শরীর আমার, পছন্দ আমার
১৩ মে ২০২১![Symbolbild | "Antimuslimischen Rassismus"](https://static.dw.com/image/49268805_800.webp)
নারীর একখণ্ড পোশাক দিয়ে সমাজের অগ্রগগতি বা পিছিয়ে পড়ার হিসেব করাটা একটি উদ্ভট ব্যাপার৷ কোন রাষ্ট্র যখন নৈতিকতাকে সংরক্ষণ ও উজ্জীবিত করতে চায় বা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চায় প্রথমেই সে নারীর পোশাকের দিকে নজর দেয়৷
আর পুরো এই ব্যাপারটি সংস্কৃতি চালিত৷ যদি সেটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হয় তাহলে সমাজ বা কখনও আইন দিয়ে নারীদের হিজাব পরতে চাপ প্রয়োগ করা হয়৷ ইউরোপীয় দেশ হলে মুসলিম সংখ্যালঘু নারীদেরকে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়৷ কী পরবে আর কী পরবে না সেটি নিয়ে সব সময়ই নারীদের চাপে থাকতে হয়৷
বিশ্বের নেতা ও নাগরিকরা নারীর পোশাক আর জীবন আচরণকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে থাকেন, সেখানে নারীর নিজস্ব পছন্দের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে৷ অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মীয় আনুগত্য যা দিয়েই চালিত হোক না কেন তারা নারীদেরকে তাদের মতো করে রূপ দিতে চান৷
ফ্রান্সে নতুন একটি আইন পাস হয়েছে৷ এই আইন অনুযায়ী, কিছু জায়গায় কিপা, ক্রস, হেডস্কার্ফ, মাথা ঢাকার কাপড় এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক বা পোশাক পরা যাবে না৷
তবে আইনের প্রস্তাবিত একটি সংশোধনী নতুন করে বিরোধিতার মুখে পড়েছে৷ সংশোধনী অনুযায়ী, পাবলিক প্লেস বা উন্মুক্ত স্থানে নারী বা মেয়েরা হিজাব পরতে পারবে না৷ এ নিয়ে #HandsOffMyHijab (#PasToucheAMonHijab) এমন হ্যাশট্যাগে অনলাইনে প্রতিবাদ গোটা ইউরোপের মুসলিমদেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ প্রস্তাবটি নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়াটা যুক্তিযুক্ত৷ এটিকে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিতে নয় নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি আমি৷
হিজাব নিষিদ্ধ করা নতুন কোন বিষয় নয়, ইউরোপে বছরের পর বছর ধরে এই আলোচনা চলছে৷ কিন্তু হিজাব ইস্যুটিকে নারীর অধিকারের সামগ্রিক প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না৷ নারী যা ইচ্ছা পরবে সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা নারীর শরীরের উপর তার নিজের যে অধিকারের তার প্রতি ভয়ানক অসম্মান প্রদর্শনের সামিল৷
নারী কী পরবে না পরবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে পুরুষতান্ত্রিকতাকেই উস্কে দেয়া হয়৷ সেই সমাজে পুরুষতানন্ত্রিকতার অস্তিত্ব আছে কিনা এখানে তা বিবেচ্য নয়৷
একজন স্বাধীনচেতা নারী হিসেবে আরব কোন দেশের সৈকতে বিকিনি পরার বিষয়টিকে আমি স্বাভাবিক হিসেবে দেখার স্বপ্ন দেখি৷ আবার যেকেউ এমনকি ইউরোপের মানুষও নারীদের পোশাকের বিষয়ে কোন পছন্দ নির্ধারণ করে দিবে না যতক্ষণ না কারো নিরাপত্তার ক্ষতি হয়৷
সবার জন্য এক সমাধান নয়
পৃথিবীতে কোন সমস্যার একক সমাধান নেই৷ আমরা হয়ত যুক্তি দাঁড় করাতে পারি যে মুখ ঢেকে রাখা যোগাযোগ ও নিরাপত্তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ কিন্তু হেডস্কার্ফের ক্ষেত্রে এই কথাটি ঠিক নয়৷ আবার নিকাব কিন্তু হিজাব নয়৷
ফ্রান্সের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের জন্য হেডস্কার্ফ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে, এর একটি সাধারণ ভিত্তি রয়েছে বলে আমি মনে করি৷ শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জন্য হেডস্কার্ফ পরাটা আমি সঠিক বলে মনে করি না৷ এখানে সমাজ বা পারিবারিক চাপে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ঠিক হবে না৷ শিশুদের কোন নির্দিষ্ট পথের দিকে ঠেলে দেয়া উচিত না৷ পরিবারের নিজেদের বিশ্বাস শিশুদের জীবনে চাপিয়ে দেয়া উচিত না৷ কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল আইন দিয়ে সেটি নিশ্চিত করা কি ভালো কোন উপায়? যেসব শিশু অন্য ধর্মীয় প্রতীক বহন করে তাদের ক্ষেত্রেও একই আচরণ করা হবে?
আরো কিছু ন্যয়সঙ্গত যুক্তি রয়েছে৷ কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আলাদা৷ তারা কী চায় সেই বিষয়ে তথ্যের সব ধরনের সুযোগ তাদের রয়েছে বলে আমি দাবি করতে পারি৷ যদি কোন নারী বিকিনি পরার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তিনি তার পছন্দের জন্য লজ্জার শিকার হতে পারেন না৷ একই কথা প্রযোজ্য যিনি মাথা ঢাকতে চাইবেনা তার জন্যেও৷ গণতন্ত্র এবং নারীর অধিকারকে রক্ষা করতে চায় এমন প্রগতিশীল দেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমনই হওয়ার কথা৷
মানুষকে তার কাজের জন্য দায়ী হবেন, তাদের পোশাক বা পছন্দের জন্য নয়৷ একজন নারীর শরীর, সেটি ঢেকে রাখা বা না রাখার বিষয়টি সমাজের অগ্রগতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হতে পারে না৷ বরং নারীর স্বাধীনতা এবং শরীরের উপর তার অধিকার ও পছন্দকে রক্ষা করাই একটি দেশের অগ্রগতির যথাযথ মানদণ্ড৷
ব্যক্তিগতভাবে আমি হিজাব পরি না এবং পরতে চাই না৷ আমার ২০ বছরের শুরুর দিকটায় এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা এখনো তাড়া করে৷ চারপাশে যখন সবাই আমার পছন্দ নিয়ে তাদের মতামত দেয়াটাকে অধিকার মনে করে সেটা খুবই অপমানজনক৷ নারীর অধিকারে বিশ্বাসী হিসেবে যারা নারীকে বস্তু হিসেবে বিবেচনা করেন তাদেরকে আমি না বলি, এমনকি সেটা যদি তারা নারীর স্বাধীনতা প্রদর্শনের জন্যেও হাজির করতে চান তাহলেও৷
শরীর আমার, তাই পছন্দটাও আমার৷
ওয়াফা আলবাদ্রি/এফএস