সব স্কুলে ‘স্যানিটারি প্যাড সার্ভিস’ চালুর স্বপ্ন প্রভার
সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ জানুয়ারি ২০১৭
তাঁর নাম মারজিয়া প্রভা৷ তিনি একটি উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত যেটি স্কুল ছাত্রীদের মধ্যে মাসিক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ গরিব ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাডও দিয়ে থাকেন তাঁরা৷
মারজিয়া প্রভাছবি: Samir Kumar Dey
বিজ্ঞাপন
উদ্যোগটির নাম ‘ডোনেট এ প্যাড ফর হাইজিন বাংলাদেশ’৷ প্রভা তার প্রধান সমন্বয়কারী৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা জানান৷
ডয়চে ভেলে: মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে আপনারা একটা সচেতনতার কাজ শুরু করেছেন৷ কীভাবে এটা শুরু করেছিলেন?
মার্জিয়া প্রভা: ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ভারতে ‘হ্যাপি টু ব্লিড’ নামে একটা আন্দোলন শুরু হয়৷ ওদের মূল ক্যাম্পেইনটা ছিল মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের ঢোকা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে৷ ঐ মন্দিরের পুরোহিত বলেছিলেন, একজন মেয়ে যে ঋতুমতী নন এবং তিনি যে মিথ্যে বলে মন্দিরে ঢুকে দেবতা ও মন্দিরকে অপবিত্র করছেন না, তার নিশ্চয়তা কী? তাই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি৷ তার মানে হল মেয়েরা ঋতুমতী হলে অচ্ছুত হয়ে যায়৷ এটার প্রতিবাদে সারা ভারতে মেয়েরা ঐ আন্দোলন শুরু করে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজেদের প্রথম মাসিকের বর্ণনা দেওয়া শুরু করে মেয়েরা৷ প্রোফাইল ছবি বদল করে নিজেদেরকে আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত করেন অনেক মেয়ে৷ বাংলাদেশে আমিও এটা নিয়ে লেখালেখি করি৷ এর ফলে প্রচণ্ড গালিগালাজের সম্মুখীন হই৷
এই পরিস্থিতির মধ্যে গত বছর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে হুট করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়াতে একটা ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনে উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণ পাই৷ আমাকে এমনি বেড়াতে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল৷ আমার দুই বন্ধু মাটি ভাই ও তারেক ভাই আমাকে ওখানে নিয়ে যায়৷ তখন আমি কিছু প্যাড সেখানে নিয়ে যাই৷ বিভিন্নজন আমাকে প্যাড ডোনেট করে৷ প্রায় ৬/৭শ’ প্যাড সেখানে নিয়ে যাই৷ কিন্তু ওখানে গিয়ে মাথায় হাত৷ এরা নোংরা কাপড়, পাতা, কাপড়ের মধ্যে বালি ভরে ব্যবহার করে৷ অনেকে কিছুই ব্যবহার করে না৷ রক্ত পেটিকোটে পড়লে নদীতে গিয়ে অনেকক্ষণ ডুব দিয়ে আসে৷ এভাবেই মাসিকের তিন দিন যায় তাদের৷ আমি শুনছিলাম আর হতভম্ব হচ্ছিলাম৷ কাপড় ব্যবহার করে কড়া রোদে শুকালেও কথা ছিল! লজ্জায় তারা বাইরেও নেড়ে দেয় না৷ নোংরা ভেজা সেই কাপড় পরেই কাজ করে৷ আর তাতেই শরীরে ইনফেকশন বাসা বাঁধে৷
Marzia Prova - MP3-Stereo
This browser does not support the audio element.
এই কাজ করতে গিয়ে আপনি কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন?
শুরু থেকেই প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছিল৷ লেখালেখি যখন করতাম তখন তো অনেকেই গালিগালাজ করেছে৷ শুধু এই কারণে বড় দু'টি গ্রুপ থেকে আমাকে ‘ব্যান’ করে দেয়৷ আমি কেন এটা করি সেটা নিয়ে তারা অনেক কথা বলেছে৷ অনেকে তখন বলেছে, আপনি কনডমও বিতরণ শুরু করেন৷ আমি তখন বলেছি, হ্যাঁ প্রয়োজনে কনডমও বিতরণ করব৷ অনেকে তখন আমাকে নষ্টা বলেও গালি দিয়েছে৷ ব, খ, ম, চ এই চার বর্ণ দিয়ে শুরু গালি আমাকে শুনতে হয়েছে৷ সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, মেয়েরাও আমাকে গালিগালাজ করেছে৷ এখন অনেকটাই গালিগালাজ কমে গেছে৷ তবে রুট লেভেলে কাজ করতে গিয়ে আমি কোনো বাধার মুখে পড়িনি৷ কেন হয়নি আমি জানি না৷ মানুষগুলো অসচেতন হোক, খুবই ধর্মান্ধ হোক, কেন যেন তারা আমাকে বাধা দেয়নি৷
আপনি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন নোয়াখালীর একটি গ্রামে৷ সেই প্রজেক্টের অবস্থা কী?
সেই প্রজেক্টটা চলছে৷ আমাদের অনেকগুলো ডোনার আছে, ফ্যাশন হাউজ আছে৷ তারা আমাদের টাকা দেয়, প্যাড দেয়৷ প্যাড তো আছেই, আর টাকা দিয়ে প্যাড কিনে সেগুলো আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দেই৷ আরেকটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি আছে যারা প্যাড বানায়৷ তারা আমাদের খুবই অল্প দামে সেগুলো দেয়৷ এরপর আমরা ওগুলো গরিব মেয়েদের ফ্রি দেই৷ যারা স্বচ্ছল তাদের কাছে আমরা তিন টাকা দরে বিক্রি করি৷ যেটা বাজারের দামের চেয়ে খুবই কম৷ নোয়াখালীর গ্রাম তো, সেখানে আসলে সবাই অসচ্ছল৷ ফলে সবাইকে আমাদের এটা ফ্রি দিতে হয়৷ প্রথম তিন মাস আমরা সবাইকে ফ্রি দিয়েছি৷ এখন ব্যবহার করতে করতে অনেকে ইউজড টু হয়ে গেছে৷ তারা এখন পরিবারের সাপোর্ট পাচ্ছে৷ অনেকেই আমাদের বলে তারা এখন কিনে নেবে৷
আপনারা যাদের কাছে পৌঁছেছেন তারা তো সারাদেশের নারীদের সামান্য একটা অংশ৷ যাদের প্যাড কেনার সামর্থ্য নেই তারা কী করবে?
ঋতুস্রাব বা মাসিক নিয়ে কয়েকটি ভুল ধারণা
কোনো নতুন খবর আছে নাকি? বিয়ের পর নতুন বউকে এ কথা জিজ্ঞেস করে থাকেন অনেকেই৷ এতে কোনো লজ্জাবোধ না থাকলেও, ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই৷ তাছাড়া এ মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কারও৷
ছবি: Fotolia/Alliance
চুল ধোয়া
ঋতুস্রাব হলে বলা হয়, মেয়েদের দু’দিন চুল ধোয়া উচিত নয়৷ এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ বরং চিকিৎসকরা বলে থাকেন মাথায় পানি দিলে মাসিকের ব্যথা অনেকটা কমে এবং এতে আরাম পাওয়া যায়৷
ছবি: Colourbox/Frédéric Cirou/ AltoPress/MAXPPP
মাসিকের দিনে সাঁতার
আগেরকার দিনে পুকুরে গোসল করতো অনেকেই৷ তাই হয়ত পানি নোংরা হওয়ার ভয়ে এ নিয়ম চালু হয়েছিল যে, মাসিক হলে গোসল করা যাবে না৷ কিন্তু এখনকার গোসলখানায় সে ধরনের কোনো অসুবিধা নেই৷ এমনকি ট্যাম্পন পরে অনেকে সাঁতারও কাটে এ সময়ে৷
ছবি: Colourbox/L. Zahner
অচ্ছুৎ ও অভিশপ্ত
মাসিকের চারদিন মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, যেন তারা অচ্ছুৎ এবং অভিশপ্ত৷ তাদের গাছে পানিও দিতে দেয়া হয় না৷ আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা, তাদের দেয়া পানিতে গাছ নাকি মরে যাবে৷
ছবি: Colourbox
মসলাযুক্ত খাবার
মাসিকের সময় হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে৷ মসলাযুক্ত খাবার তাই না খাওয়া ভালো৷ কিন্তু অনেক বাড়িতে আচার ছুঁতে দেয়া হয় না মেয়েদের, এতে নাকি আচারও নষ্ট হয়ে যাবে৷ এমনকি আচার খেতেও দেয়া হয় না তাদের৷
ছবি: donatas1205/Fotolia
যৌন সম্পর্ক নয়
মাসিক চলাকালীন মেয়েদের শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে৷ অনেকের খুব ব্যথা হয়৷ তাই এ সময়ে মেয়েদের বিশ্রাম করা দরকার৷ মনে করা হয়, এ সময় যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়াই ভালো৷ স্বামীর উচিত স্ত্রীকে এ সময় বিশ্রাম দেয়া ও যত্ন নেয়া, যাতে তার কাজের চাপ বেশি না হয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
রান্নাঘরে ঢুকতে মানা
অনেক হিন্দু পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না৷ বিশেষ করে বড় পরিবারে এ ধরনের কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে এতে খাবার দূষিত হয়৷ এই ধারণা একেবারেই ভুল৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife/M. Harvey
বিছানায় শুতে না দেয়া
অনেক পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের বিছানায় শুতে দেয়া হয় না৷ মাটিতে শুতে বলা হয়৷ কোনো কোনো পরিবারে তো ঘরে নয়, বরং বাইরে,অর্থাৎ বারান্দায় শুতে দেয়া হয় তাদের৷ অথচ এতে যে ঐ মেয়েটির কষ্ট আরো বেড়ে যায়, তা কেউই লক্ষ্য করে না৷
ছবি: FEMNETe.V.
নাপাক রক্ত!
অনেকেই বলে থাকেন, মাসিকের রক্ত নাপাক, মানে অপবিত্র৷ তাদের ধারণা এই রক্ত দিয়ে জাদু, ঝাড়ফুকও করা যায়৷ আশ্চর্যের বিষয়, শুধুমাত্র অশিক্ষিত পরিবারে নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এ ধারণা প্রচলিত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gabbert
8 ছবি1 | 8
বাজারে যে প্যাডগুলো পাওয়া যায় তার দাম তো অন্তত একশ টাকা৷ কিন্তু আমরা যেটা দিচ্ছি সেটার ১০ পিসের দাম ৩০ টাকা৷ এবার সামর্থ্যের কথা বলি৷ নোয়াখালীর গ্রামে খুবই গরিব একজন মহিলা আমাকে বলল, আপা এটা কেনার সামর্থ্য তো আমাদের নেই৷ আমরা কী করব? তখন আমি তাকে বললাম আপনার স্বামী চা-সিগারেট খায়? সে বলল খায়৷ কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খায়৷ সে বলল গোল্ডলিফ খায়৷ তাহলে তো তার প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা সিগারেটের পেছনেই চলে যায়৷ তাহলে মাসে সে কেন আপনাকে ৫০ টাকা দিতে পারবে না? তখন সে বলল, দেয় না তো৷ না দিলে আমি কী করব? তখন আমি বুঝলাম রুট লেভেলে টাকা একটা সমস্যা কিন্তু আসলে ইচ্ছে করলে এটা দিতে পারে৷ সস্তায় দিলেও অনেকে কিনবে না৷ কারণ তাদের আসলে ইচ্ছেটাই নেই৷
আপনি বলছিলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষকে আপনি পুরনো কাপড় ব্যবহার করতে দেখেছেন? এই পুরনো কাপড় ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটা কি?
পুরনো কাপড় কিন্তু ক্ষতিকর না৷ কিন্তু সেটা হাইজেনিক করে নিতে হবে৷ আমি আমার মায়ের কাছে শুনেছি, তারা যখন পুরনো কাপড় ব্যবহার করত, তখন ঐ কাপড়টা ঘরের সবচেয়ে কোনার মধ্যে রেখে দিত৷ তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছিল- রক্তমাখা কাপড় দেখলে নাকি পুরুষ লোক অন্ধ হয়ে যায়৷ কোথা থেকে এটা এসেছে আমি জানি না৷ কিন্তু এই কুসংস্কারটা এখনো আছে৷ পুরনো কাপড়টা যে সে ব্যবহার করছে সে তো ওটা পুরোপুরি ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করে নিতে পারছে না৷ আবার শুকাতে দিচ্ছে ঘরের কোনে৷ ফলে ওটাতে তো জীবাণু জমে যাচ্ছে৷ এরপর সে আবার সেটা ব্যবহার করছে৷ এর ফলে তার ইনফেকশন হচ্ছে৷ এতে তার জরায়ুর মুখে ক্যানসার হতে পারে, যেটা নোংরা কাপড় থেকে হয়৷ আমি এ পর্যন্ত কারো কাছেই শুনিনি সে পুরনো কাপড়টা ৯০ ভাগও জীবাণুমুক্ত করতে পেরেছে৷
মাসিক বা ঋতুস্রাব নিয়ে বলিউড তারকাদের ভাবনা
‘মাসিক’ এখনো আমাদের সমাজে একটা ‘ট্যাবু’৷ আর এই ট্যাবুকে ভাঙতে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা৷ কী বলছেন তারা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: AP
কারিনা কাপুর খান
‘‘ঈশ্বর এটা সৃষ্টি করেছেন৷ মাসিক একটা স্বাভাবিক জিনিস৷ তাই আমরা কীভাবে বলতে পারি যে মাসিক চলাকালীন নারীরা অপবিত্র? কেন মেয়েদের এ কারণে নোংরা ভাবা হবে এবং এই একই কারণে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না?
ছবি: DW/P. Tewari
টুইঙ্কেল খান্না
‘‘স্যানিটারি প্যাড নিয়ে এমন আচরণ করা হয় যেন এগুলো রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ বা তেজষ্ক্রিয় পদার্থ৷ দোকানে কিনতে গেলে খবরের কাগজ দিয়ে ঢেকে গোপনে দেয়া হয়৷ এটা কী এমন ব্যাপার যে পুরুষরা যদি এই প্যাকেট সম্পর্কে জেনে ফেলে যে এটা ‘হুইসপার উইথ উইংস’ এবং জানার সাথে তারা ভেঙ্গে পড়বে?’’
ছবি: Getty Images/AFP/STR
কঙ্গনা রানাউত
‘‘মাসিকের রক্ত নিয়ে কেউ যদি কথা বলে সেটা নিয়ে মোটেও আমি বিচলিত হই না৷ কেবল এটাকে বিশাল একটা কিছু না ভাবলেই হলো৷ এর ফলেই আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হওয়ার সামর্থ্য জন্মে৷ পুরুষদের শরীরের নির্গত ফ্লুইড নিয়ে যদি এত কথা না হয়, তাহলে মেয়েদের শরীর নিঃসৃত তরল নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কিছুই নেই৷’’
ছবি: AP
গুল পানাগ
‘‘ঋতুস্রাব বা মাসিক খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া৷ কোনো মেয়ের এটা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ার কারণ নেই৷ এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা মানে এ বিষয়ে শিক্ষার অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা, যেটা কিনা মেনোপজের আগ পর্যন্ত আমাদের জীবনের মাসিক ঘটনা৷’’
ছবি: UNI
পরিনীতি চোপড়া
‘‘এটা ভীষণ লজ্জাজনক যে পুরুষরা এখনো মাসিক সম্পর্কে সচেতন নয়৷ এটা আরও দুঃখজনক যে তারা এটাকে সমস্যা বলে মনে করে৷ একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা এ ধরনের কথা বলছি!’’
ছবি: Getty Images
কালকি কোচলিন
‘‘যখন আমরা আমাদের মাসিক চলাকালীন সময়টা নির্বিঘ্নে পার করছি, তখন হাজার হাজার মেয়েকে নানা কুসংস্কার ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে৷ তাই আমি মেয়েদের বলতে চাই, সব কুসংস্কার ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে চল৷’’
ছবি: AP
শ্রদ্ধা কাপুর
‘‘আমি স্কুলে মাসিক নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে মজা করতাম৷ আমার যে মাসিক চলছে সেটাও তাদের জানিয়ে দিতাম৷ তারা বলতো, ‘তুই কীভাবে নির্দ্বিধায় এটা বলিস?’ আমি বলতাম, ‘এই যে আমি বললাম৷’
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
প্যাড ব্যবহারের কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কিনা?
জেল প্যাড ব্যবহারে ক্ষতি আছে৷ সারা বিশ্বেই কটন প্যাড ব্যবহারের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷ এটা নিয়ে এক ধরনের আন্দোলনও হচ্ছে৷ এই প্যাডটা সবচেয়ে আরামদায়ক, সবচেয়ে ভালো৷ জেল প্যাড ব্যবহার করা ক্ষতিকর৷ ওখানে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়৷
প্যাড ব্যবহারে কি ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ আছে?
এই ধরনের কোনো কথা আমি কখনও শুনিনি৷
বাংলাদেশে কত শতাংশ নারী প্যাড ব্যবহার করে?
আমি যে স্কুলে সার্ভে করেছিলাম তাতে দেখেছিলাম ৬৮ ভাগ নারী প্যাড ব্যবহার করত না৷ সেনোরার একটা সমীক্ষায় আমি পেয়েছি, ৮৭ ভাগ নারীই প্যাড ব্যবহার করে না৷ আমার গবেষণায় আমি দেখেছি ৪০ ভাগ নারী প্যাড ব্যবহার সম্পর্কে জানেই না৷ আর সেনোরা বলছে, এই সংখ্যা ৭১ ভাগ৷
গ্রামের স্কুলের কিশোরীদের যে লজ্জাবোধ, এটা থেকে বের হওয়ার পথ কী?
মেয়েদের গোপন সমস্যায় ঔষধি গাছ
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই মেয়েদের কিছু সমস্যা ঘুরে ঘুরে আসে প্রতিমাসেই৷ তখন শরীর যত না খারাপ থাকে, তার চেয়েও মেজাজ থাকে বেশি খারাপ৷ সে সময়ে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু ঔষধি গাছের কথা জানিয়েছেন এক জার্মান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
নানা সমস্যা
পিরিয়ড বা মাসিক হওয়ার আগে, পরে, চলাকালীন অবস্থায় এবং পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পরও অনেকের মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, কোমর ব্যথা, পা ব্যথা, বমিভাব, ওজন বাড়া, খিঁচুনি, মেজাজ খারাপ, ঘুমের ব্যঘাত, বার বার টয়লেটে যাওয়া, ত্বকের সমস্যা, নার্ভাসনেস – এ ধরণের নানা সমস্যা হয়ে থাকে, মূলত শরীরের হরমোনজনিত কারণে৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
হরতকি বা ‘সেন্ট জন্স ওয়ার্ট’
পিরিয়ডের সময় অনেকেই বিষন্নতায় ভোগেন, যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত৷ তাই এক চামচ হরতকি বা হরিতকি, জার্মানে যা কিনা ‘ইয়োহানেস ক্রাউট’, ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে ঢেলে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন৷ এই চা সকালে ও রাতে এক-দুই কাপ পান করুন, দেখবেন শরীরকে কেমন ঝরঝরে হয়ে গেছে! এই ঔষধি পাতার তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল এবং রস বাজারে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
পা ব্যথা, খিঁচুনিতে ক্যামেলিয়া
মাসিকের সময় পা দুটোয় কেমন যেন ব্যথার ভাব বা খিঁচুনির মতো লাগে, প্রায় সকলেরই৷ পরিপাক নালিতেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়৷ এক্ষেত্রে ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে তিন চামচ ক্যামেলিয়া ফুল ছেড়ে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ঢেকে রাখুন৷ এমন ক্যামেলিয়া চা প্রতিদিন তিন-চার কাপ পান করলে খুব আরাম হয়৷ ক্যামেলিয়ার গুণের কথা অবশ্য অনেকেরই জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
নিসিন্দা গাছ বা ‘চেইস্ট ট্রি’
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সময় কেমন যেন এক অস্থিরতা কাজ করে শরীর, স্তনে ও মনে৷ এ থেকে মুক্তি পেতে সেবন করুন নিসিন্দা গাছের নির্যাস থেকে তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল বা ড্রপ৷ জার্মান ভাষায় একে বলে ‘ম্যোন্শফেফার’৷ তবে এটি কমপক্ষে তিন মাস নিয়মিত খেতে হবে৷ তবে যাঁদের সবসময়ই অনিয়মিত পিরিয়ড হয়, তাঁদের স্ত্রী বিশেষজ্ঞকে দেখানোই শ্রেয়৷
ছবি: imago/blickwinkel
মেনোপজে সালবাই বা ‘সেইজ’
যাঁদের বয়স ৩৫ বা তার বেশি, তাঁদের মেয়েলি সমস্যা বা মেনোপজ-এর সময় সালবাই পাতা বেশ উপকারী৷ সালবাই বা সেইজ পাতা, বাংলাদেশে যা বাবুই তুলসী বলে পরিচিত, অন্যান্য চায়ের মতোই ফুটন্ত পানিতে একটু বেশিক্ষণ, অর্থাৎ দশ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন তিন থেকে চার কাপ পান করুন৷ এমনটা করলে উপকার হবেই, জানান ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড৷
ছবি: Fotolia/steheap
সয়াবিন বা সয়ার বিচি
মাসিক বা মেনোপজ-এর সমস্যায় সয়াবিন, সয়ার বিচি, বিভিন্ন ধরণের ডাল খুবই উপকারী৷ এশিয়ার দেশগুলোতে মুগের ডাল বা অন্যান্য ডালের বিচি নিয়মিত খাওয়া হয় বলে এশীয় নারীদের এ ধরণের সমস্যা ইউরোপীয় বা অ্যামেরিকানদের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে৷ তাছাড়া ডালে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন৷ তাই ডাল সকলের জন্যই উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আয়ত্বে রাখুন
মাসিকের আগে, পরে বা চলাকালীন মেয়েরা কিছুটা সচেতন থাকলে শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখা সম্ভব৷ এর মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটা বড় শর্ত৷ এছাড়া পিরিয়ড প্রতিমাসে হবেই৷ তাই মাসিকের কথা ভুলে গিয়ে মনকে নিজের আয়ত্বে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ এ কথা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড৷
ছবি: Christian Muth
7 ছবি1 | 7
আমরা তো প্রথমে সেমিনার করি৷ তারপর প্যাড পাঠানো শুরু করি৷ প্রথম দিন হয়কি কেউ কোনো কথা বলতে চায় না৷ পরে ছেলেদের রুম থেকে বের করে দিয়ে তাদের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলি৷ এরপর তারা মুখ খুলতে শুরু করে৷ আমাদের সঙ্গে ডাক্তার ছিল৷ বারবার বলার পর তারা স্বাভাবিক হতে শুরু করে৷ প্রথম সেশনে তো সবাই হাসাহাসি করে৷ শেষে গিয়ে তারা প্যাড উঁচু করে বলে আপা আমরা প্যাড ব্যবহার করি৷
আপনি যে সচেতনতার কাজ শুরু করেছেন, এটা নিয়ে আপনি কতদূর যেতে চান?
আমার মূল কাজ হচ্ছে প্যাডের দাম কমানো৷ এটা নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি৷ আমি যাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি তারা আমাদের কম দামে দিচ্ছে, কিন্তু এভাবে তো এগুবে না৷ আমি চাই প্রতিটি স্কুলে প্যাড সার্ভিস থাকবে৷ আমি ঢাকার একটি স্কুলে পড়েছি৷ সেখানেও আমাদের প্যাড সার্ভিস ছিল না৷ আমি চাই, কোনো মেয়েকে দোকানে যেতে হবে না, সে স্কুল থেকেই এটা নিতে পারবে৷ এই সার্ভিস আমি সব স্কুলেই করতে চাচ্ছি৷ আমার স্বপ্ন এটা সারাদেশে এটা ছড়িয়ে দেয়া৷ জানি না কীভাবে হবে, তবে এটা আমার স্বপ্ন৷