বার্লিনে এক সমকামী দম্পতির ওপর হামলার নিন্দা জানাতে গিয়ে হামলাকারীদের বিতাড়িত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি-র ‘টলারেন্স অ্যাম্বাসেডর' নিনা কোয়্যার৷ ফলে তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বর্ণবাদের অভিযোগ৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সোমবার এক সমকামী দম্পতির উপর হামলার ঘটনা ঘটে৷ প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্যমতে, হামলকারীরা নিজেদের মধ্যে তুর্কি ভাষায় কথা বলেছিলেন৷ এই খবর নিজের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেন ‘ড্রাগ কুইন' নিনা কোয়্যার৷ খবরটির সঙ্গে নিজের মন্তব্য হিসেবে তিনি লেখেন, ‘‘তাদের এখনই বিতাড়িত করা হোক৷ সে তারা জার্মানিতে জন্ম নিক বা না নিক!''
তুর্কি ভাষায় কথা বলা তরুণরা সমকামী দম্পতিকে প্রথমে গালাগাল দেয় এবং এক পর্যায়ে তাঁদের একজনকে শারীরিকভাবে আঘাত করে৷ তখন আশেপাশের পথচারীরা তাদের বাধা দেন৷
নিনা কোয়্যারকে সম্প্রতি ‘টলারেন্স অ্যাম্বাসেডর' হিসেবে নিয়োগ দেয় জার্মানির সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল এসপিডি৷ গতবছর বার্লিনে মেয়র নির্বাচনে মিশায়েল ম্যুলারকে সফলভাবে সহায়তা করেছিলেন নিনা৷ দলটির পোস্টারেও নিনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে সোমবার তাঁর ফেসবুক পোস্ট দেখে চটেছেন সেদলের কয়েক নেতা৷
রাজনীতিবিদ মার্কুস পাউৎসেনব্যার্গার নিনার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘এ ধরনের বক্তব্য পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য৷ আমরা পরিষ্কারভাবে এই নিন্দনীয় মন্তব্য থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছি৷''
কোলনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সমকামী প্যারেড
জার্মান শহর কোলনে এই বছর জড়ো হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ সহনশীলতা এবং সম অধিকারের দাবি তাদের কণ্ঠে৷ জার্মানিতে সদ্য পাশ হওয়া ‘সমকামী বিবাহ’ আইন জুগিয়েছে উদযাপনের বাড়তি উপলক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
সম অধিকারের লড়াই
ইউরোপের সমকামীদের সবচেয়ে বড় বার্ষিক আয়োজন এই কোলন প্রাইড প্যারেড৷ এ বছর ৮৫টি গাড়ির বহর ছাড়াও পায়ে হেঁটে যোগ দিয়েছেন অনেকেই৷ অংশগ্রহণকারীরা সমকামী ও উভকামীদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা এবং সমান অধিকারের দাবি জানান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
কোলনের বার্ষিক আয়োজন
১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহান্তে কোলনে আয়োজন হচ্ছে এই প্যারেড৷ প্যারেড শুরু হয় ডয়চে সাসপেনশন ব্রিজ থেকে৷ নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সবচেয়ে বড় শহর কোলনের কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয় এই প্যারেড৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
প্যারেডের চেয়েও বেশি কিছু
অংশগ্রহণকারীদের কাছে এই আয়োজন শুধু প্যারেডেই সীমাবদ্ধ নয়৷ কনসার্ট, পার্টি, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ একগাদা অনুষ্ঠান থাকে এই আয়োজনকে ঘিরে৷ এবারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ব্রিটিশ ব্যান্ড ইরেশারের পরিবেশনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
‘আর কখনও নয়’
কোলনের এবারের গে প্রাইডের মূল উপজীব্য ছিল, ‘আর কখনও নয়’৷ যে সকল সমকামী ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তাদের স্মরণ করা হয় এবারের আয়োজনে৷ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে লেসবিয়ানদের কালো রংয়ের ত্রিকোণ ব্যাজ পড়তে বাধ্য করা হতো৷ ছেলেদের বেলায় এর রং ছিল গোলাপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
সবার জন্য বিয়ের অধিকার
বুন্দেসটাগে ৩০ জুন পাশ হওয়া ‘সবার জন্য বিয়ে’ আইন উদযাপন করার একটা উপলক্ষ্যও ছিল এবারের প্যারেড৷ আয়োজকরা অবশ্য মনে করেন, এখনও অনেকদূর যাওয়া বাকি৷ এখনও সমলিঙ্গের বিয়েতে বাবা ও মায়ের ভূমিকা নির্ধারণসহ আরো কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
ব্যবসায়ীদের সমর্থন
এবারের প্যারেড বেশ কিছু কোম্পানির স্পন্সর পেয়েছে৷ এর মধ্যে একটি সাশ্রয়ী এয়ারলাইন ইউরোউইংস৷ সহনশীলতার মতো মানবিক মূল্যবোধের পাশে যে ব্যবসায়ীরাও আছে, এটাকে তারই প্রমাণ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ একই সাথে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের জন্য বিজ্ঞাপনটাও হয়ে গেল৷ ইউরোউইংসের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের সাথে চলো, রংধনুর আরো কাছে’৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Galuschka
6 ছবি1 | 6
এদিকে সমালোচনার মুখে আলোচিত ফেসবুক পোস্টের জন্য মঙ্গলবার ক্ষমা চেয়েছেন নিনা৷ সমকামীদের লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ব্লু-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে ভুল বুঝেছেন এবং যাঁরা আমার বক্তব্যে আঘাত পেয়েছেন, তাঁদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি৷ যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা জানেন যে আমি একজন বামপন্থি৷ বর্ণ, ধর্ম এবং বংশপরিচয় আমার কাছে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক৷ আমি হয়ত আমার পোস্টে অনেক বেশি বলে ফেলেছি৷''
তবে হামলকারীদের বিতাড়িত করতে বলায় যারা তাঁর সমালোচনা করছেন, তাঁদেরও একহাত নিয়েছেন তিনি৷ বার্লিনের একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘‘সমকামীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া বন্ধে উদ্যোগের বদলে আমাকে উলটো নাৎসি বলে গালমন্দ করা হচ্ছে৷''
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১১ সালে আফ্রিকানদের নিয়ে একটি লেখা লিখেও সমালোচনা মুখে পড়েন নিনা কোয়্যার৷ সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠলেও এসপিডি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল৷
আলিস্টার ওয়াল্শ/এআই
জার্মানিতে সমকামীদের বিবাহের অধিকার
শুক্রবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ ‘সবার জন্য বিবাহের অধিকার’ অনুমোদন করেছে৷ এই সিদ্ধান্তের ফলে জার্মানিতে সমকামীদের পরিস্থিতির কী পরিবর্তন ঘটলো? এই আইন কি সংবিধান-বিরোধী?
ছবি: REUTERS/F. Bensch
সমকামী দাম্পত্যজীবনের স্বীকৃতি
২০০১ সাল থেকে সমকামী দম্পতিরা জার্মানিতে সরকারিভাবে ‘সিভিল পার্টনারশিপ’ কাঠামোর আওতায় কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন৷ অর্থাৎ আইনের চোখে তাঁদের সম্পর্ককে বিবাহের মতো বিবেচনা করা হলেও তাঁরা কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন৷ একে একে সেই সব বৈষম্য দূর করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রায় ৯৪,০০০ সমকামী দম্পতি এই মর্যাদা ভোগ করেছেন৷
ছবি: Imago/epd
বিবাহের সিদ্ধান্ত
২০১৭ সালের ৩০শে জুন সংসদের অনুমোদনের পর নতুন আইন কার্যকর হতে কয়েক মাস সময় লাগবে৷ কিন্তু এর মাধ্যমে জার্মানিতে সমকামী দম্পতিদের ‘সিভিল পার্টনারশিপ’ সরাসরি বিবাহ হিসেবে বিবেচিত হবে না৷ ইচ্ছুক দম্পতিদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে৷ অথবা তাঁরা আগের অবস্থাতেও থাকতে পারেন৷ অবশ্য নতুন করে এই মর্যাদা আর দেওয়া হবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার
নতুন আইনের আওতায় বিবাহিত দম্পতি হিসেবে সমকামীরা সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে সমানাধিকার পেলেন৷ ফলে সব বৈষম্যই দূর হয়ে গেল৷ আইন অনুযায়ী, এবার তাঁরা একসঙ্গে কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারবেন৷ নতুন আইনের ফলে এই অধিকারই তাঁদের প্রধান প্রাপ্তি৷
ছবি: picture alliance/dpa/N.Sangnak
ইউরোপে জার্মানি পথিকৃৎ নয়
অন্য অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জার্মানি পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল৷ বিশ্বের ২০টি দেশে সমকামীদের বিবাহের অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান ও নিউজিল্যান্ড জার্মানির আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/E. Contini/NurPhoto
আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা
সংসদ ‘সবার জন্য বিবাহ’ অনুমোদন দিলেও এই সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী বলে মনে করছে রক্ষণশীল কিছু মহল৷ অতএব তাঁরা জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হবার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আইন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ অবশ্য মনে করে যে, সমকামীদের বিবাহের স্বীকৃতির জন্য সংবিধান পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই৷