কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা এখন আর মাঠে নামতে পারছেন না৷ তাঁদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ থাকলেও সেখানে শিক্ষকদের তেমন দেখা যায়নি৷ কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো?
বিজ্ঞাপন
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলার পর আন্দোলন এখন ‘ঝিমিয়ে' পড়েছে৷ এখন অন্তত ১০জন কারাগারে আছেন৷ তাঁদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে৷ আহতরা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাও পচ্ছেন না৷ আর যাতে তাঁরা রাস্তায় নামতে না পারেন তার জন্য হুমকি অব্যাহত আছে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখন সবদিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে৷ ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে. পুলিশ আটক ও গুমের হুমকি দিচ্ছে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানাভাবে হয়রানি করছে৷ এই যে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে, তার উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে জড়ো হতে না পারি৷''
‘প্রধানমন্ত্রীর কোটা তুলে দেয়ার ঘোষণার পর এই আন্দোলনের যৌক্তিতা ছিলনা’
মামুন অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ বাসায়ও থাকতে পারি না৷ গুম আর আটকের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ নারী শিক্ষার্থীদেরও ভয় দেখানো হচেছ৷ আমাদের চরম আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে৷ তারপরও আমাদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে৷''
আটক ছাত্রদের দুই দফায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ আর তাঁদের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ তাঁদের যারা আইনি সহায়তা দিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে আছেন ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভিসির বাড়িতে ২০ এপ্রিল হামলার মামলায় কোনো আসামি ছিল না৷ কিন্তু আটকদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ আর ৮ জুলাই করা পুলিশের মোটর বাইকে হামলাসহ ভাংচুরের মামলায়ও তাঁদের আসামি দেখানো হয়েছে৷ রাশেদুলকে দেখানো হয়েছে আইসিটি আইনের মামলায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘এইসব আটক এবং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়া৷ তাঁদের আটকে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে৷''
‘ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ রক্ষার জন্য ওই কথা বলছেন, ভিসি পদ এখন রাজনৈতিক’
ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত তরিকুল এবং ঢাকায় আহত নুরুল সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি৷ তাঁদের এখন ঢাকায় গোপনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷'' হাসান আল মামুন বলেন, ‘‘এখন আহতদের চিকিৎসা দেয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে৷''
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে প্রথম দফা প্রতিবাদ সমাবেশ পণ্ড করে দেয় পুলিশ৷ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শিক্ষকদের তেমন দেখা যায়নি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি প্রদিবাদ কর্মসূচিতে যাইনি, কারণ, আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর কোটা তুলে দেয়ার ঘোষণার পর এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিতা ছিল না৷ তবে তাদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ যারা হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের পিছনে বাইরে থেকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ইন্ধন থাকতে পারে৷ তবে যারা আন্দোলন করছে, তারা জঙ্গি বা জঙ্গির মতো, এটা আমার কাছে মনে হয় না৷ এটা যাঁরা বলেছেন, তাঁরাই ব্যখ্যা দিতে পারবেন৷''
"এখন সবদিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে, ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে পুলিশ গুমের হুমকি দিচ্ছে'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো তাঁদের ‘জঙ্গির মতো ' বললেও এরই মধ্যে জার্মান দূতাবাস ও মার্কিন দূতাবাস আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সমালোচনা করে নিন্দা জানিয়েছে৷ ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাঁদের পদ রক্ষার জন্য ওই কথা বলছেন বলে আমার মনে হয়, কারণ, ভিসি পদ এখন রাজনৈতিক৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া মামলা করা যায় না৷ এখানে তার ব্যত্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইন্ধন ছাড়া হয়নি৷''
সবমিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এখন চুড়ান্ত চাপে রয়েছে৷ এমনকি তাঁদের কারো কারো পরিবারকেও টার্গেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷
একনজরে কোটা সংস্কার আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়৷ দেখে নেয়া যাক আন্দোলনের খণ্ডচিত্র...
ছবি: bdnews24.com
পদযাত্রা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা কমর্সূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷
ছবি: bdnews24.com
অবস্থান কর্মসূচি
পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনরতরা৷
ছবি: bdnews24.com
দিনব্যাপী বিক্ষোভ
রোববার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকে৷ এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদেরকে বেশ কয়েকবার উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকে৷
ছবি: bdnews24.com
পুলিশের অ্যাকশন
রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে অবরোধকারীদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ৷ অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাঁদের উপর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: bdnews24.com
সংঘাত
শাহবাগ ছাড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় রাতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ চলে; পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে৷ দু’পক্ষের সংঘাত ছড়িয়ে পরে৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের বাড়িতে ভাংচুর
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুর হয়৷ বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুরের পাশাপাশি দুটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ ভাংচুর শুরুর আগে সব সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের অভিযোগ
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর প্রাণনাশের জন্যই বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ তবে তিনি আরো বলেন, এমন হামলা সাধারণ ছাত্ররা চালাতে পারে তাঁর কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷
ছবি: bdnews24.com
সমঝোতা
সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ মীমাংসাও হয়৷ ফলে আলোচনায় অংশ নেয়া নেতারা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন৷ তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলনে থাকে৷
ছবি: bdnews24
নারী অংশগ্রহণ
সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ নারী কোটা থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রচুর নারী অংশ নেন৷
ছবি: bdnews24
স্থবিরতা
ঢাকা তো বটেই পুরো দেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একে একে অচল হয়ে পড়ে৷ রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করেন৷
দেশব্যাপী আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়৷ আন্দোলনরতরা ছাত্রলীগের একাংশের নির্যাতন এবং সরকারের দুই মন্ত্রীর ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: bdnews24.com
হেনস্থার শিকার পুলিশ ও সাংবাদিক
আন্দোলন চলার সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ হেনস্থার শিকার হন৷ এখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার আন্দোলনকারীদের হাতে নাজেহাল হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
অপেক্ষা
কোটা বৈষম্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবি করে আন্দোলনকারীরা৷ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে কথা বলছেন জানালে শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর৷
ছবি: bdnews24.com
অবশেষে অপেক্ষার অবসান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরতরা তাঁর এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আনন্দ মিছিল করে৷