1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কোচিংগুলো বন্ধ করতে হবে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ ডিসেম্বর ২০১৬

শৈশব পেরোনোর আগেই সাংবাদিকতা শুরু করেছেন শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরী৷ তাই শিশু-কিশোরদের জন্য কেমন বিনোদন দরকার এবং কী কী কারণে তা তারা পাচ্ছে না, সে সম্পর্কে তার ধারণাটা খুব স্পষ্ট৷

শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরী
শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরীছবি: DW/S. Kumar Dey

ডয়চে ভেলে: শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে শিশু সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বাংলাদেশের শিশুদের কোন দিকটা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত বলে আপনার মনে হয়?

শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরী: আমার মনে হয়, শিশুদের দু'টো দিক সবচেয়ে বেশি অবহেলিত৷ একটা দিক হলো বিনোদন এবং অপরটা আমাদের কথাকে প্রাধান্য না দেয়া৷ আমি নিজেও একজন শিশু৷ আমার মনে হয়, আমাদের কথা একেবারেই মূল্যহীন৷ আমরা আমাদের কোনো কথা বড়দের কাছে উত্থাপন করতে পারি না৷ পরিবারে যখন কথা হয়, তখন শিশুদের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়৷ একটা শিশু কী চায় সেটা সে বলতে পারে না৷ সেটা বলে দেয় বড়রা৷ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক৷ এটাকে অবহেলা মনে হয় আমার কাছে৷

পরিবার, স্কুলের শিক্ষক – সবারই নজর শিশুদের পড়ার দিকে, এই ব্যবস্থা কেমন লাগে?

অবশ্যই, আমি একজন শিশু৷ আমার মতো কিছু কিছু শিশু আছে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে চায়৷ আবার কিছু শিশু আছে যারা শুধুই পড়াশোনা করতে চায়৷ আমার মনে হয়, শুধু পড়াশোনা করলে একঘেয়েমি চলে আসে৷ তাই অর্ধেক সময় পড়াশোনা আর অর্ধেক খেলাধুলা ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়া উচিত৷ দেশের বাইরের উদাহরণ দিয়ে বলি, স্কুলের পড়াশোনা স্কুলেই শেষ হোক৷ বাকি সময়টা যেন আমরা অন্য কাজে লাগাতে পারি৷ এখন একটা কথা বলা হচ্ছে, মেয়েদের সকালে স্কুল আর ছেলেদের বিকেলে স্কুল৷ বিকেলে স্কুল করলে সে খেলাধুলা করবে কখন? আবার বিকেলে স্কুল করে কোচিংয়ে যেতে হয়৷ তাহলে সে খেলাধুলা করবে কখন?

Interview of Child Journalist Sheika Surfuddin 23.11.2016 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

শিশুদের বিষয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে তো আপনার কথা হয়৷ কী বলে তারা? তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা নিশ্চয় বলে?

অবশ্যই বলে৷ শিশুরা তাদের অধিকারের কথা সবচেয়ে বেশি বলে৷ শিশু অধিকার বাংলাদেশে বলতে গেলে খুব কম দেখা যায়৷ আমি নিজেও পত্রিকায় লিখতে গিয়ে এটা দেখি৷ সবচেয়ে বেশি হলে ১০-১২টি পত্রিকা শিশুদের নিয়ে লেখালেখি করে৷ বাকি কর্তৃপক্ষ তো শিশুদের অধিকারের কথা কিছুই বলছে না৷ আমার মতে, শিশু অধিকারটা এখন নজরদারিহীনতায় আছে৷

বর্তমানে শিশুদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম কী?

আমি নিজেই সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক বাচ্চাকে এই প্রশ্ন করেছিলাম৷ তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তুমি বিকেলে কী কর? জবাবে তারা জানায়, মাঠ আছে৷ কিন্তু সেখানে ময়লা৷ তাই মাঠে যাই না৷ ঘরেই বসে থাকি৷ শিশুরা বেশিরভাগ সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই কাটায়৷ যাদের বয়স ১২ বছরের উপরে তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশি সময় কাটায়৷ আমি নিজেও মাঠে যেতে পারি না, কারণ, মাঠে ময়লা৷ তাই আমি বাসায় ক্রিকেট খেলা দেখি৷ যখন ক্রিকেট থাকে না, তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় কাটাই৷ গলির রাস্তায় খেলতে গেলেও বড়ভাইরা খেলতে দেয় না৷ আর স্কুলের যত অনুষ্ঠান সেটা অডিটোরিয়ামে না হয়ে মাঠে হয়৷ সে কারণে মাঠেও যাওয়া যায় না৷ আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অধিকাংশ শিশুই টিভি চ্যানেলের সামনে বসে থাকে৷ টিভিতে কী চলছে? বিদেশি কার্টুন৷ তখন সে বিদেশি ভাষা শিখছে, বিদেশি সংস্কৃতি শিখছে৷ অনেক সময় শিশুরা এটাও দেখার সুযোগ পায় না৷ তখন তারা বাবা বা মায়ের সঙ্গে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে৷ এটা দেখে সে হিন্দি শিখছে, তাদের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে৷

বাংলাদেশে কি শিশুদের বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে বলে তোমার মনে হয়?

আমার মতে, ঢাকায় কিছুটা থাকলেও ঢাকার বাইরে তেমনটা নেই৷ শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা শিশুদেরই তৈরি করে নিতে হয়৷ বড়রা সহযোগিতা করে না৷ কেউ ঘুড়ি বানিয়ে মাঠে উড়ায়৷ ঘুড়ি তো আর সব সময় উড়ানো যায় না৷ একটা নির্দিষ্ট সময়ে উড়াতে হয়৷ আমি বলতে চাচ্ছি, শিশুদের পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে৷ রাজধানীতে দেখা যায় শিশু পার্ক বয়স্ক পার্ক হয়ে গেছে৷ রমনা পার্কে গেলাম রাইটগুলো ব্যবহার করব, তখন দেখলাম তরুন-তরুণীরা সেটা ব্যবহার করছে৷ আরেকটা কথা, আমি রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাঠ ঘুরে দেখেছি৷ বিকেলে গিয়ে দেখি মাঠগুলো বন্ধ৷ কেন? বিকেলে স্কুল বন্ধ তাই মাঠও বন্ধ৷ ফলে তারা ঘরে বসে থাকে৷ এখন শিশুদের পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে৷ মাঠগুলো বন্ধ থাকায় তারা সিনেমা হলে গিয়ে ইংলিশ মুভি দেখছে৷ ফলে স্কুলের দিক থেকেও শিশু বিনোদনের দিকটা অবহেলিত হয়ে আসছে৷

একটা শিশু বিনোদনের জন্য মা-বাবার কাছে কী প্রত্যাশা করে?

আমি বাবা-মায়ের কাছে একটা জিনিসই চাই যে, তারা যেন আমার সঙ্গে একটু সময় কাটায়৷ বাবা-মা বাইরে বাইরে থাকেন৷ শুধু আমার ক্ষেত্রে না, অনেকের ক্ষেত্রেই এটা হচ্ছে৷ আমার বাবা যেমন চট্টগ্রামে থাকেন৷ আর মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন৷ মা যখন আমার সঙ্গে কথা বলে তখন আমার খুব ভালো লাগে৷ আমার বন্ধুদের কথা আমি জানি, এক বন্ধুর বাবা-মা দু'জনই চাকরি করেন৷ ফলে সে ঘরে একা একা থাকে৷ সে তার মনের কথাগুলো কারো কাছে বলতে পারে না৷ তাই আমার মতে, প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো৷

আগে শিশুদের বিনোদনের যে মাধ্যম ছিল, আর এখন যে মাধ্যম, তার মধ্যে তুমি কি কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করো?

কিছু পরিবর্তন তো আমি অবশ্যই লক্ষ্য করি৷ এখন শিশুরা কম্পিউটারে গেম খেলে৷ আর টেলিভিশনগুলোতে তো আগের মতো কোনো প্রোগ্রাম হয় না৷ আগে সপ্তাহে শিশুদের কিছু অনুষ্ঠান পাওয়া যেত এখন সেগুলো আর দেখা যায় না৷ এখন টিভিতে নতুন নতুন সিরিয়াল বা মেগাসিরিয়াল দেখানো হচ্ছে৷ ফলে শিশুরা বাধ্য হয়ে বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখছে৷ আমার মতে, প্রযুক্তির কারণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে৷

বিনোদনের বর্তমান মাধ্যম কি শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করছে? তুমি কী মনে কর?

অবশ্যই না৷ কিছুক্ষণ আগেই আমি উদাহরণ দিলাম৷ শিশুরা গেমস খেলছে৷ কী গেমস খেলছে? একটা লোক আরেকটা লোককে মারছে৷ একটা শিশু যখন গেমসের মাধ্যমে আরেকজনকে মারবে তখন তার মধ্যে একটা ইচ্ছে তৈরি হয়, আমি বড় হয়ে এই ধরনের কিছু করব৷ এইভাবেই নিজেকে তৈরি করব৷ এই দিকেই তারা ধাবিত হচ্ছে৷

সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে তোমার প্রত্যাশা কী?

আমার প্রত্যশা হচ্ছে, সবার আগে বাংলাদেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিতে হবে৷ দেখেন এখনকী পরিমাণে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে...! সবাই বলছে সরকার পারছে না, কিন্তু এটা তো করছে কোচিং সেন্টারগুলো৷ একটা সত্য কথা বলতে চাই, আমাদের শিক্ষকরাই হলের মধ্যে ক্ষুদেবার্তা বা চিরকুটের মাধ্যমে শিশুদের উত্তরগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ এখানে সরকারের কোথায় দোষ? কোচিং সেন্টারগুলোর কারণে আমরা বিনোদনের সময় পাচ্ছি না৷ ঐ সময়টা আমাদের কোচিং সেন্টারে যেতে হয়৷ কোচিং সেন্টারের কারণে আমাদের মধ্যে শিক্ষকদের সম্মান করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে৷ আমাদের এটা চলে যাচ্ছে টাকার উপর৷ আমার একজন স্যার সেদিন নিজেই বললেন, আমি যদি তোদের কোচিং না করাতাম তাহলে তোরা আমাকে সম্মান করতি৷ টাকা দিয়ে কোচিং করার কারণে তোরা আমাকে সম্মান করিস না৷ এ জন্য সব শিশু ও শিক্ষার্থীদের বলব, আমি কোনো কোচিং সেন্টারে যাই না, তোমরাও কোনো কোচিং সেন্টারে যেও না৷ ক্লাসে মনোযোগ দাও৷ আর সরকারকে বলব, ২০১২ সালে কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে যে আইন করা হয়েছিল সেই আইনটি যেন বাস্তবায়ন করে৷ এই আইনটা আইনই রয়ে গেছে, বাস্তবায়ন করা হয়নি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ