পশ্চিমাবিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রায় সবসময় ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ ক্রাইস্টচার্চে মুসলিমদের ওপর হামলা দেখিয়ে দিলো যে, ইসলামবিদ্বেষও তার থেকে আলাদা নয়, লিখেছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল৷
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর ঘরে প্রার্থনারতদের ওপর ক্রাইস্টচার্চে জঙ্গি হামলা হলো৷ একটা পবিত্র জায়গায় হলো এই হামলা, যেখানে মানুষ নিরীহভাবে প্রার্থনা করেন, তাই তাঁদের কোনো রক্ষাকবচ থাকে না৷
বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান৷ যন্ত্রণা ও কষ্টের সময়ও তাই৷ এমন কঠিন সময় মানুষকে আরো কাছে আনে, কারণ, তারা তখন একে অপরকে সমানভাবে দেখেন৷ জঙ্গি ব্যক্তি হয়তো খুব চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হামলা করেছেন, সূক্ষ্মভাবে ঘটনা ঘটিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু যে বিশেষ বিষয়টি তিনি দেখতে পাননি তা হলো: সন্ত্রাসবাদ বিভক্তি সৃষ্টির জন্য হলেও, এটা মানুষকে এক করতে পারে৷
এ ধরনের হুমকির মুখে আপনি বিশ্বাসী, খ্রিস্টান, ইহুদি না মুসলিম তা বিবেচ্য নয়৷ সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতীয়তা ভেদে আলাদা নয়৷ একজন মানুষ কোথায় জন্মালেন বা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কতটা সময় রইলেন, তার ওপরও নির্ভর করে না৷
দ্বৈত নীতি নয়
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একইভাবে নিন্দা প্রকাশ করতে হবে, যেমনটা করা হয়েছিল প্যারিস, ব্রাসেলস, লন্ডন, মাদ্রিদ অথবা বার্লিনে ইসলামি জঙ্গিবাদীদের হামলার সময়৷ যখন প্রসঙ্গ আসে সন্ত্রাসবাদের, যখন নিরীহ ও অসহায় মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন কোনো দ্বৈত নীতি গ্রহণ করা যাবে না৷
ইসলামবিদ্বেষ একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার৷ পশ্চিমকে এর বিরুদ্ধে ততটাই সতর্ক থাকতে হবে, যতটা আমরা খুবই ক্ষুদ্র এক মুসলিম উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে থাকি৷
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ৫০ জন৷ স্থানীয় মুসলমানরা এই ঘটনায় যাতে আতঙ্কিত না হন সেজন্য তাদের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মসজিদে হামলা
শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ডানপন্থি এক জঙ্গি৷ এতে ৫০ জন নিহত হন৷ আহত হয়েছেন আরো অনেকে৷ হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে আসতে থাকে সমবেদনার বার্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Matrixpictures
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিরাও...
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ মোট দশ জন বাংলাদেশি এই হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা৷ যার মধ্যে কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন৷ উপরের ছবিতে এক বাংলাদেশি নারীকে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবারের পর থেকে তিনি তার স্বামীর সন্ধানে রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মানবিক ভূমিকায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
হামলার খবর প্রকাশিত হবার পর থেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন৷ তিনি ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে নিহতদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, আক্রান্তদের পরিবারের সাথে সময় কাটান৷ তাদের আস্বস্ত করতে তিনি বলেন, ‘‘নিউজিল্যান্ড আসলে এমন নয়৷ আমার কাজ এখন আপনাদের ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর সহযোগিতা দেওয়া, যাতে নির্দ্বিধায় আপনারা নিজেদের সংস্কৃতি আর ধর্মকে ধরে রাখতে পারেন৷’’
ছবি: Reuters/New Zealand Prime Minister's Office
‘মুসলমান ভাইদের পাশে’ পোপ
রোববারের প্রার্থনাসভায় নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের আত্মার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন পোপ ফ্রান্সিস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নতুন করে নিহতদের জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে আহবান জানাচ্ছি৷ আমরা মুসলমান ভাইয়েদের পাশে আছি এবং হিংসা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা দিচ্ছি৷’’
ছবি: Imago/Zuma
‘পাহারায়’ অন্যান্য ধর্মের মানুষ
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা আক্রান্তদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন৷ মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেকেই হালাল খাবার জোগাড় করে দিচ্ছেন৷ ভুক্তভোগীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন অনেকে৷ কেউ কেউ বলছেন যে, মুসলিমরা প্রার্থনা করার সময় প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে থেকে তারা পাহারা দেবেন৷
ছবি: Reuters/J. Silva
পাশে দাঁড়িয়েছে ইহুদিরাও
তাহির নওয়াজ, নিউজিল্যান্ডের আন্তর্জাতিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ধর্মের মানুষ ছাড়াও অসংখ্য খ্রিষ্টান ও ইহুদি আমাকে সমবেদনা ও সাহায্যের বার্তা পাঠাচ্ছেন৷ অন্য ধর্মের বেশ কয়েকজন নেতাও আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন৷’’ ওপরের ছবিতে এক ইহুদি নারীকে দেখা যাচ্ছে, যিনি তাঁর মুসলমান ভাইদের পাশে থাকার কথা বলছেন৷
ছবি: Reuters/R. U. Abbasi
আদিবাসীদের সমবেদনা
নিউজিল্যান্ডের অন্যতম আদিবাসী গোষ্ঠী মাওরি৷ শুক্রবারের হামলার পর, দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃতদের উদ্দেশ্যে শোক জানান তারাও৷ শুধু তাই নয়, আক্রান্তদের পাশে থাকার বহিপ্রকাশ হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী ‘হাকা’ নাচও পরিবেশন করেন তারা, যা মাওরি সংস্কৃতির অংশ৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Getty Images/H. Peters
ছোট থেকে বড়- সবার চোখে জল
ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর থেকে নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় নিহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন সাধারণ মানুষ৷ মসজিদের সামনে জড়ো হয়ে ফুল দিয়ে বা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা৷ বয়স, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের মুখে ছিল শোকের ছায়া৷