1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকেই ‘না' বলুন

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে সব হত্যাই অন্যায়৷ সিরাজ শিকদারের ‘মৃত্যু', সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যা, অতীতের ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট', এ সময়ের ‘ক্রসফায়ার', ছোট্ট রাজন কিংবা ব্লগার হত্যা – সবই যে বিচারবহির্ভূত৷

Bangladesch Spezialpolizei
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

কিন্তু ‘মৃত্যু' মানেই যে কারো-না-কারো জন্য শোক আর ‘হত্যা' কখনোই যে সমর্থনের বিষয় নয় – এ সব বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী সব সময়ই ভুলে যায়৷ কিন্তু ভুললে কী চলে? চলবে?

গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধ', অর্থাৎ বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ একটি সংবাদপত্র একসঙ্গেই পরিবেশন করেছে দু'জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নিহত হওয়ার খবর৷ নিহতদের একজন মেহেদী হাসান আজিবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাগুরায় গুলি করে তিনি এক অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং তাঁর জঠরের শিশু সন্তানকে আহত করেছেন৷ ছাত্র লীগের দু'পক্ষের গোলাগুলির ওই ঘটনায় অন্য এক ব্যক্তি নিহত হলেও আহত নারী এবং তাঁর সন্তান এখন সুস্থ হওয়ার পথে৷

জিয়াউর রহমানের হত্যাও ছিল বিচারবহির্ভূতছবি: Harun Ur Rashid Swapan

বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরেক ছাত্র লীগ নেতার নাম আরজু মিয়া৷ মোবাইল এবং ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে তিনি রাজা মিয়া নামের এক কিশোরকে পিটিয়েছেন এবং কিশোরটি পরে মারা গেছে৷ ঢাকার হাজারিবাগে ব়্যাব-এর কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে' আরজু মিয়াও মারা গেছেন৷

অন্য ঘটনাটি কুষ্টিয়ার৷ গত ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সময় সেখানে আওয়ামী লীগ সকর্থকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে মারামারি বেঁধে যায়৷ এক পক্ষের গুলিতে এক যুব লীগ নেতা নিহত হন৷ সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল জাকির হোসেন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মীর বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ মাথায় নিয়েই বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন জাকির

এই হত্যাগুলোর পরে ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে যথারীতি প্রতিবাদ জানানো হয়েছে৷ চক্ষুলজ্জা আছে বলেই হয়তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এখনো একদম নীরব৷ অন্য কেউ ‘ক্রসফায়ার'-এ নিহত হলে সবসময় তো তাঁরা চুপই থাকেন, দলের কেউ মারা গেলে কীভাবে এ সব বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদ জানাবেন!

তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা-কর্মীদের হত্যাকে একরকম সমর্থন করেই বলেছেন, সরকার নাকি কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং ‘অ্যাকশন' শুরু হয়ে গেছে৷ অনেকেই হয়ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে সমর্থন জানাবেন, ধন্যবাদও দেবেন তাঁকে৷

ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদছবি: DW

আমাদের সমস্যাটা এখানেই৷ সমস্যাটা ওপর থেকে একেবারে নীচ পর্যন্ত৷ মন্ত্রী থেকে দিনমজুর, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাম বা ডানপন্থি অন্য সব দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত সবাই-ই কিন্তু এই ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধ' প্রসঙ্গে মোটামুটি একই অবস্থানে৷ ক্ষমতায় থাকলে বিরোধীরা মরলে ক্ষমতাসীনরা চুপ থাকেন আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে নিহতের নাম, পরিচয় দেখে প্রতিবাদ করেন বা নীরব থাকেন৷ এই নিয়মের ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন৷

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অবশ্যই একটু ব্যতিক্রমী৷ তবে তাঁর এই ব্যতিক্রমী বক্তব্যের ইঙ্গিতটি কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়৷ একটা সুস্থ, স্বাভাবিক, গণতান্ত্রিক পরিবেশে শুধু মানুষ কেন, কুকুর-বেড়াল হত্যাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ যে যত বড় অপরাধীই হোক, তার বিচার হতে হবে, বিচারের রায় অনুযায়ীই তার শাস্তি হবে – সভ্য সমাজে এটাই প্রথম এবং শেষ কথা৷ এই বিবেচনায় ওবায়দুল কাদের , ‘সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে' বললেই কথা শেষ হয়ে যায় না, সঙ্গে এ কথাও বলতেই হবে যে, ‘এই অবস্থানটিও ভুল', কেন না চুরির অভিযোগে রাজন বা রাজাকে শাস্তি দেয়ার নামে মেরে ফেলা যেমন অন্যায়, যে কোনো বড় অপরাধীকেও কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে রাতের আঁধারে কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধে' তার মারা যাওয়াও অন্যায়৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এমন মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘বন্দুকযুদ্ধ' বা ‘ক্রসফায়ার'-এর কথা না বললেই বা কী, ঘটনাটি তো অন্যায়ই৷ সিরাজ সিকদার মারা যাওয়ার পর পুলিশ বলেছিল, পালাতে গিয়েছিলেন, তারপর...৷ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শিশু সদস্যসহ প্রায় সবাইকে হত্যা করে যে রেডিওতে সদম্ভে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সেটাও স্রেফ বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষে বর্বরদের আস্ফালনই ছিল৷ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাও নিশ্চয়ই বিচারবহির্ভূত৷

ইদানীং যে সিলেটে রাজন, খুলনায় রাকিব, বরগুনায় রবিউল বা হাজারিবাগে রাজাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হচ্ছে – এ সবের জন্য তো তবু সচেতন বা ‘অশিক্ষিত' মানুষ কিংবা অস্ত্রধারী রাজনৈতিক কর্মী কিংবা সন্ত্রাসীরা দায়ী৷ যখন পুলিশ নির্বাচারে মানুষ মারে? সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া বা ‘বিপথগামী কতিপয়' কর্মকর্তা যখন হত্যা করে? যখন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে কোনো জঙ্গি বা জঙ্গিপন্থি কাউকে জবাই করে? যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই ‘বন্দুকযু্দ্ধের' খবর কিংবা গল্প শোনায়?

সবগুলোই অন্যায়৷ সবই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড৷ মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ যখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ তখন এ সব হয়েছে, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং তাঁর আত্মীয়, মন্ত্রী, অনুসারী হত্যার বেলায় হয়েছে, ৮১-তে জিয়াউর রহমান এমন হত্যাকাণ্ডেরই শিকার হয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট'-এর নামে তা-ই হয়েছে, এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘ক্রসফায়ার' বা ‘বন্দুকযুদ্ধেও' বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে৷

কবে আমরা সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকেই সমস্বরে অন্যায় বলতে শিখবো?

এই ব্লগপোস্টটি নিয়ে আপনার মতামত জানান নীচের মনতব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ