দুই সন্তানের জনক ২৮ বছর বয়সি ইজাজ স্বীকার করেছে যে, সে তিনজন সমকামীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে৷ কারণ সে সমকামী রূপী শয়তানদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চায়৷ যদিও পুলিশ বলছে তিনটি হত্যাকাণ্ডের আগে সে ঐ ব্যক্তিদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে৷
লাহোরের পূর্বাঞ্চলে যেখানে সমকামী সম্প্রদায় বেশি, সেখানে তাঁদের মধ্যে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ কারণ তাঁদের ধারণা, ইসলাম ধর্ম্বালম্বী কট্টরপন্থিরা হয়ত ইজাজকে ‘হিরো' হিসেবে আখ্যা দেবেন৷ পাকিস্তানে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে৷
সমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের৷ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিস্তারিত দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিতে সরকারি পরিকল্পনার সমর্থনে গত রবিবার প্যারিসে হাজির হন লাখো মানুষ৷ কিছুদিন আগে অবশ্য সেখানে সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে লাখো মানুষ সমবেত হয়৷ এই ইস্যু নিয়ে বেশ উত্তপ্ত সেদেশ৷ বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ এবং ডানপন্থি বিরোধী দল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকে এই আইন করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে৷
ছবি: Reutersইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি মিশ্র৷ নেদারল্যান্ডস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ২০০১ সালের এপ্রিল থেকে সেদেশে এই আইন কার্যকর আছে৷
ছবি: AP২০০৩ সালের জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ বৈধ করা হয়৷ প্রথম দিকে সেদেশে বিদেশিদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহে খানিকটা জটিলতা ছিল৷ কিন্তু ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে সকল দেশের নাগরিকদের এই সুবিধা দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে যে কোনো একজনকে কমপক্ষে তিন মাস বেলজিয়ামে থাকতে হবে৷ ২০০৬ সাল থেকে সমকামী পুরুষ এবং নারীকে সন্তান দত্তক নেওয়ার সুবিধাও প্রদান করা হয় বেলজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/dpaখোসে লুইস রোদ্রিগেজ সাপাতেরো-র সমাজতন্ত্রী সরকারের মেয়াদকালে পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে স্পেন সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ করে৷ ফ্রান্সের মতো সেদেশেও ক্যাথলিকদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের জুলাই মাসে স্পেনে এ ধরনের বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ২০১০ সাল থেকে পর্তুগালও একই পথের পথিক হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaআইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইওয়াহানা সিগুরডোটির এবং তাঁর সঙ্গিনী ইওহিনা লিওসডোটির সমকামীদের বিয়ে বৈধ ঘোষণার পর প্রথমেই সেই সুযোগ নিয়েছেন৷ সিগুরডোটির হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম মেয়ে সমকামী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর ২০১০ সালে সেদেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হলে সঙ্গিনী লিওসডোটিরকে বিয়ে করেন সিগুরডোটির৷
ছবি: Getty Imagesসমকামীদের অধিকারের বিষয়ে আইনিভাবেই সচেতন স্ক্যান্ডিনেভিয়া৷ সুইডেনে ২০০৯ সালে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ করা হয়৷ পুরুষ এবং নারী সমকামী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে সেদেশে কোনো বাধা নেই৷ নরওয়ে ২০০৮ সালে এ সংক্রান্ত এক বিল অনুমোদন করেছে৷ ২০১২ সালের গ্রীষ্ম থেকে ডেনমার্কেও সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ ফিনল্যান্ডও এ ধরনের বিয়েকে বৈধতা প্রদানের পথে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaএই ছবিটি গত শতকের ৮০-র দশকের৷ এতে দেখা যাচ্ছে, সমকামীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল মানুষ৷ এরপর অনেকদিন পেরিয়েছে৷ যুক্তরাজ্যে সমলিঙ্গের পুরুষ বা নারী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে রয়েছে এই প্রথা৷ তবে চার্চে সমলিঙ্গের নারী বা পুরুষ বিয়ে করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP২০০১ সাল থেকে সমলিঙ্গের যুগলের রেজিস্ট্রেশন বৈধ করেছে জার্মানি৷ এই প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে বিয়ের সুযোগ সুবিধার অনেকটাই পান সমকামীরা৷ কিন্তু যৌথভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া কিংবা পূর্ণ আয়কর সুবিধা এখনো পায়না সমকামী দম্পতিরা৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৬৬ শতাংশ জনসাধারণই সমকামীদের বিয়ের পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpaতবে ইউরোপের পর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেখানকার সমাজে সমকামী নারী বা পুরুষকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়না৷ লিথুনিয়া, পোল্যান্ডের মতো লাটভিয়াতেও বিষমকামী দম্পতির মতো সমান অধিকার পায় না সমকামী দম্পতি৷ পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ জনগণই সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে৷
ছবি: Reutersরাশিয়ার সংসদ সম্প্রতি শিশুদের মাঝে ‘সমকামীদের প্রচারণা’ নিষিদ্ধ করেছে৷ আর আগেই অবশ্য সেন্ট পিটার্সবুর্গের (ছবিতে) মতো বিভিন্ন শহরে সমকামিতাকে উৎসাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নতুন এই আইনের ফলে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক প্রচারণা রাশিয়ায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আয়োজকদের জরিমানা হবে৷ বলাবাহুল্য, রাশিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ নয়৷
ছবি: Dmitry Lovetsky/AP/dapd
রবিবার রাতে প্রিজন সেলে সংবাদ সংস্থা এএফপি-র সাংবাদিককে ইজাজ বলেন, সমাজে যেসব অনাচার চলছে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সে৷ আর সেজন্যই তাঁদের হত্যা করেছে৷ সে এও বলেছে যে, তার পথটি ঠিক নয়৷ এটা খুবই দুঃখের যে অনেকে তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন৷ কিন্তু সমকামীরা সমাজে অনাচার ছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং তাই তার মনে হয়েছে এটা বন্ধ করা উচিত৷
পুলিশ অফিসার আসাদ সরফরাজ এ সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দলের প্রধান৷ তিনি জানান, খুন তিনটি এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে হয়েছে৷ এঁদের মধ্যে একজন মধ্যবয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এবং অন্য দু'জনের বয়স ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে৷ তিনজনেরই ঘাড় ভাঙা ছিল৷ নিহতদের মোবাইল ফোন থেকে তারা ইজাজের ফোন নম্বরও উদ্ধার করে৷
ইজাজ পুলিশকে জানিয়েছে, দুই মাস আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমকামীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে সে এবং দেখতে পায় যে, লাহোরে প্রচুর সমকামী রয়েছে৷ তারা একটা ভয়ঙ্কর রোগের মতো এটাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানায় সে৷
ইজাজ জানায়, তার বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার চেয়ে বেশ বড় একটি ছেলে তার ওপর যৌন হয়রানি করেছিল৷ শৈশবের সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে তাকে অসুখী করে তোলে৷ তখন থেকে সে এই ধরনের ব্যক্তিদের ঘৃণা করতে শুরু করে৷ তবে সমকামী সম্প্রদায়ের একজন দাবি করেন যে, বেশ কয়েক মাস ধরেই সমকামীদের সাথে চলাফেরা এবং তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয়েছিল ইজাজ৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)