কয়েকজনের উপর ছুরি হামলার দায়ে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছে মিউনিখ পুলিশ৷ জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যের রাজধানীতে তাকে আটক করতে কয়েকঘণ্টার অভিযান পরিচালনা করে নিরাপত্তা বাহিনী৷
বিজ্ঞাপন
সন্দেহভাজন ঐ ব্যক্তির হামলায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন, তবে তাদের কারো অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ শনিবার সকালে এই হামলার ঘটনার পর সোয়াত টিম কয়েকঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছুরি হামলাকারীকে আটকে সক্ষম হয়৷ তবে পুলিশ এ-ও জানিয়েছে যে, যাকে আটক করা হয়েছে সেই যে সমস্ত হামলার সঙ্গে জড়িত তা তারা শতভাগ নিশ্চিত নয়৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Saez
7 ছবি1 | 7
এর আগে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্দেহভাজনকে আটক করতে পুলিশের সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে৷ অভিযান চালানোর সময় হামলাকারী চল্লিশ বছর বয়সি, সোনালি চুলের অধিকারী এবং বেশ মোটা বলে উল্লেখ করে পুলিশ৷ সে সবুজ জ্যাকেট পরে ঘুরছিল এবং তার পিঠে একটি ব্যাকপ্যাক ছিল৷ ব্যাকপ্যাকের সঙ্গে একটি স্লিপিংব্যাগ আটকানো ছিল৷ এছাড়া সে একটি কালো বাইসাইকেলে চালাচ্ছিল বলেও জানা যায়৷
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারী একা ছিল৷ এবং তার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য ছিল না৷ বরং মিউনিখের ছয়টি আলাদা আলাদা স্থানে হঠাৎ করে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় সে৷ তার হামলায় চার ব্যক্তি আহত হলেও অন্য দু'জন রক্ষা পান।
এদিকে, সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হলেও রসেনহাইমার প্লাৎস এবং অস্টবানহফ এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকতে বলেছে পুলিশ৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানিয়েছেন অনেকে৷
সন্দেহভাজন হামলাকারী সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি৷ এননকি এটি সন্ত্রাসী হামলা কিনা, তাও জানাতে পারেনি পুলিশ৷