এতদিন মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ছিল ১২ সপ্তাহ, যা বেড়ে হলো ২৬ সপ্তাহ৷ শুক্রবার আইনসভায় পাস হয় সংশোধনী বিলটি৷ নতুন আইন অনুযায়ী, ১০ বা তার বেশি সংখ্যক কর্মী রয়েছে যে সব সংস্থায়, তাদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে৷
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় নারীদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে লোকসভায় পাস হয়েছে ‘সংশোধিত মাতৃত্বকালীন সুবিধা বিল, ২০১৬'৷ নতুন আইন চালু হলে দেশে অন্তত ১৮ লক্ষ কর্মরত নারীর সুবিধা হবে৷ গতবছরের আগস্ট মাসেই এই বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছিল৷ তবে নতুন আইন অনুসারে, শুধুমাত্র প্রথম দুই সন্তানের জন্মের সময়ই এই সুবিধা পাওয়া যাবে৷ তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে এই ছুটির মেয়াদ ১২ সপ্তাহই থাকবে৷
এই আইন পাশের ফলে সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এলো ভারত৷ ক্যানাডায় হবু মায়েদের ৫০ সপ্তাহ ও নরওয়েতে ৪৪ সপ্তাহ সবেতন ছুটি পাওয়ার অনুমোদন রয়েছে৷ ভারতের মতো দেশে মহিলাদের সুবিধার্থে মাতৃত্বকালীন সুবিধা-সংক্রান্ত বিলটি পাস হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করেছেন দেশের নারী ও শিশুকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী মানেকা গান্ধী৷
তবে ভারতীয় সংসদে মাতৃত্বকালীন ছুটি বিষয়ক বিলটি পাস হওয়ার আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি পিতৃত্বকালীন ছুটি ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সরব হয়৷ এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘গৃহস্থালির কাজকর্ম করা মহিলা, কৃষি ও খনি শ্রমিকদেরও এই বিলের আওতায় আনা উচিত৷'' একই দাবি তোলেন তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ৷
দাবি ওঠে, এই ছ'মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নারীদের সুবিধে অনুযায়ী পাওয়া উচিত৷ লোকসভায় বহু প্রতীক্ষিত এই বিলটি নিয়ে আলোচনার সময়ই পিতৃত্বকালীন ছুটির দাবিতেও ঝড় ওঠে৷ রাজ্যসভাতেও আগে একই দাবি উঠেছিল৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন প্রায় সব নারী সাংসদই পুরুষদের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে সরব হন৷
আসামের শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পুরুষদের ক্ষেত্রে যদি শিশু দত্তক নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা হবে কেন?''
ভারতের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পরদিন মাতৃত্বকালীন সুবিধা-সংক্রান্ত এই বিল পাস হওয়ায় সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মহিলাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছে৷ এমনকি এই বিলের কয়েকটি সুবিধা টুইটারেও তুলে ধরেছে তারা৷
বন্ধু, পুরুষদেরো কি পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ পাওয়া উচিত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷