মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমকামিতা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরির জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে৷ দেশটিতে সমকামিতা নিষিদ্ধ এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত৷ আর তা প্রমাণ হলে কারাদণ্ড এবং শাস্তির বিধান রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মালয়েশিয়ার সরকার সমকামিতা রুখতে অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে৷ একটি ভিডিও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে তারা৷ ভিডিওটি হতে হবে সমকামিতার বিপক্ষে বা সমকামিতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ায় এমন৷ যার ভিডিও সেরা নির্বাচিত হবে, সেই প্রতিযোগী পাবেন এক হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার৷
সমকামী এক ইমামের কথা
দক্ষিণ আফ্রিকার এক মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস গত ২০ বছর ধরে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁদের জন্য একটি মসজিদও নির্মাণ করেছেন তিনি৷
ছবি: The Inner Circle
সমকামীদের জন্য মসজিদ
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের ভিনবার্গ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস৷ বছর পাঁচেক আগে তিনি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ হেন্ড্রিকস একজন সমকামী৷ তাঁর মসজিদে ২৫ জন নিয়মিত নামাজ আদায়কারী আছেন৷ মাঝেমধ্যে সমকামীদের মধ্যে বিয়েও পড়ানো হয় ঐ মসজিদে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch
সমকামী মুসলিমদের সহায়তা
নিজে সমকামী হওয়ায় কেপটাউনের সমকামী মুসলিমদের অসহায়ত্বের কথা জানতেন হেন্ড্রিকস৷ তাই তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে ১৯৯৬ সালে ‘দ্য ইনার সার্কেল’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি৷ এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: The Inner Circle
বিয়ে করেছিলেন হেন্ড্রিকস
অল্প বয়সেই নিজের সমকামিতার বিষয়টি অনুভব করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু তাঁর দাদা ইমাম ছিলেন৷ তিনি তাঁকে বলেছিলেন, সমকামীরা দোযখে যাবে৷ এছাড়া সেই সময় সমকামিতা বিষয়ে মুসলিম সমাজে মনে করা হত যে, বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সে কারণে এক নারীকে বিয়েও করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারেন, বিরাট ভুল করেছেন৷ তবুও সেভাবে ছয় বছর কেটে যায়৷ দুই সন্তানের জন্মও হয়৷ পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R.Bosch
সমকামিতা প্রসঙ্গে কোরান
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হেন্ড্রিকস বলেন, ‘‘কোরান সমকামিতার বিরুদ্ধে নয়৷ ইসলামি অনেক পন্ডিতও এখন সেটি বুঝতে শুরু করেছেন৷ এমনকি মহানবির (সা:) বাড়িতে এমন ব্যক্তিরা কাজ করতেন যাঁরা নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন না৷ মহানবি (সা:) এর বাড়িতে সমকামী চাকর থাকার মানে সমকামীদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল৷’’
ছবি: Imago/B. Strenske
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বে প্রথম
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সে দেশের ১৯৯৬ সালের সংবিধানে সমকামীদের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে সেখানে সমলিঙ্গ বিয়ের বৈধতা রয়েছে৷
ছবি: Johann Hattingh/AFP/Getty Images
আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সমকামীবান্ধব অনেক রেস্তোরাঁ, বার, হোটেল ও ক্লাব আছে৷ সেজন্য এই শহরটি আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’ বলেও পরিচিত৷
ছবি: dapd
আছে তিন লক্ষ মুসলিম
কেপটাউনে প্রায় তিন লক্ষ মুসলিমের বাস৷ সেখানকার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম সমকামিতার বিরুদ্ধে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে সমকামীদের গৃহবন্দি করে রাখার পক্ষে৷ হেন্ড্রিকসের মসজিদ থেকে ১০ কিমি দূরের একটি মসজিদের ইমাম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘সমকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটি নিষিদ্ধ৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
পরিবর্তন আনছেন হেন্ড্রিকস
সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় কয়েকবারই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু থেমে যাননি তিনি৷ বরং তাঁর দৃঢ়তার কারণে সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে৷ তাইতো তাঁর মসজিদের দুই কিলোমিটারের এর মধ্যে আরেকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে যেখানে সমকামীদেরও নামাজ পড়ার অধিকার রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
8 ছবি1 | 8
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জনগণকে এ ধরণের ভিডিও পোস্ট করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার– এদের ‘জেন্ডার আইডেনটিটি ডিজঅর্ডার' রয়েছে, এমনকি যেসব মেয়ে ‘টম বয়' ধরণের, তাদের লিঙ্গ পরিচিতির বিষয়ে কীভাবে সচেতন করা যায়, সে সম্পর্কিত ভিডিও পাঠাতে বলা হয়েছে৷ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে৷ এই থিমের উপর ভিত্তি করে যৌনমিলন ও ইন্টারনেট নিয়েও ভিডিও করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়েবসাইটে৷ এছাড়া যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে ভিডিও চাওয়া হয়েছে৷
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী অবশ্য সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আয়োজন করা হয়নি৷ বরং অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতেই এই ‘সৃজনশীল' প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে৷
তবে মালয়েশিয়ার সমকামী অধিকার কর্মীরা এমন প্রতিযোগিতা আয়োজনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এই প্রতিযোগিতা দেশের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মনে ভীতি আরও বাড়িয়ে দেবে৷ তাঁরা এমনিতেই অনেক মানুষের অসহিষ্ণুতার শিকার৷ মালয়েশিয়ার অন্যতম পরিচিত এলজিবিটি অ্যাকটিভিস্ট নিশা আইয়ূব জানালেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরকার মানুষের মনে এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা আর বৈষম্যের বীজ বুনছে৷ মালয়েশিয়ার আইনে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷