জোর যার, মুলুক তার৷ পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যখাতে এটাই চেহারা৷ আর পুলিশ? তারা তখনই সক্রিয়, যখন আদেশ আসে৷
বিজ্ঞাপন
সত্যি কথা বলতে কী, ভারতে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কারো নয়৷ খবরের কাগজ খুললে হামেশাই দেখতে পাবেন, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে, কখনো অবহেলায় হয়েছে৷ ফলে রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতাল বা নার্সিং হোম ভাঙচুর করেছে৷ মাস কয়েক আগে গাইঘাটার ঘটনাই দেখুন৷ পায়ে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজন রোগীকে বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছিল৷ তাকে পাঁচ দিনের প্যাকেজ দেয়া হয়৷ তারমধ্যে কলকাতা থেকে ডাক্তার দেখবেন এমন কথাও থাকে৷ পরে সেই রোগীকে দামী ইঞ্জেকশন দেয়ার জন্য টাকা চাওয়া হয়৷ বারবার চাওয়ায় রোগীর পরিবারের সন্দেহ হয়৷
তারা নার্সিং হোমে যান৷ তাদের প্রথমে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়৷ পরে তারা জোর করে ঢুকে দেখেন রোগী মারা গেছেন৷ যে ডাক্তারের চিকিৎসা করার কথা ছিল তিনি একবারের জন্যও আসেননি বলে অভিযোগ৷ কী বলবেন এই ঘটনাকে? এরপরও রোগীর আত্মীয়রা উত্তেজিত হবেন না? এরপর পুলিশে অভিযোগ করা হয়৷ পুলিশ তদন্ত করে৷ তারপরের ঘটনা জানা নেই৷ সবই তো ধামাচাপা পড়ে যায়৷ আমাদের এই উপমহাদেশে তো সব জিনিসের জন্য আলাদা ওষুধ আছে৷ ব্যবস্থা আছে৷ দাম আছে৷ উত্তর ভারতে একটা বিখ্যাত কথা আছে, বাংলায় তাকে বলে 'জোগাড়'৷ সবকিছুরই তো জোগাড় হয়ে যায়৷ কখনো পকেটে বেশি টান পড়ে কখনো কম৷ ফলে চিন্তা কীসের!
তা জোগাড়ের দেশে সবই চলে৷ ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা যান (পরিসংখ্যান বলছে,বিশ্বে বছরে ২৬ লাখ মানুষ এভাবেই মারা যান)৷ ভুল হতেই পারে৷ চিকিৎসকরা মানুষ৷ তাদের রোগলক্ষণ বুঝতে ভুল হতে পারে৷ ওষুধ দিতে ভুল হতে পারে৷ সেই ভুল ইচ্ছাকৃত নয়৷ আবার চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা, টাকা নেয়ার জন্য সমানে নানা ধরনের ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে যাওয়া, তারপর অবহেলা, এ সব তো ইচ্ছাকৃত ভুল৷ তারও তো দায় কেউ নেয় না৷
আর শাস্তি দিলেও তা কি গুরুতর হয়? গত মার্চে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর পর মেডিকেল কাউন্সিল ছয় মাসের জন্য ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছিল৷
অন্যদিকে রোগীর আত্মীয়দের ব্যবহারও তেমনই৷ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় চিকিৎসক ধর্মঘট হয়েছিল ২০১৯ সালে৷ কলকাতার সরকারি হাসপাতাল এনআরএসে৷ ট্যাংরা অঞ্চলের একজন রোগীর মৃত্যুর পর তার আত্মীয় ও পাড়ার লোক এসে দুইজন জুনিয়র ডাক্তারকে বেধড়ক মারে৷ ব্যাপক ভাঙচুর করে৷ তারপর জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্মঘট শুরু করে দেন৷ এনআরএসের পাশাপাশি এই আন্দোলন অন্য হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে৷ শুরু হয় কর্মবিরতি৷ অনেক রোগীকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়াভাবে মোকাবিলা করতে চান৷ চরমসীমা দেন৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি ঘোষণা করেন, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে একজন অ্য়াসিসটেন্ট কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ দল থাকবে৷ কোনো অসুবিধা হলে তারা হস্তক্ষেপ করবে৷ তারপর ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ চিকিৎসকদের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির পর ধর্মঘট ওঠে৷
রোগীর আত্মীয় ও বন্ধু-প্রতিবেশীরা ট্রাক ভর্তি করে এনআরএসে এসে জুনিয়ার ডাক্তারদের মেরেছিল৷ ভাঙচুর করেছিল৷ কোনো সন্দেহ নেই, প্রিয় মানুষের মৃত্যু খুবই শোকাবহ এবং ধাক্কা লাগার মতো ঘটনা৷ কিন্তু তার জেরে সন্দেহের বশে দলবল নিয়ে এসে ডুনিয়র ডাক্তারদের মারা হবে, এটাই বা কোন দেশি নিয়ম? আর সেই মারে দুইজন জুনিয়র ডাক্তার গুরুতর আহত হওয়ার পর কলকাতার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা থামিয়ে দেওয়াটাই বা কীরকম আন্দোলন?
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তারা এই আন্দোলনে না গেলে, তাদের শুধু মারই খেতে হত৷ যেহেতু তারা হাসপাতালে সকলের নাগালের মধ্যে থাকেন, তাই যাবতীয় ঝড়ঝাপটা তাদের সামলাতে হয়৷ কিছু হলেই রোগীর আত্মীয়রা তাদের মারধর করে৷ এরপর এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদ না করলে তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হবে৷ কারণ, এই সব ঝামেলা হলেই তার সঙ্গে রাজনীতি ঢুকে পড়ে, তার সঙ্গে জড়িয়ে যায় স্থানীয় স্বার্থ৷ তাই তারা চরম অবস্থান নিতে বাধ্য হয়৷ জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু আন্দোলনের ক্ষেত্রে তারা এককাট্টা৷
আবার সরকারি হাসপাতাল মানে তো দালালচক্র৷ সরকারি হাসপাতাল মানে তো সাধারণত ক্ষমতাশীল দলের শক্ত জমি৷ সরকারি হাসপাতাল মানে একগুচ্ছ বেনিয়মের অভিযোগ৷ আর বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশই রোগী ও তাদের আত্মীয়দের শোষণ করার যন্ত্র৷ ফলে সাধারণ মানুষের রাগ হওয়াটাও তো অস্বাভাবিক নয়৷ আর এখন কোথাও কিছু হলে তো আগে হাত চলে, ছুরি চলে, বোমা চলে, গুলি চলে, মারধর তো খুব সাধারণ ঘটনা৷ একটা বারুদের স্তূপের উপর বসে থাকা সমাজ ও তার অধিবাসীরা৷ সামান্য সংঘাতেই ফুলকি বের হয়৷
ভারতে বাড়ছে হাসপাতাল, সংকট ডাক্তারের
জনসংখ্যায় চীনকে অতিক্রম করে শীর্ষে ভারত৷ বাড়তি এই জনসংখ্যাকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল তৈরি করা হলেও রয়ে গেছে ডাক্তারের সংকট৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
সব জেলায় হাসপাতাল
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের নানা অঞ্চলে বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ সরকারের পরিকল্পনা দেশের ৭৬১টি জেলার প্রতিটিতে একটি করে বড় হাসপাতাল তৈরি করার৷ কিন্তু সেজন্য কেবল অবকাঠামো তৈরি করলেই চলবে না, প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরও৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
ডাক্তার স্বল্পতা
১৯৯১ সালে ভারতে প্রতি এক হাজার মানুষে ডাক্তারের হার ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ- এক দশমিক দুই৷ কিন্তু এরপর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়লেও ডাক্তারের সংখ্যা সে তুলনায় পর্যাপ্ত বাড়ানো সম্ভব হয়নি৷ ২০২০ সালে এই হার নেমে আসে শূন্য দশমিক সাতে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য অন্তত একজন ডাক্তার থাকা উচিত৷ ভারতের কাছাকাছি জনসংখ্যার দেশ চীনে এই হার দুই দশমিক চার৷
ছবি: Yatish Bhanu/AP Photo/picture alliance
তথ্যের বিভ্রান্তি
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রায়ই তথ্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়৷ যেমন মার্চেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়া দেশটির পার্লামেন্টকে জানান, ভারতে প্রতি ৮৩৪ জন মানুষের জন্য একজন ডাক্তার রয়েছেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, এই সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি এবং ন্যাচারোপ্যাথির চিকিৎসকদেরও৷
ছবি: Rajesh Kumar Singh/AP Photo/picture alliance
দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা
বড় শহরে ডাক্তারের সংকট তুলনামূলক কম হলেও দেশটির বেশিরভাগ মানুষের ঠিকানা গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের অভাব প্রকট৷ ফলে চিকিৎসা নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি রাতও কাটাতে হয় হাসপাতালের সামনে৷ ফলশ্রুতিতে অনেকেই শত শত মাইল দূর থেকে শহরে আসেন ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায়৷ এর ফলে চাপ বাড়ছে শহরের হাসপাতালের ওপরও৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
আরো বেশি মেডিকেল কলেজ
এপ্রিলে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম বিশেষায়িত হাসপাতাল উদ্বোধনের পর মোদী জানান, আরো বেশি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তার সরকারের৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৩৪৮৷ ২০২৩ সালের মার্চে সে সংখ্যা বাড়িয়ে এক লাখ এক হাজার ৪৩টিতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Rajesh Kumar Singh/AP Photo/picture alliance
5 ছবি1 | 5
ফলে হাসপাতালে, ডাক্তারদের মারধর যেমন আছে, তেমনই দুর্নীতি, বেনিয়ম, রোগীদের অর্থ নেয়ার নানান ফিকির, দালালচক্র সবই আছে৷ ফলে কোন অন্য়ায় থেকে যে কোন অন্য়ায়ের জন্ম হয় তা বলা মুশকিল৷ ২০২২-এর শেষদিকের ঘটনা৷ মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়ারা আমরণ অনশন শুরু করলেন৷ দাবি, তাদের ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন যথাসময়ে করতে হবে৷ ১২দিন ধরে অনশন চললো৷ এর ফলে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটলো৷ সেখানে তিন পক্ষ ছিল৷ পড়ুয়া, রাজ্য সরকার এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ তালি বাজতে গেলে অন্তত দুইটি হাত তো দরকার৷
তাই বলে কি এখানে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার করা হয় না? হয়৷ ২০১১ সালে আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল৷ তাতে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন ৮৯ জন৷ তারপর মালিল ও ম্যানেজারদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১২তে তারা অবশ্য জামিন পেয়ে যান৷ এক দশক ধরে আইনি লড়াই করে মৃতদের আত্মীয়রা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন৷
আমরির ঘটনা তো ভয়ংকর৷ তাছাড়া খুঁজলে এক-দুজনকে ধরা হয়েছে, এমন নিদর্শন পাওয়া যাবে, কিন্তু তার সংখ্যা খুব বেশি নয়৷ প্রথমত, ডাক্তারদের গ্রেপ্তার করাই বা হবে কেন? তার জন্য অভিযোগ চাই, প্রমাণ চাই৷ তাছাড়া ডাক্তারদের সংগঠনও খুব প্রভাবশালী৷ আর ডাক্তারদের কেই বা চটাতে চায়৷ পুলিশ থেকে মন্ত্রী সকলেরই তো তাদের দরকার হয়৷
তাহলে সবমিলিয়ে ঘটনাা কী দাঁড়ালো? এককথায়, যাদের যা ইচ্ছে, তারা তা করছে৷ যাদের যেখানে শক্তি, তারা সেখানে রাজা৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের কাছ থেকে কতটা টাকা নেয়া যায়, সেই ধান্ধায় থাকে৷ সেখানকার চিকিৎসকরাও তাদের সাহায্য করেন বলে হামেশা অভিযোগ ওঠে৷ রোগীর আত্মীয়রা কিছু হলেই আইন নিজের হাতে তুলে নেন৷ সরকারি হাসপাতালে হয় দাদাকে ধরতে হয় অথবা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক মহলে উঁচু পদে পরিচিত কেউ থাকা চাই৷ তারা বললে, ভর্তি থেকে শুরু করে চিকিৎসা সবই হবে৷ না হলে..থাক সে কথা৷ কিছুদিন আগেই সরকারি হাসপাতালে দালালচক্র নিয়ে তৃণমূলের সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র পর্যন্ত সোচ্চার হয়েছিলেন৷ একসময় অবশ্য অভিযোগের আঙুল তার দিকে ছিল৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসাক্ষেত্রের কথাও মহাভারত-সমান৷ তাতে সাসপেন্স আছে, দুর্নীতি আছে, মারামারি আছে, ট্রাজেডি আছে, আন্দোলন আছে, সিস্টেম ভাঙার ডাক আছে, আবার সবই সেই সিস্টেমে চলে যাওয়ার কাহিনি আছে৷
তা এর মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা মার খাবেন, সব বন্ধ করে দেবেন, রোগীর আত্মীয়রা তাদের দাদাগিরি দেখাবেন এ আর বেশি কথা কী? এ সব তো প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে৷ যা দেখা যাচ্ছে না, সেটা হলো, প্রদীপের তলায় বড়ই অন্ধকার৷
জার্মানি থেকে দক্ষিণ এশিয়া: স্বাস্থ্যের দায় কার?
গুগল খুলে ইউরোপ বা জার্মানিতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট নিয়ে খোঁজ করলেই দেখা যাবে যে এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। ছবিঘরে দেখুন সেই কথা৷
ছবি: Cristiano Minichiello/UIG/imago images
ইউরোপজুড়ে একই চিত্র
গত প্রায় দুই দশক ধরে জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ যেমন ফ্রান্স, পোল্যান্ড, স্পেন, বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্য, সর্বত্র অধিকার আদায়ের দাবিতে পথে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Pablo Blazquez Dominguez/Getty Images
পথে নামছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা
ইউরোপের চিকিৎসকেরা যতবারই রাজপথে নেমেছেন, দাবি প্রতিবারই ছিল স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি, টানা লম্বা সময় ধরে একনাগাড়ে কাজ করায় বিরতি আনা ও অবিলম্বে নতুন, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিযুক্তি। সাথে ছিল চিকিৎসকদের মাইনে বাড়ানোর কথাও। অন্যান্য পেশায় কর্মরত ব্যক্তিদের তুলনায় চিকিৎসকদের আয় বেশি হলেও, পরিসংখ্যান বলছে সময়ের সাথে সাথে খরচ বাড়লেও, মাইনে বাড়েনি। কিন্তু বেড়েছে কাজ, কাজের সময়, কাজের চাপ।
ছবি: Erbil Basay/AA/picture alliance
জার্মানিতে যেমন
২০২৩ সালে জার্মানির প্রায় সব রাজ্যে ধর্মঘটে নামেন চিকিৎসকেরা। এর আগে ২০২২ সালে বার্লিনের শারিটে হাসপাতালের কর্মীরা ধর্মঘটে নামেন।
ছবি: Fabian Sommer/dpa/picture alliance
চিকিৎসকের অভাব
জার্মানিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলি মেটানো রাষ্ট্রের কর্তব্য। তবে সেটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। কিন্তু খোলা বাজারে আটকে থাকাটা জার্মানির জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। এখানে চিকিৎসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও ডাক্তারের দেখা পাওয়ার কোনো ঠিক নেই। কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, যেমন শল্য চিকিৎসক বা স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেই বছর ঘুরে যাবার প্রবল সম্ভাবনা।
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
অভাবের কারণ জনসংখ্যা
জার্মানির জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশের বয়েস ৬৫'র ওপরে। অন্যদিকে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়েসি জার্মানদের সংখ্যা এখন যা, ততোটা কম এর আগে কখনো হয়নি। চলতি দশকের শেষে, জার্মানিতে অবসরপ্রাপ্ত বাসিন্দার সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে একলাফে দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে একদিকে যেমন কমবে করদাতার সংখ্যা, অন্যদিকে বাড়বে রাষ্ট্রের ওপর স্বাস্থ্য পরিষেবা দেবার চাপ।
ছবি: Benjamin Nolte/dpa/picture alliance
কেমন জার্মান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা?
ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি। এই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুটি বিপরীতধর্মী দিকের কথা। প্রথম, এখানে স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক, এবং তার মাসিক মূল্য ভাগাভাগি করে নেয় যারা বীমাধারী ও আমাদের নিয়োগকর্তা ব্যক্তি বা সংস্থা। যারা স্বনির্ভর, তাদের পুরোটাই নিজেদের দিতে হয়, আবার যাদের সামর্থ্য নেই এই খরচ দেবার, তাদের স্বাস্থ্যবীমার ভার সরকারের। সেই টাকার বড় অংশ আসে জনতার দেওয়া কর থেকে।
ছবি: Unai Huizi/imagebroker/IMAGO
দক্ষিণ এশিয়ার সাথে পার্থক্য
ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে তারুণ্যের জোয়ার অবারিত থাকলেও সেই তারুণ্যকে পুরোপুরি প্রশিক্ষিত মানবসম্পদে পরিণত করা যায়নি। সাথে, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক পেশাকে সন্দেহের নজরে দেখা, এটাও আমাদের গভীরে প্রোথিত। দেশে কান পাতলেই শোনা যায়, "রোগী বেঁচে গেছে? ভগবানের অশেষ কৃপা! রোগী বাঁচেনি? নিশ্চয়ই ডাক্তার ভালো না!" এই মানসিকতা থেকে তাই ডাক্তার বা অন্য কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পেশার প্রতি সম্মান তৈরি হয়ন৷
ছবি: Vishal Bhatnagar/NurPhoto/IMAGO
কীভাবে মোকাবিলা করবে জার্মানি?
জার্মানির সমস্যা মোকাবিলা করতে পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন দেশের অভিবাসন নীতির, যা ইতিমধ্যে কিছুটা শুরুও হয়ে গেছে। গোটা দুনিয়ার প্রশিক্ষিত তরুণ চিকিৎসকরা জার্মানি না এসে পাড়ি দেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে, যেখানে ভাষা জানা নিয়ে অত কড়াকড়ি নেই। কোন বিষয় প্রাধান্য পাবে, স্বাস্থ্য না ভাষা, সেই তর্কে না গিয়ে জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার সমাধান অসম্ভব।
ছবি: Political-Moments/IMAGO
দক্ষিণ এশিয়ার সমাধান...
দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাত কী, অন্তত সেই মৌলিক আলোচনায় ফিরে গিয়ে ঠিক করা, যে এই খাত আসলে কার লাভের জন্য? মানুষের না বাজারের? প্রশ্ন করতে হবে, রোগী মারা গেলে এই দায় কি একা ডাক্তারের? না কি প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু আসলে আমাদের অবিজ্ঞানমনস্ক বাজারমুখী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে উঁচিয়ে থাকা এক একটা আঙুল?