বিশ্বের প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ এখনো দাসত্বের শৃঙ্খলে৷ ‘আধুনিক ক্রীতদাস' সবচেয়ে বেশি ভারতে৷ তবে জনসংখ্যার আনুপাতে সবচেয়ে বেশি উত্তর কোরিয়ায়৷ বাংলাদেশেও এমন মানুষ আছে প্রায় ১৫ লাখ৷ এক গবেষণা জানাচ্ছে এসব তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ‘ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন' জানিয়েছে, গোটা বিশ্বে ৪৬ মিলিয়ন মানুষকে জোর করে শ্রমিক, যৌনকর্মী কিংবা দাসের মতো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ‘২০১৬ বৈশ্বিক দাসত্ব ইনডেক্স' প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আগে যতটা ধারণা করা হয়েছিল, তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখনো দাসত্বের শিকার, আর তাদের দুই-তৃতীয়াংশের বাস এশিয়াতে৷
ইনডেক্সে ‘আধুনিক দাসত্ব' বলতে বোঝানো হয়েছে মানব পাচার, জোরপূর্বক শ্রম, ঋন দাসত্ব, ‘সেক্স ট্রাফিকিং', জোরপূর্বক বিবাহ এবং এধরনের অন্যান্য কর্মকাণ্ডকে৷
ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারতে সংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ঊনিশ মিলিয়ন মানুষ এখনো‘আধুনিক দাসত্বের' শিকলে বন্দি৷ তারপরে রয়েছে যথাক্রমে চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানের নাম৷ বাংলাদেশে দাসত্বের শিকার দেড় মিলিয়নের মতো মানুষ৷
DW Interview: Modern slavery in India's textile industry
04:10
তবে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সবার উপরে রয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির ৪.৩৭ শতাংশ মানুষ এ যুগেও প্রায় ‘দাস' হিসেবে কাজ করছেন৷ ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়া আধুনিক দাসত্ব প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, বরং রাষ্ট্র এ ধরনের কাজকে একরকম অনুমোদনই দিচ্ছে৷
তালিকায় থাকা ১৬৭টি দেশের সবকটিতে আধুনিক দাসত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তবে ইউরোপের অবস্থান তালিকার একেবারে নীচের দিকে৷ প্রতিবেদনে অবশ্য জানানো হয়েছে, জোরপূর্বক কাজ এবং যৌনশোষণের উৎস ও গন্তব্য ছিল ইউরোপ৷
উল্লেখ্য, ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের হিসেব ঠিক মিলছে না৷ তাদের হিসেবে, বিশ্বে দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা ২১ মিলিয়ন৷
এআই / এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
মাত্র কয়েক টাকার জন্য
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermann
তোয়ালে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebroker
দিনে ৬৫ টাকা
লেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnews
সস্তা শ্রম
ভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker
অমানবিক অবস্থা
২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermann
কম্বোডিয়ার পরিস্থিতি
কম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷