সৌদি আরব এবং অ্যামেরিকার মধ্যস্থতায় সুদানের যুযুধান দুই দলের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে লড়াই চলছেই।
বিজ্ঞাপন
এর আগেও সুদানে লড়াইরত দুই পক্ষ-- সরকারি সেনা এবং বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আরএসএফ-এর মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে। কিন্তু তা কখনোই কার্যকরী হয়নি। সোমবার রিয়াধে সৌদি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় লিখিত যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয় যুযুধান দুইপক্ষের। তাতে স্থির হয়, আগামী সাতদিন দুইপক্ষ কোনোভাবে লড়াইয়ে অংশ নেবে না। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না।
স্থানীয় মানুষ এবং একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। খারতুমে একের পর এক বিমান হামলা, রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলির শব্দ শোনা গেছে থেকে থেকেই। ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, লিখিত চুক্তিও সুদানের লড়াই থামাতে পারল না।
সুদানে আবার তীব্র লড়াই
আবার তীব্র লড়াই শুরু সুদানে। সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে। খার্তুম ও ওমডারম্যানের পরিস্থিতি ভয়ংকর।
ছবি: AFP
সেনার আক্রমণ
খার্তুম, ওমডারম্যান ও বাহরি থেকে আধাসামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি সরিয়ে দেয়ার অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনী। আল-বুরহানের অনুগত এই বাহিনী এখন এই শহরগুলি পুরোপুরি দখল করে নিতে বদ্ধপরিকর।
ছবি: AFP/Getty Images
পাল্লা দিচ্ছে আধাসামরিক বাহিনী
তবে সেনার কাজটা সহজ নয়। কারণ, দাগোলোর নেতৃত্বে আধাসামরিক বাহিনীও প্রবলভাবে লড়াইয়ে আছে। তারা একচুল জমি ছাড়তে রাজি নয়। সেজন্যই খার্তুম ও অন্য শহরে ভয়ংকর লড়াই হচ্ছে।
ছবি: AFP
বিমান-হামলা চলছে
আধাসামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমানে বিমান-হামলা করা হচ্ছে। সেনার প্রধান অস্ত্র এই বিমান-হামলা। সাধারণত বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে বিমান-হামলা করা হয়। সুদানে দেশের সেনা তা ব্যবহার করছে দেশের আধা-সামরিক বাহিনীর উপর।
ছবি: Ahmed Satti/Anadolu Agency/picture alliance
ক্ষমতা দখলের লড়াই
কে দেশ চালাবেন, কে সব ক্ষমতা দখল করবেন, তারই লড়াই হচ্ছে সুদানে। এই লড়াইয়ের একদিকে আছেন আবদেল ফত্তেহ আল-বুরহান, তিনি সেনাপ্রধান, অন্যদিকে আধাসামরিক বাহিনী(আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো। উপরের ছবিটি আল-বুরহানের।
ছবি: El Tayeb Siddig/REUTERS
অন্তত ৭৫০ জন মৃত
অ্যামেরিকা-ভিত্তিক সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট জানিয়েছে, অন্ততপক্ষে ৭৫০ জন মারা গেছেন। আহত পাঁচ হাজারের বেশি।
ছবি: AFP/Getty Images
ক্ষুধা ছড়াবে
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানে যদি এই সংঘাত চলতে থাকে তাহলে আগামী মাসে আরো ২৫ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকবেন। সংঘর্ষের আগেই সুদানের অবস্তা খারাপ ছিল। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম সেখানে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছিল।
ছবি: AFP
সংঘর্ষের পর
সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রগ্রামোর অফিস লুট করা হয়েছে। ২৫ শতাংশ খাবার চুরি হয়ে গেছে। উপরের ছবিতে পোর্ট সুদান থেকে ত্রাণের জিনিস সামরিক বিমানে তোলা হচ্ছে।
ছবি: Mohamad Ali Harissi/AFP
জেড্ডায় আলোচনা
সৌদি আরবের উদ্যোগে জেড্ডায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাও চলছে। তবে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা এই আলোচনা থেকে খুব বেশি কিছু আশা করছে না। যদি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো যায় এবং সংঘর্ষবিরতি হয়, তাহলেই আলোচনা সফল বলে তারা মনে করবে। উপরের ছবিতে সাউথ সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বুরহানের বিশেষ দূত আল-হজ আলি।
ছবি: JOK SOLOMUN/REUTERS
মানুষ পালাচ্ছে
ইতিমধ্যেই সুদান ছেড়ে অনেকেই প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। দক্ষিণ সুদানে আপার নাইল স্টেটে জাতিসংঘ একটা অফিস খুলেছে। সেখানে সুদান ছেড়ে আসা মানুষদের খাবার দেয়া হচ্ছে।
ছবি: JOK SOLOMUN/REUTERS
9 ছবি1 | 9
তিন সপ্তাহ ধরে প্রবল লড়াই চলছে সুদানে। দেশের সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে প্যারামিলিটারি বা আরএসএফ। তাদের কম্যান্ডার মহম্মদ হামদান দাগালোর দাবি, সেনার দুর্নীতি এবং অত্যাচারের হাত থেকে সুদানকে রক্ষা করতেই একাজ করেছেন তিনি। সুদানের শাসনক্ষমতা দখল করাই তার লক্ষ্য।
এদিন যুদ্ধবিরতির চুক্তি হওয়ার পর একটি অডিওবার্তা দিয়েছিলেন দাগালো। সেখানে সৌদি আরব এবং অ্যামেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একইসঙ্গে জানিয়েছিলেন, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। ওই বার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছিল যে, যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
গত তিন সপ্তাহের লড়াই কয়েকশ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সুদানে। উদ্বাস্তু হয়েছেন প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ। প্রতিবেশী দেশগুলিতে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে আরো ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হবে সুদান।