সমকামিতার ওপর ঔপনিবেশিক আমলে জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় দিলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ আদালত বলছে, এই আইনকে ‘সমকামীদের ওপর নির্যাতনের হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এই রায়ের ফলে ১৪৬ বছরের পুরনো একটি আইন আর কার্যকর থাকলো না৷ আইনটি ৩৭৭ ধারা নামে বেশি পরিচিত৷ এই রায়ের আগ পর্যন্ত সমকামের শাস্তি ছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ আদালত বলছে, ভারতের সংবিধানের সাথে এই আইন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷
ঐতিহাসিক এই রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, ‘‘এই আইন দেশের সমকামীদের জন্য একটি নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে৷’’
পাঁচ ব্যক্তির করা পিটিশনের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় এলো৷ আদালতে দায়ের করা পিটিশনে অভিযোগ করেন, তাঁরা হয়রানি ও পুলিশি নির্যাতনের আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন৷
দীর্ঘদিন ধরে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা অ্যাক্টিভিস্টরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি ‘‘শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যাঁরা এর পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন,’’ তাঁদের ধন্যবাদ জানান৷
বলিউডের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক করণ জোহর এক টুইটে এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন৷ মানবতা ও সমঅধিকারের পক্ষে ভারত আরেকটু এগিয়ে গেল বলেও মনে করেন তিনি৷
২০০৯ সালে নয়াদিল্লির এক আদালত এই আইন বাতিল করে রায় দেয়৷ কিন্তু উগ্র ধর্মীয় সংগঠনগুলোর চাপের মুখে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত ২০১৩ সালে এই রায় পালটে দিতে বাধ্য হয়৷
৩৭৭ ধারা অনুযায়ী ‘প্রকৃতির নিয়মের বাইরে গিয়ে পুরুষ, নারী বা পশুর সাথে যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে’ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিলেও ‘পশুর সাথে যৌনকর্মকে’ অপরাধ হিসেবেই ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ, এপি, এফপি)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
সমকামিতা যে প্রাকৃতিক, তার প্রমাণ এই প্রাণীরা
প্রাণীজগতে সমকামী যুগল একেবারে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার৷ গবেষণায় দেখা গেছে পোকামাকড়, মাছ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে প্রায় ১৫০০ প্রজাতিতে সমকামিতা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
লম্বা গলার জিরাফ
জিরাফদের সমলিঙ্গের মধ্যে ভালোবাসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ এমনকি গবেষকরা বলছেন, জিরাফদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই সমলিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বোতলনাক ডলফিন
এই প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের ডলফিনের মধ্যেই সমকামিতা দেখা যায়৷ মুখ এবং নাক দিয়ে স্পর্শ করে সঙ্গীকে আদর করে তারা৷ পুরুষ ডলফিনরা সাধারণত উভকামী৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
সিংহের আনুগত্য
পশু রাজ সিংহের মধ্যেও সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ দুই থেকে চারটি পুরুষ সিংহ একটি জোট গঠন করে, যাতে সিংহীরা তাদের কাছে আসতে না পারে৷ অন্য জোট থেকে বাঁচতে একে অপরের উপর ভীষণ নির্ভরশীল তারা৷
ছবি: ARTIS/R. van Weeren
বাইসন
পুরুষ বাইসনদের মধ্যে সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ কেননা স্ত্রী বাইসনদের সঙ্গে বছরে একমাত্র একবার মিলন হয় তাদের৷ তাই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ বাইসনরা একে অপরের সঙ্গে দিনে বহুবার মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বানরদের ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’
ম্যাকাক প্রজাতির নারী ও পুরুষ বানর – উভয়ের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে৷ যেখানে পুরুষরা মাত্র একরাতের জন্য সমলিঙ্গের সঙ্গে মিলিত হয়, সেখানে স্ত্রী বানররা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলে এবং একে অপরের সঙ্গে থেকে যায়৷
ছবি: picture alliance/robertharding
অ্যালবাট্রসদের বন্ধন
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লেসন অ্যালবাট্রসরা তাদের সমকামী বন্ধনের জন্য ভীষণভাবে পরিচিত৷ এরা এতটাই বন্ধনে জড়িয়ে যায় যে পুরো জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়, যেন মনে হবে একটি সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রীর সুখি পরিবার৷
ছবি: imago/Mint Images
যৌন-বিকারগ্রস্ত বনোবো
পিগমি শিম্পাঞ্জী বা বনোবোকে বলা হয় মানবজাতির সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রাণী৷ তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মিলিত হতে থাকে, এমনকি সমলিঙ্গের সঙ্গে৷ নিজেদের আনন্দের জন্যই এটা করে তারা৷ তবে এটা ঠিক তারা এটাকে নিজেদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করা এবং দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় হিসেবেও মনে করে৷ স্ত্রীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/F. Lanting
প্রতি ৫টির মধ্যে একটি রাজহাঁস সমকামী
অনেক পাখিদের মতো রাজহাঁসরাও একগামী এবং বছরের পর বছর ধরে তারা এক সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়৷ এদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গী হিসেবে সমলিঙ্গের হাঁসকে বেছে নেয়৷ শতকরা ২০ ভাগ রাজহাঁস সমকামী এবং তারা প্রায়ই পরিবার গঠন করে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/P. Frischknecht
সিন্ধুঘোটক
পুরুষ সিন্ধুঘোটক চার বছর বয়সের আগে যৌনসক্ষমতা লাভ করে না৷ এর আগ পর্যন্ত তাদের প্রায় সবাই সমকামী থাকে৷ যখন তাদের চার বছর হয় তখন হয় তারা উভগামী হয়, না হলে কেবল প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সিন্ধুঘোটকদের সঙ্গে মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature in Stock
ভেড়াদের পছন্দ
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুরুষ ভেড়ার পালের ৮ ভাগ ভেড়াই সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের পছন্দ করে, এমনকি প্রজননের সময়ও৷