টেক্সাসের ইউভ্যালডিতে প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায় এক বন্দুকধারী৷ তাতে প্রাণ হারায় ১৮ শিশু-সহ ২১ জন৷ সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা ৷ মিছিলেও দেখা গেল সেই ছবি৷ সন্তানের হাত আঁকড়ে অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবি জানালেন মা-বাবারাও৷

২০১৮ সালে ডগলাসে বন্দুক হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন এক্স গঞ্জালেজ৷ ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’-এর সহ-উদ্যোক্তা তিনি৷ ওয়াশিংটন ডিসিসহ সারা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন তারা৷

সমাবেশে পা মিলিয়েছেন গঞ্জালেজ৷ বক্তৃতাও দিয়েছেন৷ সেই সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি৷ এতগুলো মানুষকে হারিয়ে ফেলার দুঃসহ স্মৃতি আজো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ৷

নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজে হাজারো মানুষ হাঁটলেন অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে৷ ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডেও দেখা গেছে এমন সমাবেশ৷

মানুষের মাথা ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের সমাবেশে৷ ১১ জুনের বিপুল সমাবেশে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আপামর সাধারণ নাগরিকেরা৷

খোসে বাদিও নামে এক ব্যক্তি বন্দুক হামলায় নিহত শিশুদের ছবির সামনে প্রতিবাদের পতাকা জুড়ে দিচ্ছেন৷ ছবিটি টেক্সাসের অস্টিনের৷

স্কুলে পড়াশোনা করতে এসে আর বাড়ি ফেরেনি ইভা মিরেলেস৷ তার মতো অনেক শিশুই আর বেঁচে নেই৷ ক্রুশ আর গোলাপে তাদের স্মরণ করা হয়েছে৷

তুতো বোন জ্যাকি কাজারেস আর ফেরেনি৷ টেক্সাসের ইউভ্যালডির স্কুলে নিহত পড়ুয়াদের মধ্যে সে-ও একজন৷ বড় বোন ক্রিস্টেলা মেনডোজা বোনের হাসিখুশি মুহূর্তের একটি ছবি হাতে নিয়ে কঠোর অস্ত্র আইনের দাবিতে অস্টিনের সমাবেশে অংশ নিয়েছেন৷

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষকরাও অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে পথে নেমেছেন৷ ‘অ্যামেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্স’-এর প্রেসিডেন্ট রান্ডি ওয়েইনগার্টেন৷ ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’-এ বক্তব্য রেখেছেন তিনিও৷

সমাবেশে এক প্রতিবাদীর সঙ্গে কথা বলছেন এক পুলিশকর্মী৷ বিপুল সমাবেশে যাতে কোনোরকম গন্ডগোল না হয়, সে দিকে কড়া দৃষ্টি ছিল প্রশাসনের৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেও অস্ত্র আইন কঠোর করার পক্ষেই৷

পার্কল্যান্ডে বন্দুক হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল জোয়াকিন অলিভার৷ তার বাবা ম্যানুয়েল অলিভার এবং মা প্যাট্রিসিয়াও প্রতিবাদ মঞ্চে ছিলেন৷ এছাড়াও ছিলেন ডগলাসে বন্দুক হামলায় বেঁচে যাওয়া ডেভিড হগ৷

অজস্র পড়ুয়া পা মেলান এই সমাবেশে৷ তেমনই নিহত পড়ুয়াদের স্মৃতিতে সারি সারি ফুলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে৷ তেমনভাবেই অজস্র নোটবুক, ভেঙে যাওয়া পেনসিলের টুকরো রেখেও স্মরণ করা হয়েছে পড়ুয়াদের৷

এক ব্যক্তির হাতে একটি পোস্টার ছিল৷ তাতে একটি বন্দুকের ছবি৷ বন্দুকের পাশে লেখা ‘বেবি কিলার’ অর্থাৎ শিশু হত্যাকারী৷

টেক্সাসের ইউভ্যালডির একটি প্রাথমিক স্কুলে ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার। ১৮ বছরের এক তরুণ গায়ে বুলেটের বেল্ট লাগিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সে ছাত্রছাত্রীদের হত্যা করে। ঘটনায় ১৮ জন শিশু নিহত হয়েছে। মোট মৃত ২১। এর আগে বাড়িতে নিজের দিদিমাকেও গুলি করে হত্যা করে ওই যুবক। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। গুলি চালানোর কারণ এখনো অস্পষ্ট।

জাপান থেকে অ্যামেরিকায় ফিরছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিমানেই তিনি খবরটি পান। বিমানে বসেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। পরে টুইটও করেন। ওয়াশিংটনে নেমে ফের সাংবাদিক বৈঠক করেন বাইডেন। ঘটনায় নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি প্রেসিডেন্ট। এর জন্য অস্ত্র আইনকে ফের দায়ী করেছেন তিনি।

টেক্সাসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনিও জানিয়েছেন, এবার দ্রুত অস্ত্র আইন বদল করা উচিত। নির্বাচন পর্বে বাইডেন-হ্যারিস জুটি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তারা অস্ত্র আইন কঠোর করবেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের প্রতিরোধে সেই বিল আইনে পরিণত হয়নি। যা নিয়ে বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাইডেন এবং হ্যারিস দুইজনেই।

হোয়াইট হাউস, নৌবাহিনীর জলযান, সামরিক ঘাঁটি, দূতাবাস-সহ সমস্ত সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

নিউইয়র্কে একটি বেসবল মাঠের ছবি। খেলা শুরুর আগে সেখানে নিহত শিশুদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হচ্ছে।

মেক্সিকোর সীমান্তে অবস্থিত ইউভ্যালডি। ছোট্ট এই শহরে মাত্র ১৬ হাজার মানুষের বাস। সেখানেই এলিমেন্টারি স্কুলে আক্রমণ চালায় ১৮ বছরের স্যালভাডোর রামোস। গুলির আওয়াজ পাওয়ার পরেই সেখানে পৌঁছে যায় স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আক্রমণকারী। তার আগে ২১ জনের প্রাণ নিয়ে নিয়েছে সে।

এই স্কুলবাসে করেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল নিহত শিশুদের। ফাঁকা স্কুলবাস দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের বাইরে।

স্কুল চত্বর ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তাকর্মীরা। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্কুলের বাইরে আতঙ্কিত বাবা-মায়েদের ভিড়।

স্কুলের ভিতর থেকে তখনো সমস্ত মৃতদেহ বার করা হয়নি। স্কুলের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অভিভাবকরা।

গত কয়েকবছরে একের পর এক গুলিচালানোর ঘটনা ঘটেছে অ্যামেরিকায়। স্কুলেও আক্রমণ হয়েছে। তবে এত বড় ঘটনা প্রায় ১০ বছর পরে ঘটল। এর আগে কানেকটিকাটের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।