ছেলেটি সবে কথা বলতে শিখেছে৷ সারাক্ষণ কত কী বলতে থাকে! কিন্তু সেদিন ভয়ে কথা প্রায় বন্ধ৷ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে প্যারিসে৷ মারা গেছে ১২৯ জন৷ শুনুন সেই পরিস্থিতিতে ভীত একটি শিশু তার বাবাকে কী বলেছে, বাবা কী বলে সাহস জুগিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শিল্প-সাহিত্যের শহর থেকে প্যারিস হঠাৎই যেন হয়ে গেছে আতঙ্কের শহর, গুপ্ত ঘাতকের শহর৷ সবার মনে অশুভ শক্তির ভয়৷ না জানি কখন আবার শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ!
শিশুদেরও আনন্দ কেড়ে নিয়েছে এই ভয়৷
ইউটিউব-এর এই ভিডিওর তরুণ বাবা তাঁর আদরের সন্তানকে নিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে বের হয়েছিলেন হামলার পরের দিন৷ প্যারিস তখনো থমথমে৷ কারো মুখে কথা নেই৷ হাসি নেই৷ সব মুখ যেন শোকে পাথর৷
টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিক এক শিশুর প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে হয়ে গেলেন অবাক শ্রোতা৷
‘‘(প্যারিসে) কী হয়েছে, তা কি তুমি বোঝো? বলতে পারো, লোকগুলো কেন এমন করেছে?''
শিশুটির উত্তর, ‘‘হ্যাঁ, জানি৷ এমন করেছে, কারণ, ওরা খুব খু-উ-উ-ব খারাপ৷ খারাপ ছেলেরা মোটেই ভালো না৷ এবং আমাদের খুব সাবধান হতে হবে৷ আমাদের বাড়ি বদলাতে হবে৷''
এইটুকুতে ভয় কাটে না৷ তাই ছেলে বলে, ‘‘ কিন্তু বাবা, এখানে তো অনেক খারাপ ছেলে...৷''
- হ্যাঁ, খারাপ ছেলে তো সব জায়গাতেই আছে৷
ওদের তো বন্দুক আছে৷ ওরা তো আমাদের গুলি করে দিতে পারে, কারণ, ওরা খুব খারাপ, বাবা!
- ঠিক আছে৷ ওদের না হয় বন্দুক আছে, কিন্তু আমাদের তো ফুল আছে!
কিন্তু ফুল তো কিছু করতে পারে না৷ তারা... তারা....
- পারে তো, ফুলও কিছু করতে পারে৷ ওই যে দেখো সবাই ফুল দিচ্ছে... বন্দুকের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই ওরা ফুল দিচ্ছে৷
সবাইকে রক্ষা করার জন্য ফুল দিচ্ছে?
- ঠিক তাই...
মোমবাতিগুলোও?
- হ্যাঁ, ওইগুলো কাল যারা হারিয়ে গেছে তাঁদের স্মরণ করার জন্য দেয়া হচ্ছে৷
ফুল আর মোমবাতি আমাদের রক্ষা করার জন্য দেয়া হচ্ছে?
- হ্যাঁ৷
এই পর্যায়ে শিশুটির কাছে সাংবাদিক জানতে চান, ‘‘এখন কি তোমার একটু ভালো লাগছে?''
জবাবে শিশুটি বলে, ‘‘হ্যাঁ৷'' বাবার কথায় সাহস পেয়েছে সে, তারও তখন মনে হচ্ছে, ফুল আর মোমবাতিই সবাইকে রক্ষা করবে!
বন্দুকের নল থেকে বুলেট নয়, ফুল
যুদ্ধ অথবা বিপ্লব, শান্তি বা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম, এ সবের সঙ্গে বার বার জড়িয়ে থাকে ফুলের নাম৷ কথায় বলে, ফুলের মতো নিষ্পাপ, ফুলের মতো নরম৷ অথচ...
ছবি: AFP/Getty Images/M. Bureau
স্বাধীনতার ফুল
গোলাপ, জুঁই কিংবা কার্নেশন: বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে আসা ফুল বিশ্বশান্তির সবচেয়ে জোরালো প্রতীকগুলির মধ্যে গণ্য৷ এ বছর বার্লিনে ফ্লয়রোপ-ইন্টারফ্লোরা বিশ্বকাপের থিম ছিল মানবেতিহাসে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ফুল – যাদের মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হয় ১৯৭৪ সালে পর্তুগালের ‘‘কার্নেশন বিপ্লব’’ নামে পরিচিত শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থানের৷
ছবি: Fotolia/Hunta
কার্নেশন বিপ্লব
পর্তুগালে প্রায় ৫০বছর ধরে সামরিক শাসন চলার পর ১৯৭৪ সালে সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে উঠে আসা বিরোধীদের উদ্যোগে সে আমলে ইউরোপের প্রাচীনতম একনায়কত্বের অবসান ঘটে৷ লিসবনের মানুষ বিনা রক্তক্ষয়ের বিপ্লবকে স্বাগত জানান লাল কার্নেশন দেখিয়ে৷ শুরু হয় তৃতীয় পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্র৷
ছবি: Herve Gloaguen/Gamma-Rapho/Getty Images
টিউনিশিয়ার জুঁই ফুলের বিপ্লব
জুঁই হলো টিউনিশিয়ার জাতীয় ফুল৷ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিক্ষোভকারীরা দেশের স্বৈরাচারি শাসক জিন এল আবিদিন বেন আলি-র ২০ বছরব্যাপী শাসনের অন্ত ঘটান৷ আবিদিন সৌদি আরবে পলায়ন করতে বাধ্য হন৷
ছবি: AFP/Getty Images/F. Belaid
আরব বসন্ত
টিউনিশিয়া দিয়েই শুরু হয়েছিল ‘আরব বসন্ত’, যার ঢেউ ছড়ায় মিশর ও লিবিয়া হয়ে উত্তর আফ্রিকা তথা মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
চীনেও জুঁই ফুল
আরব বসন্তের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই হয়ত চীনে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় ২০১১ সালে৷ টিউনিশিয়ার বিপ্লবের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে বিক্ষোভকারিরা জুঁই ফুল ধারণ করেন৷ চীনা কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল: ফলের বাজারে জুঁই ফুল বিক্রি নিষিদ্ধ করা৷ এমনকি ইন্টারনেটে ‘‘জ্যাসমিন’’ বা ‘‘জুঁই ফুল’’ দিয়ে সার্চ দিলে তা-ও ব্লক করা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
জর্জিয়ার গোলাপ বিপ্লব
২০০৩ সালে জর্জিয়ার প্রতিবাদ আন্দোলনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট (এবং সাবেক সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এডুয়ার্ড শেভার্ডনাৎসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ আন্দোলনকারীরা জর্জিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের একটি উক্তিকে তাদের কর্মসূচিতে পরিণত করেছিল: ‘‘আমরা আমাদের শত্রুদের দিকে বুলেটের পরিবর্তে গোলাপ ফুল ছুঁড়ব৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Aivazov
কিরগিজস্তানের টিউলিপ বিপ্লব
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিরগিজস্তানের গণবিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট আকাইয়েভ ক্ষমতাচ্যুত হন৷ আন্দোলনকারীরা বিরোধীপক্ষের প্রতীককে তাদের হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন: পাহাড়ি টিউলিপ৷ ২০১০ সালে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অবধি কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি অস্থিতিকর থাকে৷ আজও দেশটিতে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত, বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ৷
ছবি: AFP/Getty Images/V. Drachev
অশান্ত পূর্ব ইউক্রেন
দৃশ্যটি পূর্ব ইউক্রেনের হলেও, সংশ্লিষ্ট এলাকায় আজও শান্তি ফেরেনি৷...