তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নেয়া কার্যক্রম এবং অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও আইএলও৷ তবে অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের সুবিধা, শ্রম আইনের ফের সংশোধন ও শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ তাদের৷
বিজ্ঞাপন
সিদ্দিকুর রহমান
বাংলাদেশ সরকার, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর, এমন অভিমত জানিয়েছেন ইউরোপ, অ্যামেরিকা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও এবং ‘সাসটেনেবিলিটি কমপ্যাক্ট'-এর নেতৃবৃন্দ৷ তাঁরা এর সঙ্গে বাংলাদেশে শ্রমিকদের জীবনমানেরও উন্নয়ন চান৷
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী দফায় দফায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকের পর বিজিএমই-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইউরোপ-অ্যামেরিকা ও আইএলও মূলত আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়টি জানতে চেয়েছে৷ আমাদের নেয়া পদক্ষেপে তারা খুবই সন্তুষ্ট৷''
ট্রেড ইউনিয়নের অগ্রগতির ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন তো আমরা করে দিতে পারি না৷ আমাদের শ্রমিকদের অধিকাংশই গ্রাম থেকে এসেছে৷ সেখানে তারা খুবই কষ্টে দিনপার করেছে৷ এখানে এসে ভালো পরিবেশ পেয়েছে৷ ফলে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না৷ কেউ করতে চাইলে আমরা তো বাধা দেই না৷ আসলে এটা তো তাদেরকেই করতে হবে৷''
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ছবি: DW/S. Burman
10 ছবি1 | 10
গত দুই বছরে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে সরকার ও মালিকপক্ষের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকের ন্যায্য দামের দাবিও এসেছে বৈঠক থেকে৷ সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিকরা সবাই একযোগে এই দাবি তুলেছেন৷ তাঁরা বলেছেন, সস্তায় পোশাক কেনার চিন্তা করে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করা যায় না৷ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের পোশাকেরও ন্যায্য মূল্য দিতে হবে৷
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা কর্ম পরিবেশের উন্নতি করেছে৷ তবে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে যতটা এগোনির কথা ছিল সেই পরিমাণ এগোয়নি...৷ ট্রেড ইউনিয়ন করতে আইএলও এবং আমাদের সরকারকে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ তবে একটা কথা সত্য যে, পোশাকের দাম না বাড়ালে হবে না৷ সেটাও আমরা বলেছি৷''
সিদ্দিকুর রহমান
দিনব্যাপী বৈঠক ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে উভয় পক্ষ একটি যৌথ ঘোষণা উপস্থাপন করে৷ রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই যৌথ ঘোষণা উপস্থাপন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷ এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফরকারী দলের প্রধান সান্ড্রা গ্যালিনা, মার্কিন দলের প্রধান মাইকেল জে ডিলেনি, আইএলও-র প্রতিনিধি ড্যান কুনিয়া এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াউদঁ, আইএলও-র কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিভাস রেড্ডিসহ পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ব্রাসেলস সভার পর শ্রম নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ৷ এটি চলমান রাখতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ঐক্যবদ্ধ থাকবে৷ তবে ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ করা, সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো, লোকবল নিয়োগের বিষয়ে উভয়ে একমত হয়েছে৷ নির্ভয়ে শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করতে আইএলও-র নীতিমালা অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধির সংশোধনের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের কারখানা পরীক্ষা ও সংস্কার নিশ্চিত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া৷
বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রগতি স্বীকার করেন মাইকেল ডিলেনিও৷ তিনি বলেন, এই ইস্যুটি এখন আর বাংলাদেশের নয়৷ এটি গ্লোবাল ইস্যু৷ তবে অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারসহ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা, শ্রম আইনের যথাযত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউরোপ-অ্যামেরিকা সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে৷ আগামী বছরের শুরুতে আবারো এর পর্যালোচনা হবে৷
পোশাক শিল্পে শ্রমশোষণ: ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশ
দু মুঠো অন্নের সংস্থান করতে রানা প্লাজায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন এগোরো শ-রও বেশি মানুষ৷ যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের অনেকেরই বাকি জীবন কাটবে দুর্বিষহ কষ্টে৷ পোশাক শ্রমিকদের জীবনের এই নির্মমতার ইতিহাস কিন্তু অনেক দীর্ঘ৷
ছবি: DW/M. Mohseni
বৈশ্বিক শিল্প
প্রতিটি পোশাকে মিশে থাকে শ্রমিকের শ্রম-রক্ত-ঘাম৷ ১৯৭০-এর দশক থেকে ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো এশিয়া আর ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিছু দেশ থেকে পোশাক কিনতে শুরু করে৷ খুব কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে দাম পড়ে কম, লাভ হয় বেশি৷ এমন সুযোগ ছাড়ে তারা! কম টাকায় পণ্য কিনবেন, ছবির মতো পোশক তৈরি হবে মিষ্টির দোকানে – তারপর আবার শ্রমিকের অধিকাররক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধ করবেন – তাও কি হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য পোশাক
বড় আঙ্গিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোশাক তৈরি প্রথম শুরু হয়েছিল ব্রিটেনে, অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই শিল্পবিপ্লবের সময়টাতে৷ এখন বিশ্বাস করতে অনেকের হয়ত কষ্ট হবে, তবে ইতিহাস বলছে, শিল্পবিপ্লবের ওই প্রহরে ব্রিটেনের লন্ডন আর ম্যানচেস্টারও শ্রমিকদের জন্য ছিল আজকের ঢাকার মতো৷ শতাধিক কারখানা ছিল দুটি শহরে৷ শিশুশ্রম, অনির্ধারিত কর্মঘণ্টার সুবিধাভোগ, অল্প মজুরি, কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ – সবই ছিল সেখানে৷
ছবি: gemeinfrei
সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন কর্তৃত্বে
যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাকশ্রমিকরা স্বর্গসুখে ছিলেন না সব সময়৷ সেখানেও এক সময় কারখানায় আগুন লাগলে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ভেতরে রেখেই সদর দরজায় তালা লাগাতো৷ ১৯১১ সালে তাই নিউ ইয়র্কের ট্রায়াঙ্গেল শার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরিতে পুড়ে মরেছিল ১৪৬ জন শ্রমিক৷ মৃতদের অধিকাংশই ছিলেন নারী৷ মজুরি, কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা – কোনো কিছুই এশিয়ার এখনকার কারখানাগুলোর চেয়ে ভালো ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোশাক শিল্পে চীন বিপ্লব
পোশাক রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে চলছে সবচেয়ে কম খরচে পোশাক তৈরির প্রতিযোগিতা৷ রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে চীনের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ রপ্তানি সবচেয়ে বেশি, শ্রমিকদের মজুরিও খুব ভালো৷ চীনে একজন পোশাক শ্রমিক এখন মাস শেষে ৩৭০ ইউরো, অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭ হাজার টাকার মতো পেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শ্রমশোষণ কাকে বলে...
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর সুমাংগলি৷ তামিল শব্দ ‘সুমাংগলি’-র অর্থ, ‘যে নববধু সম্পদ বয়ে আনে’৷ এলাকায় পোশাক এবং সুতা তৈরির প্রশিক্ষণের নামে খাটানো হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মেয়েকে৷ দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা হাতে পান ৬০ ইউরো সেন্ট, অর্থাৎ বাংলাদেশের মুদ্রায় ৬০ টাকা৷ সে হিসেবে মাস শেষে পান ১৮০০ টাকা৷ টাকাটা তাঁদের খুব দরকার৷ বিয়ের সময় বাবাকে তো যৌতুক দিতে হবে!
ছবি: picture-alliance/Godong
অধিকার আদায়ের করুণ সংগ্রাম
কম্বোডিয়াতেও অবস্থা খুব খারাপ৷ ৩ লক্ষের মতো পোশাক শ্রমিক আছে সে দেশে৷ কাজের পরিবেশ আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন? মাসিক বেতন মাত্র ৫০ ইউরো, অর্থাৎ বাংলাদেশের মুদ্রায় বড় জোর ৫ হাজার টাকা৷ মালিকের কাছে শ্রমিকদের মানুষের মর্যাদা প্রাপ্তি সৌভাগ্যের ব্যাপার৷ মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মিছিলে নেমে শ্রমিকরা মালিকপক্ষের গুলিতে মরেছেন – এমন দৃষ্টান্তও আছে সেখানে৷
ছবি: Reuters
ট্র্যাজেডি
গত ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসে পড়ায় মারা যান ১১শ-রও বেশি তৈরি পোশাককর্মী৷ দেয়ালে ফাটল ধরার পরও সেখানে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এতগুলো জীবন শেষ হওয়াকে বিশ্বের কোনো দেশই ভালো চোখে দেখেনি৷ ঘটনার পর জার্মানির এইচঅ্যান্ডএম, কেআইকে এবং মেট্রোসহ বিশ্বের ৮০টির মতো পোশাক কোম্পানি শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পোশাক রপ্তানিকারী কারখানাগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷
ছবি: Reuters
আলোয় ঢাকা আঁধার
অভিজাত বিপণিবিতান কিংবা দোকানের পরিপাটি পরিবেশে ঝলমলে আলোয় ঝিকমিক করে থরে থরে সাজানো বাহারি সব পোশাক৷ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়৷ ক্রেতাদের ক’জনের মনে পড়ে রানা প্লাজা কিংবা অতীতের ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্যাহতদের কথা?