যুগান্তকারী প্রস্তাব পাশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে। সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি মুক্তাঞ্চল।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে। এর মধ্যে গে, লেসবিয়ান, রূপান্তরকামী সহ একাধিক যৌনবৃত্তির মানুষ আছেন। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের বহু দেশে সমকামীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। তাদের মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। বস্তুত, পোল্যান্ডের প্রশাসন সমকামিতাকে ব্যাধি বলে মনে করে। সমকামীদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয় সেখানে। একই পরিস্থিতি হাঙ্গেরিতে। সেখানেও প্রশাসন সমকামীদের অধিকার রক্ষা করে না।
জার্মানিতে সমকামীদের বিবাহের অধিকার
শুক্রবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ ‘সবার জন্য বিবাহের অধিকার’ অনুমোদন করেছে৷ এই সিদ্ধান্তের ফলে জার্মানিতে সমকামীদের পরিস্থিতির কী পরিবর্তন ঘটলো? এই আইন কি সংবিধান-বিরোধী?
ছবি: REUTERS/F. Bensch
সমকামী দাম্পত্যজীবনের স্বীকৃতি
২০০১ সাল থেকে সমকামী দম্পতিরা জার্মানিতে সরকারিভাবে ‘সিভিল পার্টনারশিপ’ কাঠামোর আওতায় কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন৷ অর্থাৎ আইনের চোখে তাঁদের সম্পর্ককে বিবাহের মতো বিবেচনা করা হলেও তাঁরা কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন৷ একে একে সেই সব বৈষম্য দূর করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রায় ৯৪,০০০ সমকামী দম্পতি এই মর্যাদা ভোগ করেছেন৷
ছবি: Imago/epd
বিবাহের সিদ্ধান্ত
২০১৭ সালের ৩০শে জুন সংসদের অনুমোদনের পর নতুন আইন কার্যকর হতে কয়েক মাস সময় লাগবে৷ কিন্তু এর মাধ্যমে জার্মানিতে সমকামী দম্পতিদের ‘সিভিল পার্টনারশিপ’ সরাসরি বিবাহ হিসেবে বিবেচিত হবে না৷ ইচ্ছুক দম্পতিদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে৷ অথবা তাঁরা আগের অবস্থাতেও থাকতে পারেন৷ অবশ্য নতুন করে এই মর্যাদা আর দেওয়া হবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার
নতুন আইনের আওতায় বিবাহিত দম্পতি হিসেবে সমকামীরা সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে সমানাধিকার পেলেন৷ ফলে সব বৈষম্যই দূর হয়ে গেল৷ আইন অনুযায়ী, এবার তাঁরা একসঙ্গে কোনো শিশুকে দত্তক নিতে পারবেন৷ নতুন আইনের ফলে এই অধিকারই তাঁদের প্রধান প্রাপ্তি৷
ছবি: picture alliance/dpa/N.Sangnak
ইউরোপে জার্মানি পথিকৃৎ নয়
অন্য অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জার্মানি পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল৷ বিশ্বের ২০টি দেশে সমকামীদের বিবাহের অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান ও নিউজিল্যান্ড জার্মানির আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/E. Contini/NurPhoto
আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা
সংসদ ‘সবার জন্য বিবাহ’ অনুমোদন দিলেও এই সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী বলে মনে করছে রক্ষণশীল কিছু মহল৷ অতএব তাঁরা জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হবার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আইন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ অবশ্য মনে করে যে, সমকামীদের বিবাহের স্বীকৃতির জন্য সংবিধান পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
5 ছবি1 | 5
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক রেসোলিউশন বা প্রস্তাবে এই প্রতিটি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। ইইউ-র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। তাদের উপর কোনো রকম আক্রমণ করা যাবে না। বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। আর সকলের মতো এই গোষ্ঠীর মানুষেরাও স্বাভাবিক এবং স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করতে পারবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪৯২ জন আইনপ্রণয়নকারী এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৪১ জন বিপক্ষে। ৪৬ জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। অর্থাৎ, বিপুল ভোটে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
পোল্যান্ড অবশ্য এরমধ্যেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সেখানকার প্রশাসনের বক্তব্য, তাদের দেশ রক্ষণশীল। সেখানে সমাজ কীভাবে চলবে, তা দেখার এবং বোঝার দায়িত্ব সার্বভৌম সরকারের। নীতি প্রণয়নও সে ভাবেই হয়। স্বাধীন সরকারের নীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
এখানেই উদ্বেগ। ইউরোপের বহু মানবাধিকার গোষ্ঠীর বক্তব্য, ইইউ যে প্রস্তাব নিয়েছে, তা যুগান্তকারী। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হবে তো! বহু সিদ্ধান্তই খাতায় থেকে যায়। বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না। এক্ষেত্রেও সেই একই বিষয় ঘটবে না তো!