অ্যামাজন রেন ফরেস্ট, সবুজ পৃথিবীর সবুজতম ফুসফুস৷ সেখানে সবুজের বদলে সোনার খোঁজ চলেছে, বেআইনিভাবে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে, ইন্ডিও উপজাতির মানুষদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায়৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের হেলিকপ্টারে করে এজেন্টদের অ্যামাজন নদীর উপত্যকায় গহীন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যের মাঝখানে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ কায়াপো ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত এলাকাটিকে বেআইনি সোনার খনির হাত থেকে বাঁচানো প্রয়োজন৷ হেলিকপ্টার থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, কোথায় কোথায় মাটি খুঁড়ে সোনার খোঁজ করা হয়েছে৷
অভিযান শুরু হল৷ এ ধরনের অপারেশন চালাতে বেশ কয়েক মাস ধরে প্ল্যানিং করতে হয়৷ এজেন্টরাও কোনোরকম খোঁজখবর না দিয়েই হানা দেন৷ সোনার খোঁজে যারা জঙ্গলের মাঝখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে, তাদের একজনকে ধরা হল৷ তার বক্তব্য, সে জানে, এটা একটি রিজার্ভ, ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা৷ সে এসেছে তার গোটা পরিবারকে নিয়ে৷ এবার কিন্তু দিন পাঁচেকের মধ্যেই তাকে এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ এবার সবই ঘটেছে কোনোরকম গোলাগুলি ছাড়া৷ সবসময় কিন্তু পরিস্থিতি এতোটা শান্তিপূর্ণ থাকে না৷
খানিক বাদেই এজেন্টরা একটি ট্রাকের খোঁজ পান৷ চালক জঙ্গলের মধ্যে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এজেন্টরা ধাওয়া করলেন৷ ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করা হল৷ তার ট্রাকে রয়েছে ৮০০ লিটার পেট্রোল; যে সব সাজসরঞ্জাম লুকিয়ে রিজার্ভে নিয়ে আসা হয়েছে, এই পেট্রোল সেই সব যন্ত্রপাতির জন্য৷ যন্ত্রপাতিগুলো এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার কোনো পন্থা না থাকলে এজেন্টরা অকুস্থলেই তা পুড়িয়ে দিতে পারেন৷
ধর্মীয় গ্রন্থে পরিবেশের কথা
ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের পবিত্র গ্রন্থেই পরিবেশ রক্ষার জন্য অনুসারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথাই৷
ছবি: Jody McIntryre / CC-BY-SA-2.0
ঈশ্বরের সৃষ্টিকে রক্ষা
বাইবেলের প্রথম বই ‘জেনেসিস’এ বলা আছে, ঈশ্বর আদম আর ঈভকে ‘গার্ডেন অফ ইডেন’ অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের বাগান’ বলে যেটা পরিচিত, সেখানে পাঠিয়ে বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷
ছবি: Jonathan Linczak / CC BY-NC-SA 2.0
ধর্মীয় বেস্টসেলার
বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার পঠিত ও প্রকাশিত বই খ্রিস্টানদের বাইবেল৷ এই বইয়ে সৃষ্টিজগতের কথা বেশ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ছবি: Axel Warnstedt
বাইবেল এর সবচেয়ে পরিচিত শ্লোক বা পঙক্তি
ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন এবং বলেন: ‘‘ফলপ্রসু হও এবং সংখ্যায় বেড়ে ওঠ৷ পৃথিবীকে ভরিয়ে দাও ও তাকে নিয়ন্ত্রণে আনো৷ সাগরের মাছ, আকাশের পাখি আর ভূমিতে যত জীবন্ত প্রাণী আছে তাদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কর৷’’ (জেনেসিস ১:২৮)৷ এটা বাইবেলের সবচেয়ে পরিচিত পঙতির মধ্যে একটি৷
ছবি: Axel Warnstedt
আল্লাহর সৃষ্টি ব্যবহারে সতর্ক হও
ইসলাম ধর্মেও আল্লাহর সৃষ্টিকে রক্ষার জন্য অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সূরা আর রহমান-এ বলা আছে, মানুষের ব্যবহারের জন্যই পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, তবে সেটা করতে হবে সতর্ক হয়ে৷
ছবি: AP
মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক
কোরানের অনেক আয়াতেই প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে৷ যেমন সূরা আল বাক্বারাহ’য় বলা আছে, ‘‘তোমরা পৃথিবীর অনিষ্ট করো না৷’’
ছবি: Axel Warnstedt
ভারসাম্য বজায় রাখা
হিন্দুদের ভগবত গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের ১২ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে, ‘‘...ভগবান তোমাকে তোমার প্রয়োজনীয় খাবার দেবেন৷ যারা এই উপহার গ্রহণ করবে কিন্তু বিনিময়ে কিছু দেবে না তারা চোর, এর কমও নয় বেশিও নয়৷’’
ছবি: Axel Warnstedt
নিজেকে সৃষ্টির অংশ মনে করা
বৌদ্ধ ধর্ম বলে, সত্যিকার অর্থে দীক্ষা লাভ করতে হলে একজন মানুষের নিজেকে অবশ্যই অন্যান্য সৃষ্টির মতোই একটি অংশ মনে করতে হবে এবং তাদের দুঃখ, কষ্ট ভাগ করে নিতে হবে৷
ছবি: Jody McIntryre / CC-BY-SA-2.0
7 ছবি1 | 7
ট্রাকের ড্রাইভারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল৷ এই সময় দু'জন ইন্ডিও এসে হাজির৷ এরা রিজার্ভের সেই সব বাসিন্দাদের মধ্যে পড়ে, যারা বেআইনি সোনা-সন্ধানীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে থাকে৷ সেই কারণে সোনা-সন্ধানীরা এদের তাড়ায়নি৷ এজেন্টরা অরণ্যবাসীদের বললেন, কবে তারা এসে তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন৷
পরেরদিনও অভিযান চলেছে
হেলিকপ্টার থেকে এজেন্টরা দেখছেন, পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকার ঠিক মাঝখানে একটি বিমান অবতরণের উপযোগী ল্যান্ডিং স্ট্রিপ৷ নীচে কী ঘটছে, দেখতে চান এজেন্টরা৷ দুর্গম এলাকা৷ এজেন্টরা জঙ্গলের মাঝখানে দেড় লাখ ইউরো মূল্যের একটি আর্থমুভার খুঁজে পেয়েছেন – এবং সেটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন৷
পরবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য এজেন্টদের পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই৷ সোনা সন্ধানীদের একটি শিবির আবিষ্কার করলেন তারা৷ সঙ্গে সঙ্গে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল৷ আরো খোঁজ চলল৷ হঠাৎ গুলির আওয়াজ! এজেন্টরা লুকোলেন! গভীর জঙ্গলের মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা অসম্ভব৷ কাজেই এজেন্টরা প্রথমে দেখার চেষ্টা করলেন, গুলি কোথা থেকে আসছে৷ উত্তেজনা বাড়তে লাগল৷ কিন্তু চোরাই সোনা সন্ধানীরা উধাও৷
ঘুরে আসুন প্রাচীন এক অরণ্য থেকে
জার্মানির টুরিঙ্গিয়ায় হাইনিশ জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি যেন তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে আছে৷ বসন্তে সেখানে প্রকৃতির চেহারা আরো বদলে যায়৷ দেখা মেলে বিরল প্রাণীর৷
ছবি: Thomas Stephan
মার্চে ফুল বাগানে জাদুর স্পর্শ
বসন্তের আগমনের সাথে সাথে হাইনিশ উদ্যানে ফুল ফুটতে শুরু করে৷ জার্মানির বৃহৎ এই বিচ বৃক্ষের অরণ্যের মাটি এতটাই উর্বর যে নানা প্রজাতির গাছ খুব সহজেই এখানে জন্মে৷ যেমন লিভারওয়ার্ট৷
ছবি: Thomas Stephan
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান
হোলওয়ার্ট নামের এই ফুলগুলো যখন পুরোপুরি ফোটে তখন পুরো অরণ্য যেন রঙিন কার্পেটে ঢেকে যায়৷ ২০১১ সালে এই উদ্যানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Rüdiger Biehl
পাখিদের স্বর্গ
শীতে পাখিদের কলকাকলি থেমে গেলেও বসন্তের শুরুতেই আবার তাদের গানে মুখরিত হয়ে ওঠে বনভূমি৷ এই ঋতুতে কালো কাঠঠোকরা তার সঙ্গী খোঁজা শুরু করে৷ এই উদ্যানে ১৮৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে৷
ছবি: Thomas Stephan
অরণ্যে ভ্রমণ
অনেকভাবেই এই অরণ্যে আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন৷ মোটর সাইকেলে, পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে করে৷ ১৭ ধরনের ভ্রমণ প্যাকেজ আছে সেখানে৷
ছবি: Thomas Stephan
পাখির চোখে দেখা
হাইনিশ ন্যাশনাল পার্কে আপনার জন্য আরো একটি চমক আছে৷ এই ক্যানোপি হাঁটাপথ ধরে হেঁটে গাছের সমান উঁচুতে উঠে গেলে পুরো পার্ককে ভালভাবে দেখা যায়৷
ছবি: Rüdiger Biehl
প্রাচীন অরণ্য
হাইনিশ অরণ্যটি যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই এখানে কোনো চাষবাস হয় না, এমনকি মরে যাওয়া গাছও সরিয়ে ফেলা হয় না৷
ছবি: Rüdiger Biehl
বিরল প্রাণী
এ অরণ্যের গুবড়ে পোকাগুলো মরে যাওয়া গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়৷ এই মরা বৃক্ষগুলো কেবল তাদের নির্ভয় আবাস নয়, এখানে ডিম পাড়ে তারা৷ এই উদ্যানে ৫০০ বিরল প্রজাতির গুবরে পোকা রয়েছে৷
ছবি: Thomas Stephan
সবুজ শ্রেণিকক্ষ
অরণ্য সংরক্ষণের জন্য যেমন বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি জাতীয় উদ্যানটি রক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷ বিশেষ করে তরুণ পর্যকটদের প্রতি মনোযোগ বেশি তাদের৷ প্রায়ই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সেখানে শিক্ষাসফরে যায়৷
ছবি: Thomas Stephan
8 ছবি1 | 8
হেলিকপ্টার থেকে খোঁজ চলল৷ কিন্তু নীচে কিছুই দেখা যাচ্ছে না৷ অভিযান শেষ হতে চলেছে৷ হেলিকপ্টারের পাইলট এখনও যেন চমকের মধ্যে৷ বলছেন: বিপদ সম্পর্কে তিনি সচেতন৷ বন্দুকের গুলি যেখানে যানটির গায়ে লেগেছে, সেগুলো দেখালেন৷ বললেন, ‘‘ঝুঁকি খুব৷... এলাকাটা বিপজ্জনক এলাকা বলা চলে৷'' হেলিকপ্টারের পাইলটের সিটের হেডরেস্টে, সিলভিও-র মাথা থেকে দশ সেন্টিমিটার দূরে গুলিটা লেগেছে৷ তবে আজ কেউ আহত হননি৷ অভিযানের পরিচালক গুলি লাগার কয়েক মিনিট আগেও ঠিক ঐ জায়গাতেই বসে ছিলেন – তবে গুলি আসার আগেই তিনি হেলিকপ্টার থেকে নেমে গিয়েছিলেন৷
আবার অভিযান শুরু
এজেন্টদের দলপ্রধান উইলসন রচা অতো সহজে ভয় পান না: ‘‘বেআইনি খননের মতো এখানে অন্যান্য নানা ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চলে, যেমন পারদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ... এ সবেরই শিকার হন এখানকার স্থানীয় ইন্ডিও-রা৷'' যেখানে সোনার খোঁজ করা হয়েছে, এজেন্টরা সেই জায়গাটা খুঁজে পেলেন৷ কুইকসিলভার আর অন্যান্য রাসায়নিকের ফলে এখানকার মাটি দূষিত৷ এখানে মানুষ থাকলে, তাদের ক্যানসারের মতো অসুখ হতে পারে৷
ইন্ডিও-দের এলাকায় বেআইনি খনন বন্ধ করার জন্য সরকার যথাসাধ্য করছে৷ একমাত্র এভাবেই প্রকৃতি আবার দম নেবার, সুস্থ হওয়ার সময় পাবে৷ ব্রাজিলের পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ ইবামা-র এজেন্টদের সাফল্য উৎসাহজনক, কেননা শুধু ইন্ডিও-রাই নন, আমাদের গ্রহের ফুসফুসই হল অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷