1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবচেয়ে কম মজুরির দেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ মে ২০১৭

বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্প কারখানাই শ্রমঘন৷ শ্রমিকের ঘামেই সচল আছে অর্থনীতি৷ শ্রমঘন পোশাক শিল্প সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত৷ কিন্তু সেই শ্রমিক মুনাফার কতটুকু পায়? তার জীবনের চাকা সচল রাখতে তার মজুরি কি যথেষ্ট?

Bangladesch Textil Fabrik Arbeiter Protest
ছবি: picture alliance/dpa/M.Hasan

বাংলাদেশে শ্রমিকদের একটি বড় অংশ দিনমজুর৷ তারা প্রতিদিনের মজুরিতে কাজ করেন৷ বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ শিল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজে'র শ্রমিকরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন৷ অনেকেরই প্রতিদিন কাজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়৷ তাই ঢাকাসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শ্রমিকের হাঁট গড়ে উঠেছে৷ এসব হাটে শ্রমিকরা কাজের আশায় সকালে গিয়ে হাজির হন৷ আর যাদের শ্রমিক দরকার, তারা সেখান থেকে শ্রমিকদের নিয়ে যান৷ বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এসব হাটে কৃষি, নির্মাণ এবং উন্নয়ন কাজের শ্রমিকদের পাওয়া যায়৷ তাদের দৈনিক মজুরি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা৷ তবে সমস্যা হলো প্রতিদিন তারা কাজ পান না৷ তাই তাদের গড় মজুরি অনেক কম৷ এই মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কৃষি শ্রমিকদের বছরে ৫/৬ মাস কাজ থাকে৷ বাকি সময় তারা বেকার থাকেন৷ তাদের প্রতিদিনের মজুরি চার-পাঁচশ’ টাকা হলেও গর মজুরি দিনে ২০০ টাকার কিছু বেশি৷’’

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পাট, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পসহ বড় বড় শিল্পে অবশ্য শ্রমিকরা কাজ করেন মাসিক বেতনে৷ আর সেখানে তাদের নিয়োগপত্র প্রাপ্তিসহ আরো কিছু সুবিধা আছে৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৫,৩০০ টাকা৷ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে এই মজুরি কিছুটা বেশি৷ তারপরও জীবন চলেনা পোশাক শ্রমিকদের

বিল্লাল হোসেন এবং তার ভাই কুদ্দুস দু'জনই পোশাক কারখানায় কাজ করেন৷ বিল্লাল জানান, ‘‘মা এবং দুই বোনসহ ৫ জন আমাদের পরিবারে৷ আমরা সিনিয়র অপারেটর হওয়ায় দুই ভাই মিলে মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাই৷ কিন্তু তাতে আমাদের চলে না৷ বাসা ভাড়া ৫ হাজার টাকা৷ খাওয়া এবং যাতায়ত  খরচে বাকি টাকা চলে যায়৷ কোনো বড় ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে আমাদের ধার করতে হয়৷ আমরা ভবিষ্যতের জন্য কোনো টাকা জমাতে পারি না৷ দুই ভাই বিয়ে করলে পরিস্থিতি আরো কষ্টের হবে৷’’

তারা তবুও মোটামুটি বেতন পান৷ কিন্তু যারা ৫৩০০ টাকা পান, তাদের সংসার আসলেই চলে না৷

‘মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন’

This browser does not support the audio element.

দক্ষিন এশিয়া বা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি গড় হিসেবে সবচেয়ে কম৷ বাংলাদেশে গড়ে একজন শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরি ১৭৬ টাকা ৬৭ পয়সা ( ২.১৯ ইউএস ডলার)৷  ভারতে ২.৪০ ডলার, পাকিস্তানে ৩.১৫ ডলার, মিয়ানমারে ২.১৬ ডলার৷ এটা গড় হিসাব৷ সাধারণভাবে বিভিন্ন  শিল্পখাতে মজুরির পার্থক্য আছে৷

বাংলাদেশে এখন কৃষিখাতে মজুরি সবচেয়ে কম৷ অন্যান্য খাতের মধ্যে বস্ত্রখাতে প্রতি দিনের মজুরি ২৪৮.১৭ টাকা, পাটশিল্পে ২৪৭.৫০ টাকা আর প্রকৌশল খাতে ৩৫০ টাকা৷

তবে এটা অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য৷ দক্ষ শ্রমিকদের বেতন আরেকটু বেশি৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ৷ এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৯৫ লাখ ও নারী ১ কোটি ৭২ লাখ৷ তবে মোট শ্রমশক্তির বেশিরভাগই গ্রামে বাস করে৷ শহরের শ্রমশক্তির পরিমাণ ১ কোটি ৩৩ লাখ আর গ্রামের ৪ কোটি ৩৪ লাখ৷

‘আমরা ভবিষ্যতের জন্য কোনো টাকা জমাতে পারি না’

This browser does not support the audio element.

এই শ্রমশক্তির মধ্যে ৮৭.৫ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আর মাত্র ১২.৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত৷ মোট কর্মজীবীর মধ্যে অবৈতনিক পারিবারিক সহযোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ৷ কৃষি, বনজ ও মৎস খাতে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৫৭ লাখ ও দিনমজুরের সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ৷ সব মিলিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ আর প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ৬৮ লাখ৷ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীদের মধ্যে কৃষি খাতে ৪৭.৩ ও অকৃষি খাতে ৫২.৭ শতাংশ নিয়োজিত রয়েছে৷

বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি কোনোভাবেই তাদের জীবন ধারণের জন্য পর্যাপ্ত নয়৷ এর কারণ, এখানে মজুরি নির্ধারণ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মজুরি নির্ধারণের দু'টি স্তর আছে৷ প্রথম স্তরে একজন শ্রমিকের পরিবার নিয়ে জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম যা প্রয়োজন৷ আর দ্বিতীয় স্তর হলো, একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মুনাফা এবং সক্ষমতা কত তার ওপর৷ তবে প্রথম স্তরের মজুরি নির্ধারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠান লাভ করছে, না মুনাফা করছে তা বিবেচ্য নয়৷’’

‘এখানে মজুরি নির্ধারণ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়’

This browser does not support the audio element.

২০১৩ সালে বিলস এক গবেষণায় দেখিয়েছিল যে, বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক মজুরি বা বেতন হওয়া উচিত ১৯ হাজার টাকা৷ তারা একটি পরিবারকে ৪ থেকে ৫ সদস্যের ধরে এই হিসাব করেছিল৷ তবে তারা তখন ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছিল ৮,৫০০ টাকা৷ সুলতান উদ্দিন জানান, ‘‘আমরা ৮৫০০ টাকা প্রস্তাব করেছিলাম একটি পরিবারে দু'জন উপর্জনক্ষম হবে সেই বিবেচনা করে৷ তা-ই মালিকরা মানেননি৷ ১৯ হাজার টাকা প্রস্তাব করলে তো আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতো৷’’

বাংলাদেশে একটি মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে, মজুরি কম দিলে মুনাফা কম হবে৷ বাংলাদেশে সস্তা শ্রমকেই তারা পুঁজি হিসেবে দেখছে৷ মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন করলে শ্রমিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়৷ সম্প্রকি আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে শ্রমিকরা মামলা এবং গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন বলে জানান সুলতান উদ্দিন৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ