জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত করতে যে বিধিনিষেধ চালু রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জমায়েতের অনুমতি দিলো জার্মানির একটি শীর্ষ আদালত।
বিজ্ঞাপন
‘‘উন্নত স্বাস্থ্য চাই, অধিকার হরণ নয় – ভাইরাস থেকে বাঁচাও, মানুষ থেকে নয়'‘ – এই শিরোনামে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের পাশের শহর গিসেনের একটি গোষ্ঠী। আয়োজক গোষ্ঠীর নাম ‘ট্রাফিক চেঞ্জ ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড গিসেন'। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যে সমস্ত বিধিনিষেধ চালু আছে তা মেনে নেওয়া কঠিন। উচ্চতর কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
অধিকার, না স্বাস্থ্য – এগিয়ে কে?
বাডেন ভ্যুর্টেমব্যের্গ রাজ্যের সংবিধান বিষয়ক আদালতে এই প্রতিবাদ আয়োজনের বিপক্ষে মত দিলে, কার্লস্রুহেতে অবস্থিত সংবিধান বিষয়ক আদালতের কাছে যান এই গোষ্ঠী। এই আদালতের রায়ে জানানো হয়, জার্মানিতে চালু বিধিনিষেধকে, বিশেষ করে ‘কন্ট্যাক্ট ব্যান'কে, নানাভাবে দেখার অবকাশ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে যাতে বিধিসম্মত জমায়েতের নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়েছে রায়টি।
এর আগে পর্যন্ত, সব ধরনের জমায়েতের ওপরেই জারি ছিল নিষেধাজ্ঞা। সেই জমায়েত বিধি মেনে আয়োজিত হচ্ছে কিনা, তা আলোচনায় আসেনি। কার্লস্রুহের আদালতের ঘোষণা প্রকাশ হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই গিসেনের মেয়র পিটার নাইডেল সংবাদসংস্থা এআরডিকে জানান যে, এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে আর কোনো রকমের আইনি হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে না, নির্বিঘ্নে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজকরা তাদের কাজ করতে পারেন।
কেমন হবে এই প্রতিবাদ?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিপদ একদিকে। অন্যদিকে, নাগরিকের সম্মিলিত প্রতিবাদ করবার অধিকার। দুই মিলে ১৬ ও ১৭ এপ্রিলের এই প্রতিবাদ কিছুটা অন্য রকম। সর্বোচ্চ ৩০ জনের এই কর্মসূচিতে কেউ বক্তৃতা দেননি। বক্তৃতা শুনতে ভীড়ে ঠাসাঠাসি হতে পারে ভেবেই মোবাইল ফোনে অডিও মেসেজের মাধ্যমে বক্তব্য পাঠানো হয়। অংশগ্রহণকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক পরা ও একে অন্যের থেকে দেড় মিটারের দূরত্ব বজায় রাখার বিধি।
গিসেনে এমন প্রতিবাদের পক্ষে আদালত দাঁড়ালেও মিউনিখে এমনটা হলো না। সেখানে সঠিক সময়ের মধ্যে আদালতের কাছে না পৌঁছতে পারার কারণে বাতিল হয়ে যায় এমনই আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ।
থ্রিডি প্রিন্টারে করোনা প্রতিরোধের সরঞ্জাম
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে বিশ্বজুড়ে প্রয়োজনীয় মাস্ক ও সুরক্ষার সরঞ্জামের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠছে৷ জার্মানির এক ব্যক্তি থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে এমন সরঞ্জাম তৈরি করছেন৷
ছবি: Dirk Thelen
ব্যাটম্যানের বদলে মাস্ক
জার্মানির যে এলাকা করোনা সংক্রমণের কারণে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে, সেই হাইন্সব্যার্গের কাছেই থাকেন ডিয়র্ক টেলেন৷ থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে ব্যাটম্যানের মতো কমিক চরিত্রের আবক্ষ মূর্তি তৈরি করা তাঁর শখ৷ সংকটের সময় সেই শখই হয়ে উঠেছে মুশকিল আসান৷
ছবি: Dirk Thelen
সংক্রমণ এড়াতে ফেস শিল্ড
ডিয়র্ক টেলেনের পাঁচটি থ্রিডি প্রিন্টার ও ২টি লেজার যন্ত্র দিনরাত কাজ করে চলেছে৷ বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীদের জন্য তিনি ফেস শিল্ড তৈরি করে চলেছেন৷ দিনে একশো মাস্ক তৈরি হচ্ছে৷ স্ত্রী বারবারা নিজে বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী৷ তিনিই স্বামীকে এই আইডিয়া দিয়েছিলেন৷ করোনা সংকটের ফলে কাজ হারিয়ে ডিয়র্ক আপাতত নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন৷ বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী ও বাসিন্দারা ধন্য ধন্য করছেন৷
ছবি: Dirk Thelen
ওয়ার্কশপে চরম ব্যস্ততা
ডিয়র্ক টেলেনের কাজের ঘরে চরম ব্যস্ততার পরিবেশ৷ চার সপ্তাহে প্রায় ৭০০ ফেস শিল্ড তৈরি করেছেন তিনি৷ ২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় একটি ফেস শিল্ড তৈরি করতে গড়ে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় লাগে৷ প্রথম মাস্কটি তৈরি করে স্ত্রীর সঙ্গে পরীক্ষা করে সেটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন তিনি৷
ছবি: Dirk Thelen
ফেস শিল্ডের চাহিদা বাড়ছে
দেখতে অনেকটা ওয়েল্ডিং-এর সুরক্ষা মাস্কের মতো হলেও ফেস শিল্ডের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব৷ সরাসরি ত্বকের উপর চাপ না থাকায় অস্বস্তিও হয় কম৷ তবে কিছুটা ফাঁক থেকে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার চলে না৷ গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক কোম্পানি কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ডিয়র্কের কাছে এমন সরঞ্জামের অর্ডার দিয়েছে৷ এমন আরও অর্ডার আসছে৷
ছবি: Dirk Thelen
পারিশ্রমিক না চাইলেও খরচ কম নয়
এই কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না৷ শুধু উপকরণের খরচ উঠে এলেই তিনি সন্তুষ্ট৷ বিদ্যুতের বিল নিয়ে তাঁর অবশ্য কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ পাঁচটি থ্রিডি প্রিন্টার সবসময়ে চালু থাকলে মোটা অঙ্কের মাসুল গুনতে হয় বৈকি৷ বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে চিঠি লিখে তিনি ভালো কাজের জন্য কিছুটা ছাড়ের আবেদন করেছেন৷
ছবি: DW/M. Jordanova-Duda
সংক্রমণ এড়াতে সরঞ্জামের গুরুত্ব
হাঁচিকাশি, নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ তাই ভালো করে হাতধোয়ার পাশাপাশি মুখ ঢাকার নানা সরঞ্জামও কার্যকর হতে পারে৷ তবে এমন মাস্ক জীবাণুমুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও জরুরি৷ ডিয়র্ক টেলেনের স্ত্রী জানিয়েছেন, ফেস শিল্ড পরলে বৃদ্ধাশ্রমে ডিমেন্সিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের রোগীদের চিনতে অসুবিধা হয় না৷ মাস্কে মুখ ঢাকা থাকলে এমন মানুষ বিহ্বল হয়ে ওঠেন৷