়তে থাকে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে? তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। ব্যবস্থা নিলে তো আর বাড়ত না।”

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা ১৩৩টি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে। এর মধ্যে সিআইডিতে ৮৫টি,  দুদকে ৩৩টি, এনবিআরে ১০টি ও অন্যান্য সংস্থায় পাঁচটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

বাংলাদেশ থেকে বছরে কত অর্থ পাচার হয় তার কোনো হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নাই। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাবে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তার পাঁচ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে সরকার। আর গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন," সন্দেহজনক লেনদেনের এই অর্থ পাচার হতে পারে আবার দেশের ভেতরেও থাকতে পারে। তবে অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে । তাতে এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়েছে ধারণা করা যায়।”

'অর্থপাচার বেড়ে গিয়েছে'

This browser does not support the audio element.

তার মতে ," মনিটরিং বাড়িয়ে পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি না দিলে এই পরিস্থিতির অবসান হবেনা। কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়েছে আমি এখনো দেখিনি। তবে তিনি মনে করেন," বাংলাদেশ ব্যাংক যে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার  একটা গুরুত্ব আছে। আমরা জানতে পারি। পরিস্থিতি বুঝতে পারি।”

এ নিয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের  বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন," পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।”

দেশ থেকে আর কারা অর্থ পাচার করেছেন ও পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনতে কী করা হচ্ছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, "বিদেশের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে সব সময় তথ্য পাওয়া যায় না। এ জন্য ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। দেশ থেকে অর্থপাচারের ৭০-৮০ শতাংশ হয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যেম।কোনো অর্থ পাচার হয়ে গেলে ফেরত আনা কঠিন। কারণ, দুই দেশে দুই রকম আইন প্রচলিত আছে। চুক্তি হলে টাকা ফেরত আনা সহজ হতে পারে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ