1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ-পুরুষোচিত কাজ ধর্ষণ

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী১১ অক্টোবর ২০১৫

ভারতে আবারো ঘটে গেল একটা ধর্ষণের ঘটনা৷ আসলে নারী-পুরুষের ‘বাইনারি সিস্টেম' শুরু করার সময়েই হয়ত বিধাতা জানতেন, গোলমাল বাঁধবে৷ অথচ তাঁর সৃষ্ট প্রণালীতে দ্বন্দ্বের জন্য জায়গা রাখা ছিল তা ঠিক৷ কিন্তু তা কখনোই নীচতার জন্য নয়৷

Symbolbild - Proteste gegen Vergewaltigungen in Indien
ছবি: Getty Images/N. Seelam

ইস্কুলে থাকতে আমরা বলতাম ‘বুলি', অর্থাৎ যে ছেলেটি গায়ের জোর দেখিয়ে তার চেয়ে যারা দুর্বল, তাদের উপর কর্তৃত্ব কিংবা অত্যাচার করে৷ সেই ধরনের তিনটি ‘বুলি' যদি বেঙ্গালুরুর বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তরুণীকে মিনিবাসের মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে রেপ করে, তাহলে আমাদের সেই বারো'শ ছাত্রের ছেলেদের স্কুল হলে তাদের আর...

ছেলেদের স্কুলে এক ধরনের ‘থিভস হনার' বা চোরেদের সম্মানজ্ঞান থাকে৷ সেই সম্মানজ্ঞানই আমাদের বলে দিত, মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে নেই৷ তুললে মেয়েদের – এবং মায়েদের – যতটা বিরাগভাজন হবো, তার চেয়ে বেশি ঠাট্টা শুনতে হবে সহপাঠী এবং ফুটবল টিমের অন্যান্য সতীর্থদের কাছ থেকে৷ সে আমলে – সে অনেকদিন আগের কথা – পুরুষমানুষ হবার সংজ্ঞাই ছিল মেয়েদের উপর জোরজার না করা৷ নয়ত যে এই পোড়া পৃথিবীর কতো সুন্দরীকে যে স্রেফ গায়ের জোরে নিজের প্রেমে পড়িয়ে ফেলতাম – যাক, সে দুঃখের কথা বলে আর কী হবে?

মোট কথা, নারী-পুরুষের সমতা মানে যে নারীরা সবাই কারাটে শিখে ‘টুম্ব রেডার'-এর মতো পুরুষদের পিটিয়ে ঠান্ডা করবেন, এমন নয়৷ যেমন নারী-পুরুষের একটা ব্যবধান মেটারনিটি লিভ আর পেটারনিটি লিভের মধ্যে থেকে যাচ্ছে৷ ভয় পেলে আমরা – পুরুষরা – বলি, ‘‘ওরেঃ বাবা!'' কিন্তু চোট লাগলে বলি, ‘‘মা গো৷'' এ-ও এক ফান্ডামেন্টাল ডিফারেন্স৷ নারীর প্রেমে পড়ায়, কামনা করায় কোনো দোষ নেই, কেননা সেটা বিধাতার সৃষ্ট সফটওয়্যারের অঙ্গ৷ কিন্তু জোর করে নারীর সঙ্গ আদায় করার প্রচেষ্টার সঙ্গে একমাত্র তুলনা করা যেতে পারে – মনে পড়ছে হাস্যরসিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সেই ‘মধুলিড়' গল্পের ফুলপ্রেমী ভদ্রলোকের কথা, যিনি ফুল খেতে ভালোবাসতেন, নানারকম ফুলের রান্না জানতেন৷ অথবা ধরুন বাড়িতে লোকজনকে নেমন্তন্ন করে তাদের কাঁচা মাংস খেতে দিলেন – হোয়াই নট? বাঘ-সিংগিরা তো তেমনই খেয়ে থাকে৷ বাইসন, পাহাড়ি ছাগল কিংবা হাতিসিলদের মধ্যে ধরতে গেলে প্রতিটি যৌন সম্পর্কই তো রেপ৷

প্রতি যুগে নারী-পুরুষের সম্পর্ক বদলায়৷ প্রস্তরযুগে নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক ছিল, আজ সে সম্পর্ক থাকতে পারে না৷ কিন্তু সভ্যতা হল পৃথিবীর মতো, ওপরের একটা আস্তরণ, তার নীচেই লাভার মতো বইছে নানা প্রবৃত্তি৷ সেই প্রবৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব যেমন ব্যক্তির, তেমনই সমাজের বা সরকারের৷ রেপ-এর ঘটনা একক হলেও, তার তাৎপর্য সার্বিক: ধর্ষণের অর্থ সমাজে কোথাও একটা, কিছু একটা ভীষণভাবে ভুল হচ্ছে অথবা হয়েছে৷ উপমহাদেশে নারীর মূল্যায়ন এখনও অংশত পড়ে আছে প্রস্তরযুগে৷ বলতে কি, শুধু উপমহাদেশেই নয়৷ ইউরোপে আজও ৬২ শতাংশ নারী নাকি জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW

স্কুলে পড়ার সময় যখন প্রথম তিনটে দাড়ি বের হলো আর মেয়েদের বিরক্ত করা শিখলাম, তখন প্রায়ই শুনতাম: ‘অসভ্য!' আজ বুঝি, কথাটা কত সত্যি৷ তবে সেই সঙ্গে এ-ও বলি, ‘‘সভ্য হতে জীবন কাটলো বটে, তবে নীচ কোনোদিন হইনি, ধর্মাবতার৷ সেটাই বা কম কিসের?''

আপনি কি অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ