মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ইয়াহু মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে লক্ষ-কোটি ইমেল স্ক্যান করেছে৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালে ঘটেছে বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দৃশ্যত মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যে সব শব্দসমষ্টি, সংখ্যা ও অক্ষরের ফিরিস্তি দিয়েছিলেন, ইয়াহু তার গ্রাহকদের ই-মেলে তার খোঁজ করার জন্য একটি প্রোগ্রাম সৃষ্টি করে৷ ইয়াহুর তিনজন সাবেক কর্মচারী ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন যে, এভাবে কোটি কোটি ই-মেল অ্যাকাউন্টে আড়ি পাতা হয়ে থাকতে পারে৷ খবরটা ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি৷
ইয়াহু মঙ্গলবার প্রকাশিত হওয়া খবরটির সত্যতা অস্বীকার করেনি৷ কোম্পানির বিবৃতিতে শুধু বলা হয়েছে, ইয়াহু ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে চলে''৷ রয়টার্সের সূত্ররা বলেছেন যে, ইয়াহুর সিইও মারিসা মায়ার ও কোম্পানির কৌঁসুলি রন বেল যে কোম্পানির সিকিউরিটি টিমকে এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট করেননি, সে ব্যাপারে কিছু কিছু কর্মচারী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ বরং ইয়াহু তার ই-মেল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি প্রোগ্রাম লিখতে বলে, যা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নির্দিষ্ট অক্ষর সমষ্টি সম্বলিত ই-মেলগুলিকে রিমোট রিট্রিভ্যালের জন্য আলাদা করে রাখবে৷
ইয়াহুর সিকিউরিটি টিম ২০১৫ সালের মে মাসে প্রোগ্রামটি আবিষ্কার করে৷ কর্মচারীরা গোড়ায় ভেবেছিলেন যে, হ্যাকাররা হ্যাক করেছে৷ ই-মেলে নজর রাখা নিয়ে নাকি সিইও মায়ার ও সিকিউরিটি প্রধান অ্যালেক্স স্ট্যামোসের মধ্যে মনোমালিন্যও হয়৷ স্ট্যামোস নাকি বলেছিলেন যে, হ্যাকাররা ই-মেলগুলির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে৷ স্ট্যামোস ইয়াহু ছেড়ে ফেসবুকে যোগ দেন ২০১৫ সালের জুন মাসে৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এখনই কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে৷ এনএসএ অনুরূপভাবে নীরব৷ মার্কিন ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভেইল্যান্স অ্যাক্ট বা ফিসায় ২০০৮ সালে যে সংশোধন সংযোজিত হয়, তা অনুযায়ী সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মার্কিন টেলিফোন ও সেবাদাতাদের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের গ্রাহকদের তথ্য সরবরাহ করতে বলতে পারে৷ ২০১৩ সালে হুইসেলব্লোয়ার অ্যাডওয়ার্ড জয়ী স্নোডেন এই মার্কিন ‘সার্ভেইল্যান্স' বা আড়ি পাতা সম্পর্কে নানা তথ্য ফাঁস করার পর মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু কিছু নজরদারি প্রোগ্রাম কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়৷ তবে টেক কোম্পানিরা যেমন এনক্রিপশন বাড়াচ্ছে, সেই অনুপাতে সরকারি তরফে তথ্য প্রদানের নির্দেশ বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা৷ ইয়াহুর আড়ি পাতার খবর ফাঁস হওয়ার পর স্নোডেনের টুইটটি অনুধাবনযোগ্য৷
বারাক ওবামা বার্লিনে সাংবাদিকদের বলেন যে, এনএসএ সাধারণ মানুষের ই-মেল ঘেঁটে দেখছে না - এই ছিল ব্রিটিশ ‘দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকার খবর৷ মঙ্গলবারের তারিখে স্নোডেনের টুইট: ‘কেউ কি প্রেসিডেন্টকে আজকের খবরটা পড়ে দেখতে বলেতে পারেন?'