ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে জার্মানিতে যত অ্যাসাইলামের আবেদন জমা পড়েছে ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, ইইউ-এর বাকি ২৭টি দেশ মিলে তত হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যানc দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জার্মানিতে ৪ লাখ ২০ হাজার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিয়ে কাজ শুরু হয়৷ এই সময়ে গোটা ইইউ-তে মোট ৭ লাখ ৫৬ হাজার অ্যাসাইলামের আবেদন প্রক্রিয়াধীন হয়, যাতে জার্মানির অংশ ছিল ৫৫ শতাংশ৷ এ সময়ে ইইউ-তে যে মোট ৯ লাখ ৮৮ হাজার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশই ছিল জার্মানিতে৷
পরিসংখ্যানেও রকমফের আছে৷ ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-র প্রথম নয় মাসে জার্মানিতে অ্যাসাইলামের আবেদন জমা পড়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার; জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু বলছে, ৬ লাখ ৫৮ হাজার অ্যাসাইলামের অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছে৷
এই পরিসংখ্যান কিন্তু সংশ্লিষ্ট সময়ে জার্মানিতে যত উদ্বাস্তু এসেছেন, তাদের সংখ্যা নয়৷ গতবছর যারা অ্যাসাইলামের আবেদন করেছেন, তাদের অনেকেই তার আগেই জার্মানিতে এসেছেন - কিন্তু কোনো কারণে বিধিবদ্ধভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দিতে পারেননি৷ জার্মান সরকারের ইলেকট্রনিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম দেখাচ্ছে, ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ২ লাখ ৭২ হাজার উদ্বাস্তু বা বহিরাগত জার্মানিতে পৌঁছান৷
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ বলছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ এর সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে মোট ৫৯,৬৮০টি আবেদন পড়েছে৷ মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল ৫৮,৩১৫, অর্থাৎ ১,৩৬৫টি কম৷
ছবি: Brian Leli
শীর্ষে সিরিয়া
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ ২৫,৭৯১ জন৷ অবশ্য মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ বেশি৷ ২৭,৮৭৮ জন৷
ছবি: Fotolia
প্রথম চার মাসেও শীর্ষে সিরিয়া
২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৮২৬ জন সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ আর সব দেশ মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৯৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
ইরাকিদের সংখ্যা বেড়েছে
মোট হিসেবে সিরিয়ার পরেই আছে ইরাক৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলের চেয়ে মার্চে বেশি হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলেই বেশি ইরাকি আবেদন করেছেন৷ ৯,৫০৫ জন৷ মার্চে ছিল ৮,৯৮২ জন৷
ছবি: DW/R. Shirmohammadi
তৃতীয় স্থানে আফগানিস্থান
সিরিয়া ও ইরাকের পর তালিকায় তিন নম্বরে আছে আফগানিস্তান৷ এপ্রিলে ৮,৪৫৮ জন আফগান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ মার্চ মাসের চেয়ে সংখ্যাটি ১১.৮ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/Omid
জাতীয়তা জানা নেই
জাতীয়তা ‘অস্পষ্ট’ এমন আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলে ছিল ১,২৯৯ জন৷ সংখ্যাটি মার্চ মাসে ছিল আরও বেশি৷ ১,৮৬৯ জন৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
পাঁচ নম্বরে ইরান
১,৯৮১ আবেদন নিয়ে তালিকায় ইরানের নাম আছে পাঁচ নম্বরে৷ ছয়-এ আছে আলবেনিয়া (১,১৮৮ জন)৷ পাকিস্তানি আবেদনের সংখ্যা ১,০৩৮; আর ইরিত্রিয়ার ১,১৫২৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
7 ছবি1 | 7
উল্লেখিত সময়ে ইটালি ৬৮ হাজার অ্যাসাইলামের আবেদন প্রক্রিয়াজাত করেছে৷ অপরদিকে জমা পড়েছে প্রায় ৮৫ হাজার অ্যাসাইলামের আবেদন৷ ফ্রান্সও ঐ সময়ে ৬৩ হাজার অ্যাসাইলামের আবেদন প্রক্রিয়াজাত করে৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের ক্ষেত্রে ইটালি দ্বিতীয় স্থানে হলেও, তার সংখ্যা জার্মানির ছয় ভাগের এক ভাগেরও কম৷
ডেনমার্কেআবেদন কমেছে নাটকীয়ভাবে: ২০১৫-য় যা ছিল ২১ হাজার, ২০১৬-র প্রথম নয় মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার তিনশ'য়৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়াজাত, অর্থাৎ বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন স্থানে গ্রিস, যেখানে ৩০ হাজার অ্যাসাইলামের আবেদন জমা পড়লেও, মাত্র সাত হাজার ছয়শ' আবেদন বিবেচনা করা হয়েছে৷
তবে গ্রিসের ক্ষেত্রে এটা বলা দরকার যে, মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপ অভিমুখে ‘বলকান রুট' বন্ধ হয়ে যাবার পর প্রায় ৫০ হাজার অভিবাসন প্রয়াসী এখনও গ্রিসের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে আটকা পড়ে রয়েছেন ও তাদের জীবনধারণের ব্যবস্থা করতে ঋণগ্রস্ত দেশটি হিমশিম খাচ্ছে৷
ইউরোপীয় পর্যায়ে অ্যাসাইলামের পরিসংখ্যান জার্মানিতে প্রথম প্রকাশ করে ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকা৷ জার্মান সংসদের এক উপসভাপতি ইওহানেস জিংহামার পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘‘ইউরোপ দক্ষিণের দেশগুলি থেকে উদ্বাস্তু নেওয়ার দায় অন্যের কাঁধে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে যেমন শোনা যায়, এই সব পরিসংখ্যান তা ভুল প্রমাণ করে৷'' অপরদিকে এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দেয় যে, ‘‘জার্মানিতে উদ্বাস্তু সংকটের সমাধান হয়নি'', বলেন জিংহামার৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, কেএনএ)
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷