টেলিভিশন দেখেন অথচ মিকি মাউস কোনোদিন দেখেননি এমন মানুষ কি আছে কোথাও? তাঁরা কি প্রাণ খুলে হাসতে পারেন? নির্মল আনন্দের জন্য ছেলে-বুড়ো সবার কাছে মিকি মাউসের চেয়ে বেশি প্রিয় বেশি কিছু কি আছে পৃথিবীতে?
বিজ্ঞাপন
ওয়াল্ট ডিজনির কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি ‘মিকি মাউস'৷ ১৯২৮ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ কার্টুন জগতের এই নায়কের৷ ৮৭ বছরে জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি৷ পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতি দিন এখনো কোটি কোটি মানুষ মিকি মাউস দেখে প্রাণ খুলে হাসে, অপার আনন্দে ভাসে৷
মিকি মাউস নিয়ে কেন এত হাসাহাসি? ওয়াল্ট ডিজনি বলেছিলেন, মিকিও স্বভাবে মানুষের মতো আর তাই নাকি সবাই মিকি মাউস দেখে এত হাসে৷ ডিজনির মতে, মানুষের মতো হয়ে মানুষের মনে মিশে যায় বলেই মিকি মাউস এত জনপ্রিয়৷
ইউটিউবের এই ভিডিওটি মিকি মাউসের তুমুল জনপ্রিয়তারই ছোট্ট একটা নিদর্শন৷ তিন বছর আগে আপলোড করা হয় ‘মিকি মাউস ক্লাব হাউস'-এর ৪ মিনিট ১৮ সেকেণ্ডের এই এই ভিডিও৷ এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৮৮ লক্ষ ৪১ হাজার ১৫৩ বার দেখা হয়্ছেে ভিডিওটি৷
ডিজনিল্যান্ডের ইতিহাস
ওয়াল্ট ডিজনির স্বপ্ন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের স্থান গড়ে তোলা৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ ১৯৫৫ সালে তিনি একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তোলেন৷ ৬০ বছর পরেও লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই মনোরঞ্জন মন্দির দেখতে আসছে৷
আসলে উলটোটাই ঠিক৷ অ্যানিমেশন জগতের জাদুকর ওয়াল্ট ডিজনি (১৯০১-১৯৬৬) গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকেই মানুষের মনোরঞ্জনের চাবিকাঠি খুঁজে পেয়েছিলেন৷ রূপকথার চরিত্রদের হাত ধরে কল্পনার জগতে ডুব দেওয়ার অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি – যেমন ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ গল্পের খরগোসের সঙ্গে৷
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কাছে ৩৫ হেক্টর চাষের জমিতে মিকি মাউসের স্রষ্টা এক স্বপ্নলোক গড়ে তোলেন৷ তারপর গোটা বিশ্বে তার আদলে আরও ১৩টি ডিজনি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তোলা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৫৫ সালের ১৭ই জুন উদ্বোধন
সেই রবিবার আবালবৃদ্ধবনিতা কেল্লার মধ্য দিয়ে এক অজানা, অচেনা জগতে প্রবেশ করে...
ছবি: picture-alliance/AP
৬০ বছর পর
আজও প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ আকর্ষণ করে ডিজনিল্যান্ড৷ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এই আকর্ষণ৷ প্রতিদ্বন্দ্বীরাও একই পরিবারের – ফ্লোরিডার ডিজনি ওয়ার্ল্ড (১ কোটি ৯০ লক্ষ দর্শক) এবং জাপানের টোকিও শহরের ডিজনিল্যান্ড (১ কোটি ৭০ লক্ষ দর্শক)৷
কেউ কেউ বার বার ফিরে আসে৷ যেমন ক্যালিফোর্নিয়ারই বাসিন্দা ডুগ মার্শ৷ ১৯৯০ সাল থেকে তিনি ২,০০০ বার ডিজনিল্যান্ডে ঢুঁ মেরেছেন৷ আগে তো প্রতি দিনই যেতেন৷ এখন ৫৭ বছর বয়সে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর সেদিকে ছোটেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Munker
মায়াবী জগতের বিপণন
শুধু ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৫০০-রও বেশি নতুন সুভেনির উৎপাদন করা হয়েছে৷ প্রায় ২৩ ইউরো দামের আলো বসানো মিনি মাউসের কান থেকে শুরু করে ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি ডিজনিল্যান্ডের কেল্লার ক্ষুদ্র সংস্করণ – যার দাম প্রায় ৩৪,০০০ ইউরো৷ সে তুলনায় প্রবেশ মূল্য কী আর বেশি! সারাদিনের টিকিটের দাম ১০০ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/Christian Ender
মজা আর টানটান উত্তেজনা ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকা
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক চালায় ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি৷ ধীরে ধীরে সেটি বিশাল রূপ নিয়েছে৷ গত বছর লেনদেনের মাত্রা ছিল ৪ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার৷ পার্ক ছাড়াও কোম্পানি টেলিভিশনে ডিজনি চ্যানেল চালায়৷ এছাড়া ডিজনিরই পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রে বড় নাম৷ ডিজনিল্যান্ডের আরো স্বাদ পেতে উপরে ডানদিকের লিংক ক্লিক করুন
ছবি: Getty Images/Disneyland/P. Hilffmeyer
7 ছবি1 | 7
সবাই যে শুধু মজা করার জন্য দেখেছেন বা ঘরের ছোটমনিদের দেখিয়েছেন তা-ও কিন্তু নয়৷ মিকি মাউস এখন শিশুর বিকাশ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ মিকি মাউস ক্লাবহাউসে তো প্রতিটি পর্বে শিশুদের বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা হয়৷ ইঁদুর মহানায়ক মিকি, ইঁদুর নায়িকা মিনি, হাঁসরাজ ডোনাল্ড ডাক আর তাঁর প্রেমিকা ডেইজি ডাক-এর নানান কাণ্ডকীর্তির পরতে পরতেই তো থাকে হাসি৷ হাসতে হাসতে অনেক কিছু শিখেও নেয় শিশুরা৷
কমিকে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট
বহু দশক ধরে কমিক স্ট্রিপের একটি স্থায়ী উপজীব্য হলো: কাউবয় এবং ইন্ডিয়ান, বাইসন এবং সিক্সগান সম্বলিত ওয়াইল্ড ওয়েস্ট৷ জার্মানিতে এ ধরনের ‘ক্ল্যাসিক’ কমিক স্ট্রিপ নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলেছে৷
ছবি: Privatsammlung/Disney
অ্যাডভেঞ্চার
মার্কিন মুলুকের ‘ওয়েস্ট’, অর্থাৎ পশ্চিমাংশের খোলা-মেলা মাঠ-প্রান্তর গোটা ঊনবিংশ শতক ধরে ‘সেটলার’ বা অভিবাসীদের টেনেছে, সুদূর ইউরোপ থেকেও৷ সেই সব কাহিনি নিয়ে কমিক আঁকা শুরু হয় বিংশ শতাব্দীতে – যেমন ১৯৩৩ সালে ফ্লয়েড গটফ্রেডসন-এর আঁকা ‘পাইওনিয়ার’ মিকি মাউস৷
ছবি: Privatsammlung/Disney
দত্যি-দানব
সেটলার-রা নানা বাধাবিপত্তি, আবহাওয়ার দুর্যোগ, খিদে-তেষ্টা, রোগভোগ, হিংস্র জন্তু, সেই সঙ্গে তথাকথিত রেড ইন্ডিয়ানদের রোষ সহ্য করে এই ‘ফ্রন্টিয়ার’ অঞ্চলে বাসা বেঁধেছিলেন৷ ‘‘তার প্রথম ভাল্লুক’’ নামধারী এই ব্যঙ্গচিত্রটি এঁকেছিলেন কোনো অজ্ঞাত শিল্পী৷ কার্টুনটি প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালের ২৭শে জানুয়ারি, ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার রবিবারের সংস্করণে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
সংস্কৃতির সংঘাত
অ্যামেরিকার বহু আদি বাসিন্দার কাছে সেটলারদের আবির্ভাব বিপর্যয় ডেকে এনেছিল৷ সেটলাররা যেমন চাষের জমি, তেমনই শিকারের ক্ষেত্রে নেটিভ অ্যামেরিকান – এককালে যাদের – ভুল করেই – ইন্ডিয়ান বলা হতো, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়৷ উইন্সর ম্যাককে-র ১৯০৬ সালে আঁকা ছবিটিতে নেটিভ অ্যামেরিকানদের বন্য উপজাতি হিসেবে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
জনপ্রিয় জিমি
যে সব অলংকরণ শিল্পী কমিক ছবি এবং বই’কে জনপ্রিয় করে তোলেন, জেমস সুইনারটন (১৮৭৫-১৯৭৪) তাদের মধ্যে পড়েন৷ তাঁর ‘জিমি’ বা ‘লিটল জিমি’ পর্যায়ের কার্টুনগুলো চলেছিল ১৯০৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত৷
ছবি: Privatsammlung/James Swinnerton
কমিক-এর স্বর্ণযুগ
যুক্তরাষ্ট্রে কমিকের স্বর্ণযুগ ছিল গত শতাব্দীর বিশের ও ত্রিশের দশক৷ ওয়াল্ট ডিসনি ১৯৩০ সাল থেকে অলংকরণ শিল্পীদের কাজে লাগাতে - এবং ছাপানো কমিক থেকে নির্বাক চিত্র বানাতে শুরু করেন৷ ফ্র্যাঙ্ক কিং ছিলেন সে আমলের একজন নামকরা কার্টুনিস্ট৷ তাঁর ‘‘গ্যাসোলিন অ্যালি’’ হলো যে সব কমিক স্ট্রিপ সবচেয়ে বেশিদিন ধরে চলেছে, তাদের তালিকায় দ্বিতীয়৷ এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ সালের ২৮শে আগস্ট তারিখে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
‘ঘণ্টাখানেক পরে...’
বেলজিয়ান অলংকরণ শিল্পী এর্জ (জর্জ রেমিস, ১৯০৭-১৯৮৩) তাঁর তরুণ সাংবাদিক নায়ক টিনটিনকে নানা অ্যাডভেঞ্চারে রাশিয়া, কঙ্গো, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাল্পনিক রেডস্কিন সিটি-তেও পাঠিয়েছিলেন –- ১৯৩২ সালে৷ অ্যামেরিকায় টিনটিনের ব্ল্যাকফুট ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়৷
ছবি: Privatsammlung/Moulinsart/Hergé
কমিক থেকে ‘নিউ ইয়র্কার’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদশিল্পী
গ্যারেট প্রাইস (১৮৯৬-১৯৭৯) মাত্র কয়েক বছর ধরে কমিক এঁকেছিলেন: তাঁর ‘হোয়াইট বয়’ কমিকটি চলে মাত্র তিন বছর৷ তবুও তিনি ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার প্রচ্ছদশিল্পী হয়েছেন এবং সে’ কাজ করেছেন সত্তরের দশক অবধি৷ তাঁর ‘হোয়াইট বয়’ কমিক স্ট্রিপের এই ছবিটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালের ২৬শে আগস্ট তারিখে৷
ছবি: Privatsammlung/Garrett Price
ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’এ মধ্যযুগীয় নাইট
হ্যারল্ড ‘হ্যাল’ ফস্টার (১৮৯২-১৯৮২) প্রিন্স ভ্যালিয়ান্ট নামধারী এক মধ্যযুগীয় নাইট’কে তাঁর কমিক স্ট্রিপের নায়ক করেন৷ তাঁর এই কমিক স্ট্রিপে নেটিভ অ্যামেরিকানদের সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে৷ ছবিটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ই জুন তারিখে৷
ছবি: Privatsammlung/King Features Syndicate
মেড ইন সুইজারল্যান্ড
‘ইয়াকারি’ কমিক স্ট্রিপটির স্রষ্টা সুইজারল্যান্ডের কমিক শিল্পী ডেরিব৷ তিনি নেটিভ অ্যামেরিকান সংস্কৃতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভক্ত৷ তিনি এক ‘ইন্ডিয়ান’ কিশোরের অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে কমিক আঁকছেন ১৯৭৩ সাল থেকে৷ তাঁর স্ট্রিপে জন্তুজানোয়ার কথা বলতে পারে৷ ছবিটি ১৯৭৯ সালের৷
ছবি: Derib
আবার লাকি লিউক
১৯৪৬ সালে যার সৃষ্টি, ২০১১ সালে সেই লাকি লিউককে আবার ফিরিয়ে এনেছেন এর্ভে দারমঁতঁ৷ তবে লাকি লিউক-এর মুখে আজ সিগারেটের পরিবর্তে খড়কে কাঠি৷ কমিকে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে এপ্রিল অবধি, বন’এর কাছে ট্রয়েসডর্ফ শহরে৷ তারপর যাবে হ্যানোভারের ভিলহেল্ম বুশ মিউজিয়ামে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun/Lucky Production/Achdé