বিশ্বের যে দশটি দেশে সবচেয়ে বেশি ধূমপায়ী বাস করেন তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে৷ এছাড়া গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে পুরুষ ধূমপায়ীর শতকরা হারে কোনো পরিবর্তন হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট'-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে৷ কয়েকশত বিজ্ঞানীর তথ্য দিয়ে ‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজেস' শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে৷
রিপোর্টে বলা হয়, সারা বিশ্বে ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী ধূমপান৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার নাগরিক৷ ঐ চারটি দেশের ধূমপায়ী সংখ্যার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন্স, জাপান, ব্রাজিল আর জার্মানির ধূমপায়ীর সংখ্যা যোগ করলে, তা বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর সংখ্যার প্রায় সাড়ে ৬৩ শতাংশ হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়৷
উচ্চকর, প্রচারণামূলক কর্মসূচি, সতর্কতামূলক বাণী প্রচার – এ সব কারণে কয়েকটি দেশে শতকরা হিসেবে ধূমপায়ীর হার কমেছে৷ যেমন ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল – এই ২৫ বছরে ব্রাজিলে পুরুষ ধূমপায়ীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ এবং নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ১৯ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে৷ তবে বাংলাদেশে পুরুষ ধূমপায়ীর শতকরা হারে (৩৮ শতাংশ) কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ ইন্দোনেশিয়া (৪৭ শতাংশ) আর ফিলিপাইন্সেও (৩৫ শতাংশ) পরিবর্তন আসেনি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়৷
বিশ্বব্যাপী শতকরা হিসেবে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমলেও ধূমপানের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি৷ প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালে চারজন পুরুষের একজন ও ২০ জন নারীর মধ্যে একজন ধূমপান করেছে৷ ২৫ বছর আগে ১৯৯০ সালে তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন ও ১২ জন নারীর মধ্যে একজন ধূমপান করেছিলেন৷
তবে ২০১৫ সালে ধূমপানের কারণে ৬৪ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ ১৯৯০ সালের তুলনায় সংখ্যা ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি৷ বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
২০১৫ সালে ৯৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন ধূমপান করেছেন৷ ১৯৯০ সালে সংখ্যাটি ছিল ৮৭০ মিলিয়ন৷
ধূমপান কীভাবে ছাড়বেন
ধূমপান ক্ষতিকর তা সকলেই জানি৷ ধূমপান যে মস্তিষ্ককে তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে দেয় অথবা ধূমপায়ীদের যে অপারশনের আগে বেশি অ্যানেস্থেটিকের প্রয়োজন হয় – এসব হয়ত জানি না৷ সমীক্ষার মাধ্যমে এ রকমই তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bonß
সচেতন হোন, বেশি দিন বাঁচুন
যেসব পুরুষ মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংসের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাঁদের তুলনায় যাঁরা মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংস এড়িয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার খান – তাঁদের আয়ু ১৭ বছর পর্যন্ত বেশি হতে পারে৷ জানাচ্ছে জার্মানির হাইডেলব্যার্গ শহরের ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্র৷ তাদের ২২,০০০ নারী ও পুরুষকে নিয়ে করা গবেষণায় নিকোটিন সেবনের কারণে মহিলাদের গড় আয়ু সাত আর পুরুষদের নয় বছর কমে গেছে৷
ছবি: Christian Kaufmann
ধূমপায়ী শতকরা ৫০ জনেরই অপারেশন লাগে
বয়সের সাথে দৃষ্টিশক্তি কমবে, সেটাই স্বাভাবিক৷ তবে সুইডেনে দশ বছর ধরে করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যাঁরা দিনে ১৫টির বেশি সিগারেট খান, তাঁদের চোখে ছানি পড়া বা অন্যান্য সমস্যা সময়ের আগেই দেখা দেয় এবং অপারেশনও করতে হয়৷ তবে গবেষকরা জানান, ধূমপান ছেড়ে দিলেই নাকি চোখের সুস্থতা আবার ধীরে ধীরে ফিরতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/MAST
ধূমপায়ীদের অ্যানেস্থেটিক ও ব্যথার ওষুধ বেশি লাগে
তুলনামূলকভাবে ধূমপায়ীদের বেশি মাত্রায় অ্যানেস্থেটিক এবং ব্যথার ওষুধেরও প্রয়োজন হয়৷ এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল৷ ৯০ জন ধূমপায়ী নারীর জরায়ু অপারেশনের সময় দেখা গেছে যাঁরা ধূমপান করেননি তাঁদের তুলনায় যাঁরা বেশি পরিমাণে ধূমপান করেছেন, তাঁদের বেশি আর যাঁরা কিছুটা কম করেছেন, তাঁদের অনেক কম অ্যানেস্থেটিক দিতে হয়েছে৷ পেইনকিলার বা ব্যথার ওষুধের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷
ছবি: Dean Treml/Red Bull via Getty Images
দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি
ধূমপান শুধু ফুসফুসেরই ক্ষতি করে না৷ যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের চেয়ে ধূমপায়ীদের দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তিনিগুণ বেশি৷ দীর্ঘদিন ধরে করা জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷ তবে আনন্দের কথা যে, ধূমপান ছেড়ে দিলে দাঁত পড়ার ঝুঁকিও কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/contrastwerkstatt
ধূমপান মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে দেয়
বয়সের সাথে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু ধূমপান মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে৷ ৫,১০০ পুরুষ ও ২,১০০ নারীকে নিয়ে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে করা এক গবেষণায় বেরিয়ে আসা এই তথ্যটি প্রকাশ হয়েছে ‘আর্কাইভ অফ জেনারেল সাইকিয়াট্রি’ ম্যাগাজিন-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
ধূমপান ছাড়তে বন্ধু অ্যাপের সাহায্য নিন
অনেক কাজই একসাথে করলে সফলতা আসে তাড়াতাড়ি৷ সেকথা ভেবেই হয়ত সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ধূমপান ছাড়ার সহজ পন্থা হিসেবে মোবাইলে একটি ‘ইন্টারঅ্যাক্টিভ স্মোক ফ্রি বাডি অ্যাপ’ চালু করেছে৷ এই অ্যাপটি ধূমপায়ীদের মোবাইল ফোন মারফত বা মুঠোফোনের মাধ্যমেই ধূমপান ছাড়তে সহায়তা দেয়৷