বাংলাদেশের শিশুরা ঝুঁকির মুখে আছে৷ শিশুদের বেড়ে ওঠার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় তারা শুরুতেই নানা মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে৷ তাই কখনো কখনো তারা অবসাদ ও হতাশা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনেও প্রবেশ করে৷
বিজ্ঞাপন
তাদের খেলার মাঠের জায়গা নিয়েছে এখন তথাকথিত ‘প্লে-জোন'৷ নীল আকাশ তারা দেখে না৷ ক্রিকেট, ফুটবল নয় তারা আসক্ত ভার্চুয়াল গেমে৷ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত পরিবেশে বেড়ে উঠছে এখানকার শিশুরা৷
রাজশাহী মহানগরীর উপকন্ঠ কাটাখালী পৌর এলাকায় মাসকাটাদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের সামনেই রয়েছে সবুজ মাঠ৷ কিন্তু সেই মাঠ দখল করে এখন বসানো হয়েছে হাট৷ খেলা তো দূরের কথা, হাটের হৈ চৈ আর সোরগোলে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে৷
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুর রউফ জানায়, ‘‘আমাদের স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে হাট বসানো হয়েছে৷ সবসময় হৈচৈ হয়৷ আমরা ঠিকমতো পড়তে পারি না৷ মাঠে ইট, লাঠি পোঁতার কারণে খেলতে গেলে পা মচকে যায়৷ বারান্দায় লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে৷ স্কুলে এলে আর বাইরে যেতে পারি না৷ টিফিনেও আমরা মাঠে গিয়ে খেলতে পারি না৷''
ওয়াহিদা বানুর সাক্ষাৎকার
এ প্রসঙ্গে সোনিয়া শারমিন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বাচ্চারা তো লেখাপড়া আর খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শিখবে৷ স্কুলের মাঠে সবজির হাট বসানো হয়৷ হাটের কারণে শিশুদের লেখাপড়া ভালো হয় না৷ হাটের কারণে শিশুরা খেলাধুলার মতো বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷''
ঢাকায় ৪ হাজার ২০০ শিশুকে নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবশ নেই এখানে৷ জরিপে অংশ নেয়া ৮৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় একটি খেলার মাঠ হোক৷ ৭৩ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠুক৷ ৭৬ শতাংশ শিশু বলেছে, এলাকায় শিশুপার্ক গড়ে তোলা হোক, ৬৭ শতাংশ শরীরচর্চাকেন্দ্র, ৩ শতাংশ পাঠাগার ও ২ শতাংশ চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার কথা বলেছে৷
আরেক গবেষণা প্রতিবেদনেও ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর ৬৪ শতাংশ স্কুলে খেলাধুলার কোনো ক্লাসই নেয়া হয় না৷ বেশিরভাগ স্কুলেই খেলার মাঠ নাই৷ ৬৭ শতাংশ শিশুর বাড়ির কাছাকাছি খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ নেই৷ ৩৭ শতাংশ শিশু ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করে, ২৯ শতাংশ শিশু কোনো খেলাধুলাই করে না এবং ৪৭ শতাংশ শিশু দিনে গড়ে ৩ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় টেলিভিশন দেখে কাটায়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এর ফলে নানারকম শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি শিশুরা নানা মানসিক সমস্যায়ও পড়ছে৷ তারা আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক হয়ে পড়ছে৷''
শিশুরা, বিশেষ করে শহুরে শিশুরা এখন তাই গৃহবন্দি সময় কাটায়৷ তাদের বিনোদন বলতে এখন কম্পিউটার গেম, মেবাইল ফোন গেম বা টিভি দেখা৷ ব্যাট বলের পরিবর্তে হাতে থাকে ট্যাব৷ তারা সবুজ মাঠ এখন দেখে ভার্চুয়াল জগতে৷ খেলাধুলাও সেখোনে৷
অভিভাবকরাও এত ব্যস্ত যে শিশুদের সময়ই দেননা৷ কর্মজীবী মা-বাবা শিশু দেখাশোনার ভার ছেড়ে দিয়েছেন গৃহকর্মী বা আয়াদের ওপর৷ আকাশ না দেখা শিশু বড় হচ্ছে ঘরের কোণে একাকি৷
শৈশব কি হারিয়ে যাচ্ছে?
ঢাকা-কলকাতার মধ্য বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে ক’জন আজকাল মাঠে-ময়দানে, জঙ্গলে খেলাচ্ছলে শৈশব উপভোগ করার সুযোগ পায়? জার্মানিতে শিশুদের ৬ বছরের আগে স্কুলে যাওয়া নিষেধ, অক্ষরজ্ঞান তখনই হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
ফিরিয়ে দাও শৈশব
দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার মূলমন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা৷ একেবারে ছোট বয়স থেকেই তাই চাপের শেষ নেই৷ পড়াশোনা, নাচগান, আঁকা, শরীরচর্চা, খেলাধুলা – সব কিছুতেই সেরা হয়ে ওঠার জন্য শিশুদের উপর চাপ দেওয়া হয়৷ এর পরিণাম কি ভালো হতে পারে?
ছবি: AP
সন্তান পালনে পেশাদারি সাহায্য
অন্য সব বিষয়ের মতো সন্তান পালনের ক্ষেত্রেও পুরানো অনেক ধ্যানধারণা আজ অচল হয়ে পড়েছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীরা জার্মানিতে বাবা-মায়েদের এই কাজে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করেন৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তারা সন্তান পালন সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন৷ স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাই ধাত্রীর পারিশ্রমিক দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
বাবা-মা একটু সময় দিলে
জন্মের পর শিশুর জন্য বাবা-মায়ের স্পর্শ, তাদের আদর-ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু তাদের অত সময় আছে কি? জার্মানিতে নানা মডেলের আওতায় বাবা-মা প্রথম বছরে সন্তানের সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর সুযোগ পান৷ রাষ্ট্র ও কর্মদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুঁথিগত শিক্ষার প্রস্তুতি
এক থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে জার্মানির শিশুরা সাধারণত কিন্ডারগার্টেনে যাবার সুযোগ পায়৷ কিন্তু সেখানে পুঁথিগত শিক্ষা নিষিদ্ধ৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের কাছ থেকে খেলাচ্ছলে জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নানারকম শিক্ষা পায় কচিকাচারা৷ স্কুলে যাবার আগে এই প্রস্তুতি তাদের খুব কাজে লাগে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধ
ঢাকা-কলকাতার মতো শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে অনেক শিশু সহজে মাটির সংস্পর্শে আসতে পারে না৷ জার্মানিতে শিশুদের প্রকৃতির কোলে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়৷ এমনকি কিছু এলাকায় জঙ্গলের মধ্যেই কিন্ডারগার্টেন রয়েছে৷ গাছপালা ও নানা প্রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় হয় তাদের৷
ছবি: Jens Schlueter/ddp
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
সাধারণত ৬ বছর বয়সে স্কুলে যায় জার্মানির বাচ্চারা৷ তখনই পড়াশোনা শুরু হয়৷ প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ স্কুলে আলাদা ইউনিফর্ম নেই৷ প্রথম দিনে কচিকাচাদের উপহারে ভরা এক বিশেষ ঠোঙা দেওয়ার রেওয়াজ আছে৷
ছবি: DW
পড়ার চাপ
স্কুলের পড়াশোনা স্কুলেই শেখানোর চেষ্টা করা হয়৷ বাড়িতে ফিরে কিছু হোমওয়ার্ক করলেই চলে৷ সাধারণত গৃহশিক্ষক বা কোচিং ক্লাসের প্রয়োজন পড়ে না৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা দূর করতে বাড়তি সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে৷ শিক্ষা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে বলে জার্মানিতে অনেক সংস্কার আটকে আছে বলে নানা মহলে অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: Imago/Jochen Tack
7 ছবি1 | 7
ঢাকার ৯৫ ভাগ স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই৷ কাগজে-কলমে রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের মোট ৫৪টি পার্ক ও ২৫টি খেলার মাঠ রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার৷
মাঠের অভাবের সুযোগে ঢাকায় গড়ে উঠেছে কিছু প্লে জোন নামের ভার্চুয়াল গেমের কর্নার৷ ফার্স্ট ফুডের দোকানের সঙ্গেই এগুলোর অবস্থান৷ সেই সব প্লে-জোনে ভার্চুয়াল জগতে শিশুদের বন্দুক চালানো বা কার ড্রাইভিংয়ের মতো গেমস-এ অভ্যস্ত করা হচ্ছে৷ এমন অনেক গেম আছে যা শিশুদের উপযোগীই নয়৷ শহুরে শিশুরা জাংক ফুডের সাথে গিলছে অদ্ভুত সব ভার্চুয়াল গেম৷ তৈরি হচ্ছে ব্যস্ত পৃথিবীর অনুপযোগী প্রজন্ম৷
একদিকে শিশুর যেমন খেলার মাঠ নেই, নেই হাত-পা ছুড়ে বেড়ানোর জায়গা, অন্যদিকে এই শিশুই হচ্ছে নানা নির্মমতার শিকার৷ বাংলাদেশের ৮০ ভাগ শিশুই শারীরিক শাস্তির শিকার হচ্ছে৷ তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা নিজেদের বাড়িতে এই শাস্তির শিকার হয়৷
বাংলাদেশে শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে শারীরিক শাস্তি নিয়ে ইউএনডিপি ২০১৩ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করে৷ সাক্ষাত্কার ভিত্তিক সেই জরিপে দেখা যায়৷ প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন জানিয়েছে যে তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে৷ আর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন শিশু জানায় যে তারা বাড়িতে অভিবাকদের হাতে শারীরিক শাস্তি পেয়ে থাকে৷
ইউনিসেফের জরিপ বলছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৯১ ভাগ এবং বাড়িতে শতকরা ৭১ ভাগ শিশু শারীরিক শাস্তির শিকার৷ জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে বেত বা লাঠির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে এবং ৮৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছাত্র এই বেত বা লাঠির শিকার হয়৷
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম শিশুদের অধিকার ও পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করে এরকম ২৬৭টি সংগঠনের একটি নেটওয়ার্ক৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ১০ মাসে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি শিশু৷ ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ২ হাজার ১৯৭ এবং ২০১৩ সালে ১ হাজার ১১৩ জন ছিল৷
হেলালউদ্দিনের সাক্ষাৎকার
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ'-এর প্রধান ওয়াহিদা বানু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পরিবেশকে মোটেই শিশুবান্ধব বলা চলেনা৷ এখানে শিশুদের অধিকার এবং তাদের সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য ভালো ভালো আইন আছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নাই৷ শিশুরা সবাই একই শ্রেণির নয়৷ এখানে কর্মজীবী শিশু আছে, পথ শিশু আছে, গৃহকর্মী শিশু আছে, ঝঁকিপুর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু আছে৷ রয়েছে আটিস্টিক শিশুও৷ কোনো শিশুর সুরক্ষা এবং বিকাশের জন্য কী প্রয়োজন আমরা তা সুনির্দিষ্ট করতে পারিনি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিশুর বিকাশের জন্য যে পরিবেশ এবং পারিবারিক ও সামাজিক আবহ দরকার তার যেমন অভাব, তেমনি শিশুর প্রতি নির্মমতাও সব শ্রেণির মধ্যেই দেখা যায়৷''
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের শিশু বর্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ডা. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে প্যারেন্টিং বিষয়টিই এখনো গড়ে ওঠেনি৷ আর পারিবারের বাইরের পরিবেশ তো শিশুর জন্য আরো ভয়াবহ৷ তার খেলার মাঠ নেই, বিনোদনের জায়গা নেই, বেড়ে ওঠার পরিবেশ নেই৷''
ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘এ কারণে শিশু কম্পিউটার, ভিডিও বা মোবাইল গেম খেলে সময় কাটায় ৷ টিভি দেখে৷ ফলে যা হচ্ছে, তা হলো শিশু একাকিত্বে ভুগতে ভুগতে নিজের একটা নির্জন জগৎ তৈরি করে৷ অসামাজিক হয়ে যায়৷ মিশতে পারে না৷ বাস্তব পরিবেবেশে অসহায় বোধ করে৷''
ডা. হেলাল আরো বলেন, ‘‘আমরা এখন প্রচুর শিশু পাচ্ছি, যারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত৷ এ সব শিশু কিশোররা পরবর্তীতে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনে প্রবেশ করতে পারে৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
শৈশবেই উচ্চ রক্তচাপ; অবহেলা নয়
উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়, শিশু-কিশোরদেরও হয়ে থাকে৷ তাই শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ কারণ তা না হলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক৷
ছবি: Fotolia/pete pahham
শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ?
‘শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ’ –এ দুটো শব্দ যেন একসাথে মানায় না৷ উচ্চ রক্তচাপ যেন শুধু বয়স্কদের অসুখ – এমনটা মনে করেন অনেকেই৷ তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! বলেন গ্যোটিংগেন শহরের শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিস্ট (হার্টের ডাক্তার) মার্টিন হুল্পকে-ভেটে৷
ছবি: DW
দেরিতে ধরা পড়ে
ডাক্তার হুল্পকে ভেটের কথায়, ‘‘জার্মানির শিশু-কিশোরদের মধ্যে চার থেকে পাঁচ ভাগেরই উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে অনেক দেরিতে৷’’
ছবি: DW/R. Breuer
গুরুত্ব দেওয়া হয় না
মিউনিখ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার রেনাটে ওবারহোফার বলেন, ‘‘শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ যদিও এর ফলে শিশুদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে৷ অসুখের দিক দিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক – এ দুটোই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে৷’’
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
স্কুলের স্ট্রেস
আগে শোনা যেত ‘স্ট্রেস’ শুধু বড়দের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য৷ কিন্তু আজকের দিনে সেটা আর ঠিক নয়৷ কারণ বাচ্চাদের স্কুল থকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতার যুদ্ধ, যার ফলে ওদেরও থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ৷ আর উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণই যে হলো মানসিক চাপ!
ছবি: picture-alliance/dpa
খেলাধুলা
এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা বা স্কুলের অন্যান্য চাপের পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনা বা কোনো হবি থাকা৷ যাতে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা তাদের রাগ, দুঃখ, কষ্ট ভুলে গিয়ে মাথাটাকে পুরোপুরি অন্য দিকে ঘোরাতে পারে৷
ছবি: Khaneye Koudak Teheran
খাওয়া-দাওয়া
শিশু-কিশোররা খেতে পছন্দ করে ‘পিৎসা’, তেলে ভাজা ‘ফ্রেঞ্চফ্রাই’ বা এ ধরনের নানা খাবার৷ এ সব খাবারে থাকে প্রচুর তেল এবং লবণ৷ তাছাড়া কফিনসহ এনার্জি ড্রিংক বা মিষ্টি পানীয়ও অল্পবয়সিদের বেজায় পছন্দ৷
ছবি: MEHR
উচ্চ রক্তচাপ সহজে বোঝা যায় না
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সেভাবে বোঝা যায় না৷ তবে অনেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে দেখা দেয়৷ নিজের সন্তানের এ ধরনের পরিবর্তন দেখলে মা-বাবার সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার৷
অতিরিক্ত ওজন
অনেক সময় বংশগত ধারাকে উপেক্ষা করার উপায় থাকে না – তা উচ্চ রক্তচাপই হোক বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাই হোক৷ তাই যাদের মা-বাবার অতিরিক্ত ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকে খাদ্যাভাসের দিকে নজর রাখা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ধমনীর কাঠিন্য
কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, ‘‘উচ্চ রক্তচাপের চেয়েও ধমনীর কাঠিন্য বা সমস্যা থেকে হৃদরোগ হতে পারে৷ এক্ষেত্রে ধমনী আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে৷ তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ধুমপান, ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসুখও৷
ছবি: Fraunhofer MEVIS, Bremen
কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার ভয়
উচ্চ রক্তচাপের ফলে অনেকের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ এ রকমটা হলে সারা জীবনের জন্য ডায়ালিসিসের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়৷ অথবা নিতে হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ঝুঁকি৷
ছবি: imago/imagebroker
ওষুধ
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ওষুধ সেবনও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ‘হাইপার অ্যাকটিভ’, অর্থাৎ অত্যন্ত চঞ্চল বা অশান্ত ছটফটে বাচ্চাদের কথা৷ বহুক্ষেত্রে তাদের যে সমস্ত ওষুধ দেওয়া হতে থাকে, তা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্তচাপ মাপা প্রয়োজন
‘‘যেসব বাচ্চার কিডনি, ইউরিনারি নালী এবং আয়োডিনের সমস্যা রয়েছে অথবা যারা হার্টে খুঁত নিয়ে জন্মেছে, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত চাপ মাপা প্রয়োজন৷’’ এই পরামর্শ দিয়েছেন জার্মানির শিশু-কিশোর ফেডারেল সমিতির বিশেষজ্ঞ ডা. ভল্ফরাম হার্টমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিছু নিয়ম
নিয়মিত শরীরচর্চা অনেক রোগব্যাধিকে দূরে রাখে৷ তাই শৈশবেই শরীর চর্চা ও সুষম খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন৷ বিশেষ করে যথেষ্ট কলা, বিভিন্ন বাদাম, আলু ইত্যাদি৷ অন্যদিকে লবণ জাতীয় খাবারকে না বলা দরকার৷ স্ট্রেস এড়িয়ে যোগ ব্যায়াম ও বিনোদনমূলক কোনো ব্যায়াম করাও যেতে পারে৷