সপ্তাহান্তে একাধিক দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। পরমাণু অস্ত্র হতে পারে, আশঙ্কা অ্যামেরিকার।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকালে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে একাধিক দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা সফল হয়েছে। ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্দিষ্ট টার্গেট ধ্বংস করতে পারে ওই মিসাইল। সফল পরীক্ষার পরে মিসাইলগুলি সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম। অ্যামেরিকার আশঙ্কা, মিসাইলগুলি পরমাণু পরীক্ষার অংশ হতে পারে।
উত্তর কোরিয়ায় অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷ এছাড়া এবার প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইলও ছিল না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্যারেড
উত্তর কোরিয়ার ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার মাঝরাতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে কিম জং উন উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
করোনার চিহ্ন
আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়া করোনা শনাক্তের কোনো তথ্য দেয়নি৷ তবে সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়াসহ কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল৷ প্যারেডে যারা অংশ নিয়েছেন তারা হ্যাজম্যাট স্যুট (হ্যাজার্ডাস ম্যাটেরিয়ালস স্যুট) পরেছিলেন৷ মুখে ছিল মেডিকেল-গ্রেড মাস্ক৷
ছবি: KCNA via REUTERS
তবে দর্শকরা মাস্ক পরেননি
প্যারেডে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের অনেকে মাস্ক পরলেও প্যারেডের দর্শকরা মাস্ক পরেননি৷ এমনকি কিম জং উনের খুব কাছে অনেককে মাস্কহীন অবস্থায় দেখা গেছে৷ মাস্ক ছাড়াই তাদের উনকে ছুঁতে এবং হাত মেলাতে দেখা গেছে৷
ছবি: KCNA/REUTERS
ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না
এবারের প্যারেডে কোনো ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল না৷ যদিও গত অক্টোবরে এক প্যারাডে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়েছিল৷ এছাড়া সেসময় কিম জং উন তার বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ক্ষমতা সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছিলেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনেকদিন পর ‘রেড গার্ডসের’ উপস্থিতি
১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর চীনা বাহিনী উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর ‘ওয়ার্কার-পিজেন্ট রেড গার্ডস’ নামে একটি জননিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল৷ ২০১৩ সালের পর এবার আবার তারা প্যারেডে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: KCNA/REUTERS
অনাড়ম্বর প্যারেডের কারণ
সৌলের নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন বলছেন, প্যারেডে ব্যালিস্টিক মিসাইল না থাকা এবং রেড গার্ডসের উপস্থিতির অর্থ হচ্ছে কিম জং উন অভ্যন্তরীণ ইস্যু যেমন করোনা, অর্থনীতি, জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বিষয় দেখাতে চেয়েছেন৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনায় ভালো অবস্থানে থাকতে চাওয়ার লক্ষ্যে হয়ত ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখানো হয়নি৷
ছবি: KCNA/REUTERS
আলোচনা বন্ধ আছে
উত্তর কোরিয়া যেন পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করে সেই লক্ষ্যে আলোচনা ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন কূটনীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে সফলতা পেতে চান৷ গত জুলাই মাসে আন্তঃকোরীয় হটলাইন চালু হওয়ার পর আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল৷ তবে গতমাসে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ মহড়া শুরুর পর উত্তর কোরিয়া আর ফোন ধরছে না৷
ছবি: KCNA/REUTERS
7 ছবি1 | 7
গত কয়েকমাস ধরেই দেশের সামরিক শক্তি আরো শক্তিশালীর বিষয়ে জোর দিচ্ছেন কিম জং উন। কিছুদিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দেশের বিজ্ঞানীরা একাধিক ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি করেছে। যা উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। এরপরেই গত মার্চ মাসে একটি কম পাল্লার ব্যলেস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়া। যার জেরে অ্যামেরিকা আরো কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দেশটির উপর। এবার একাধিক দূরপাল্লার মিসাইলের পরীক্ষা হলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন এলাকায় তারা এই পরীক্ষা করেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মিসাইলের শক্তি কতটা, তার সঙ্গে পরমাণু শক্তির যোগ আছে কি না, সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বস্তুত, এখনো পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ এ বিষয়ে কোনো কিছু সংবাদমাধ্যমকে বলতে চায়নি। তারা কেবল জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে তারা।
আরো নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে অ্যামেরিকা। এই পরীক্ষার পরে আরো নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। বস্তুত, ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল অ্যামেরিকার। কিন্তু পরবর্তীকালে তা ভেস্তে যায়। জো বাইডেন যে দিন শপথগ্রহণ করেন, সেই দিন একটি ব্যালেস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করে বার্তা দিয়েছিলেন কিম জং উন। বাইডেনও উত্তর কোরিয়ার প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর কোনো চেষ্টা করেননি। তারপরেই সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রকল্প ঘোষণা করেন কিম।