বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ও বিপদজনক হত্যাকারী বলা যায় কোন প্রাণীকে? এক কথায় জবাব – মশা৷ মশা ধারাবাবিহভাবে কী আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে! ম্যালেরিয়া থেকে শুরু করে কতগুলো রোগের জীবাণুবাহী মশা এই বিশ্বে উড়ে বেড়াচ্ছে ভেবে দেখুন৷
বিজ্ঞাপন
মশাবাহিত জীবানুতে সংক্রমিত হয়ে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায় প্রতিবছর৷ জীবাণু বহনকারী মশার কথা বলতে গেলে সবার আগে আসবে ‘অ্যানোফিলিস মশার' কথা৷ বিশ্বে কমপক্ষে ৪৬০ রকমের অ্যানোফিলিস মশা আছে৷ তার মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ মশা রোগজীবাণু ছড়ায়৷ অ্যানোফিলিস সেরকমই এক মশা৷ এদের অতি ক্ষুদ্র ডানা সাদা-কালো ডোরাকাটা৷ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের সব অঞ্চলেই এরা উড়ে উড়ে মানুষকে কামড়ায় আর ম্যালেরিয়া ছড়ায়৷ অবশ্য রোগ ছড়ায় শুধু স্ত্রী অ্যানোফিলিস৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অন্তত শতকরা ৪৭ ভাগ কমেছে ঠিকই, তারপরও প্রতি মিনিটে একটি শিশু ম্যালেরিয়ার কারণেই মারা যায়৷
ডেঙ্গু আতঙ্কের কথা গত কিছুদিন ধরে সারা বিশ্বে তেমন একটা শোনা যাচ্ছে না৷ এই রোগের জন্য দায়ী এডিস মশা৷ এই মশার পায়ে থাকে সাদা-কালো দাগ৷ আরেকটি আশার কথা, এডিস মশা শুধু দিনের আলোতেই কামড়ায়৷ ডাব্লিউএইচও বলছে, এডিস মশা মূলত এশিয়া থেকেই আফ্রিকা, অ্যামেরিকা হয়ে ইউরোপেও ছড়িয়েছে৷
জাপানি এনসেফেলাইটিসও খুব ভয়ংকর এক মশা৷ এদের কারণে হয় পিতজ্বর৷ প্রতিবছর সারা বিশ্বে অন্তত ২ লাখ মানুষের পিতজ্বর হয় এবং টিকা না দিলে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়৷
অন্তঃসত্ত্বা নারী মশাবাহিত ভাইরাস ‘জিকায়' সংক্রমিত হলে তাঁর সন্তান ছোট মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে৷ শিশুদের এ অবস্থা চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী ‘মাইক্রোসেফালি' নামে পরিচিত৷ ‘মাইক্রোসেফালি'-এর কারণে শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে৷ আবার এ রোগের কারণে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি হতে পারে অস্বাভাবিক৷ শিশুটির অকালমৃত্যুও হতে পারে৷
এক ধরণের জ্বর আছে যার নাম, ‘ওয়েস্ট নিল ফিভার' বা পশ্চিম নিলের জ্বর৷ এই জ্বর হয় কুলেক্স মশার কারণে৷ তবে কুলেক্স মশা প্রথমে কোনো পাখিকে কামড়ায়৷ তারপর মানুষকে কামড়ালেই মহাবিপদ৷ মশাবাহিত জীবাণুর কারণে লিম্ফ্যাটিক ফিলারিয়াসিসও হতে পারে৷ নীরবে এই জীবাণু দেহে আশ্রয় নিলে এবং দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে এই রোগের কারণে মৃত্যুও হতে পারে৷
জিকা ভাইরাস সম্পর্কে আপনার যা জানা উচিত
বর্তমানে আলোচিত এক ভাইরাস ‘জিকা’৷ ভারত, পাকিস্তানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ এখনও এ থেকে মুক্ত৷ তবে সতর্ক থাকতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
লক্ষণ
জ্বর, ব়্যাশ (চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি), গোঁড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া – জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত এ সব লক্ষণ দেখা দেয়৷ এছাড়া পেশীতে ও মাথায়ও ব্যথা হতে পারে৷ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Almeida
নামকরণের ইতিহাস
‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে৷ ১৯৪৭ সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি খাঁচায় একটি বানর রাখে৷ পরে বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়৷ ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস৷ এরপর ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক মানুষের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/R. Paiva
যেসব দেশে ছড়িয়েছে
২০১৫ সাল নাগাদ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন নাগরিকের শরীরেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷
যেভাবে ছড়ায়
এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ ফলে মশার কামড় থেকে বাঁচার যে উপায়গুলো আছে সেগুলো মেনে চললেই এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/J. Gathany/Centers for Disease Control and Prevention via AP
গর্ভবতী নারীরা বেশি সাবধান!
সম্প্রতি একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না গবেষকরা৷ তাঁদের কারও মত হচ্ছে, কয়েকটি দেশে শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা৷ এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, ফলে শিশুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়৷ বৈজ্ঞানিকভাবে অবশ্য এটি এখনও প্রমাণ করা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Dana
ভ্যাকসিন নেই
এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি৷ ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ৷ অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল৷