জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের যে প্রস্তাব তুলেছে, তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে৷ ৪৭ সদস্যের ২৭ সদস্য মৃত্যুদণ্ড বিলোপের পক্ষে আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩ সদস্য৷
বিজ্ঞাপন
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিপক্ষে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, বতসোয়ানা, বুরুন্ডি, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরাক, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও ভোট দিয়েছে৷
সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আইন রয়েছে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে৷ তবে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে আসছে, সমকামিতা কোনো অপরাধ নয়৷ সে দাবির প্রেক্ষিতেই সমকামীদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তুলে দেওয়া হোক– এই মর্মে একটি প্রস্তাব আনা হয় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে৷
সমকামিতা যে প্রাকৃতিক, তার প্রমাণ এই প্রাণীরা
প্রাণীজগতে সমকামী যুগল একেবারে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার৷ গবেষণায় দেখা গেছে পোকামাকড়, মাছ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে প্রায় ১৫০০ প্রজাতিতে সমকামিতা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
লম্বা গলার জিরাফ
জিরাফদের সমলিঙ্গের মধ্যে ভালোবাসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ এমনকি গবেষকরা বলছেন, জিরাফদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই সমলিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বোতলনাক ডলফিন
এই প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের ডলফিনের মধ্যেই সমকামিতা দেখা যায়৷ মুখ এবং নাক দিয়ে স্পর্শ করে সঙ্গীকে আদর করে তারা৷ পুরুষ ডলফিনরা সাধারণত উভকামী৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
সিংহের আনুগত্য
পশু রাজ সিংহের মধ্যেও সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ দুই থেকে চারটি পুরুষ সিংহ একটি জোট গঠন করে, যাতে সিংহীরা তাদের কাছে আসতে না পারে৷ অন্য জোট থেকে বাঁচতে একে অপরের উপর ভীষণ নির্ভরশীল তারা৷
ছবি: ARTIS/R. van Weeren
বাইসন
পুরুষ বাইসনদের মধ্যে সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ কেননা স্ত্রী বাইসনদের সঙ্গে বছরে একমাত্র একবার মিলন হয় তাদের৷ তাই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ বাইসনরা একে অপরের সঙ্গে দিনে বহুবার মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature Picture Library
বানরদের ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’
ম্যাকাক প্রজাতির নারী ও পুরুষ বানর – উভয়ের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে৷ যেখানে পুরুষরা মাত্র একরাতের জন্য সমলিঙ্গের সঙ্গে মিলিত হয়, সেখানে স্ত্রী বানররা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলে এবং একে অপরের সঙ্গে থেকে যায়৷
ছবি: picture alliance/robertharding
অ্যালবাট্রসদের বন্ধন
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লেসন অ্যালবাট্রসরা তাদের সমকামী বন্ধনের জন্য ভীষণভাবে পরিচিত৷ এরা এতটাই বন্ধনে জড়িয়ে যায় যে পুরো জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়, যেন মনে হবে একটি সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রীর সুখি পরিবার৷
ছবি: imago/Mint Images
যৌন-বিকারগ্রস্ত বনোবো
পিগমি শিম্পাঞ্জী বা বনোবোকে বলা হয় মানবজাতির সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রাণী৷ তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মিলিত হতে থাকে, এমনকি সমলিঙ্গের সঙ্গে৷ নিজেদের আনন্দের জন্যই এটা করে তারা৷ তবে এটা ঠিক তারা এটাকে নিজেদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করা এবং দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় হিসেবেও মনে করে৷ স্ত্রীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/F. Lanting
প্রতি ৫টির মধ্যে একটি রাজহাঁস সমকামী
অনেক পাখিদের মতো রাজহাঁসরাও একগামী এবং বছরের পর বছর ধরে তারা এক সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়৷ এদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গী হিসেবে সমলিঙ্গের হাঁসকে বেছে নেয়৷ শতকরা ২০ ভাগ রাজহাঁস সমকামী এবং তারা প্রায়ই পরিবার গঠন করে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/P. Frischknecht
সিন্ধুঘোটক
পুরুষ সিন্ধুঘোটক চার বছর বয়সের আগে যৌনসক্ষমতা লাভ করে না৷ এর আগ পর্যন্ত তাদের প্রায় সবাই সমকামী থাকে৷ যখন তাদের চার বছর হয় তখন হয় তারা উভগামী হয়, না হলে কেবল প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী সিন্ধুঘোটকদের সঙ্গে মিলিত হয়৷
ছবি: imago/Nature in Stock
ভেড়াদের পছন্দ
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুরুষ ভেড়ার পালের ৮ ভাগ ভেড়াই সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের পছন্দ করে, এমনকি প্রজননের সময়ও৷
ছবি: Getty Images/M. cardy
10 ছবি1 | 10
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ২৭ সদস্য মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয়৷ ১৩ জন সদস্য ভোট দেয়ার পাশাপাশি, সাতটি সদস্য রাষ্ট্র ভোট দানে বিরতও থাকে৷ তারপরও মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়ার প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে৷
বিশ্বের ছয়টি দেশে সমকামিতাকে মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ দেশগুলো হলো: সৌদি আরব, ইরান, সুদান, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া এবং সোমালিয়া৷
বাংলাদেশে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ তবে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না৷ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, সমকামিতার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অন্য কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, যা ১০ বছরও হতে পারে৷ এই আইনে একই সঙ্গে অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে৷ দণ্ডবিধিতে সমকামিতাকে প্রাকৃতিক নিয়মবিরুদ্ধ যৌনতা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও প্রাকৃতিক নিয়মের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নাই৷
এ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ভোট দেয়ার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এখানেও মৃত্যুদণ্ড চালু হবে৷ বাংলাদেশের আইনে এর সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ সমকামীতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তার সেই কঠোর অবস্থানই প্রকাশ করছে৷ ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে সমকামীতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কোনো সুযোগ বা অবস্থা সরকারের নাই৷’’
‘সমকামিতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কোনো সুযোগ বা অবস্থা সরকারের নাই’
বাংলাদেশের ইনভিজিবল মাইনরিটি:
বাংলাদেশে সমকামী বা এলজিবিটি কমিউনিটির লোক থাকলেও তাঁরা এখনও ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি’৷ বাংলাদেশে সমকামীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ‘বয়েজ অব বাংলাদেশ’ (বিওবি)৷ ‘গে বাংলাদেশ’ নামে আরো একটি সমকামী গ্রুপের নাম জানা যায়৷ এই গ্রুপ দু'টি অনলাইন ভিত্তিক৷ তবে তাদের এখন আর সক্রিয় দেখা যায় না৷
বাংলাদেশে সমকামীদের ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি’ শিরোনামে গবেষণা করেছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স (জিএইচআরডি)৷ ২০১৫ সালের ১৭ জুন প্রকাশিত ওই গবেষণাটি করা হয় বাংলাদেশের ৫০ জন সমকামী এবং সমকামী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে৷ আর সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সমকামীদের ব্যাপারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক৷ আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
আপনার পছন্দের তারকাদের মধ্যে যাঁরা সমকামী
একটা সময় ছিল যখন কেউ নিজের সমকামিতার বিষয়টি প্রকাশ করতে ইতস্তত করতো৷ কিন্তু সময় বদলেছে৷ একে একে অনেক তারকাই এখন পর্যন্ত নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
এল্টন জন
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ঐ বছরের ডিসেম্বরে নিজের ‘সিভিল পার্টনার’ চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড ফার্নিশকে বিয়ে করেন ‘ক্যান্ডেল ইন দ্য উইন্ড’ খ্যাত স্যার এল্টন জন৷ ১৯৭৬ সালে নিজেকে উভকামী (বাইসেক্সুয়াল) হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি৷ এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে সমকামী হিসেবে জীবনযাপন করছেন৷ সমলিঙ্গ বিয়ে ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে বেশ সোচ্চার এল্টন জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জোডি ফস্টার
১৯৭৬ সালে ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবিতে শিশু পতিতা চরিত্রে অভিনয় করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী জোডি ফস্টার৷ তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করতে এক তরুণের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টার কথাও অনেকেই জানেন৷ সেই ফস্টার ২০১৩ সালের গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠানে তাঁর সমকামী হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন৷
ছবি: Reuters
জর্জ মাইকেল
‘কেয়ারলেস হুইসপার’ – কে শোনেননি! ২০০৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে জর্জ মাইকেল বলেন, ‘‘আশির দশকে আমি অনেক মেয়ের সঙ্গে শুতাম, কিন্তু কখনও মনে হয়নি এটা কোনো সম্পর্কে গড়াতে পারে, কারণ আমি জানতাম, ইমোশনালি, আমি একজন সমকামী৷ আমি তাঁদের ‘কমিট’ করতে চাইতাম না, কিন্তু আমি তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম৷ তারপর আমার নিজের কাছেই নিজেকে লজ্জিত মনে হতে লাগলো, মনে হলো আমি মনে হয় তাঁদের ব্যবহার করছি৷’’
ছবি: Getty Images/Afp/Evert Elzinga
এলেন ডিজেনারেস
২০১৪ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে তোলা এই সেল্ফির কথা নিশ্চয় অনেকের মনে আছে৷ ছবিটি তুলেছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা এলেন ডিজেনারেস (সাদা পোশাক পরিহিত)৷ ১৯৯৭ সালে নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করেন জনপ্রিয় এই মার্কিন কমেডিয়ান, টেলিভিশন উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী৷ ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ঐ বছরই এলেন বিয়ে করেন তাঁর সঙ্গী অভিনেত্রী ও মডেল পোর্শিয়া ডি রোসিকে৷
ছবি: picture alliance/AP Images/E. DeGeneres
রিকি মার্টিন
২০১০ সালে নিজের ওয়েবসাইটে ‘‘লিভিন’ লা ভিডা লোকা’’ গায়ক রিকি মার্টিন জানান, ‘‘আমি এটা বলতে গর্ববোধ করছি যে, আমি একজন সৌভাগ্যবান সমকামী৷’’ অবশ্য তার ১০ বছর আগে তিনি তাঁর এই পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছিলেন৷ পরবর্তীতে ‘ল্যারি কিং লাইভ’ অনুষ্ঠানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্বীকারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি আগে জানতাম যে নিজের পরিচয় প্রকাশের পর কতটা ভালো লাগে, তাহলে সেটা আমি আরও আগেই করতাম৷’’
ছবি: Getty Images
সিন্থিয়া নিক্সন
‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ খ্যাত অভিনেত্রী সিন্থিয়া নিক্সন ২০১০ সালে তাঁর সমকামী হওয়ার কথাটি সবাইকে জানান৷ অবশ্য তিনি প্রথমে ‘গে বাই চয়েস’, অর্থাৎ ‘ইচ্ছে করে সমকামী’ কথাটি বলে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন৷ পরে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘‘আমি বিশ্বাস করি উভকামিতা বিষয়টি বাস্তবতা, এখানে বাছাবাছির সুযোগ নেই৷ তবে আমি সমকামী হওয়ার বিষয়টি ‘বেছে’ নিয়েছি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Foley
টিম কুক
জবসের পর এখন অ্যাপল সামলাচ্ছেন টিম কুক৷ ২০১৪ সালে লেখা এক প্রবন্ধে কুক সমকামী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন৷ তিনি লিখেন, ‘‘সমকামী হয়ে আমি গর্বিত৷ আমি মনে করি, ঈশ্বর আমাকে যত সেরা উপহার দিয়েছেন তার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য একটি৷ আমার এই বক্তব্য (অ্যাপলের প্রধান একজন সমকামী) যদি অন্য কারও জন্য, যাঁরা সমকামী পরিচয় দিতে সাহস পাচ্ছেন না, অনুপ্রেরণার উৎস হয় তাহলে এই ব্যক্তিগত বিষয়টি প্রকাশ করাই যায়৷’’
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
ইয়ান থর্প
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পাঁচবার অলিম্পিক সোনা জেতা সাঁতারু ইয়ান থর্প ২০১৪ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের সমকামী হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়স যখন ১৬ ছিল তখন থেকেই গণমাধ্যম আমাকে আমার লিঙ্গের বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে৷ তখন আমি তাদের সত্য কথাটি বলিনি৷ আজ (বয়স ৩১) আমি স্বস্তি নিয়ে বলছি যে, আমি সমকামী এবং আবার বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সবাই বিষয়টি জানার পর আমাকে সমর্থন করেছেন৷’’
ছবি: AP
নিল প্যাট্রিক হ্যারিস
জনপ্রিয় টেলিভিশন কমেডি সিরিজ ‘হাও আই মেট ইওর মাদার’ এর স্টিনসন চরিত্রে অভিনয় করা নিল প্যাট্রিক হ্যারিস (ছবিতে ডানপাশে) ২০০৬ সালে বলেন, ‘‘আমি সমকামী, এই পরিচয় জানাতে পেরে গর্বিত৷’’ ২০১১ সালে নিউইয়র্কে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ২০১৪ সালে হ্যারিস তাঁ সঙ্গী বার্টকাকে (ছবিতে বামে) বিয়ে করেন৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
9 ছবি1 | 9
প্রতিবেদনে সমকামীরা তাঁদের প্রতি নির্যাতন এবং হুমকির কথাও বলেছেন৷ বলেছেন, আইনি বৈষম্য এবং মানবাধিকার লংঘনের কথা৷ এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সমকামীর সংখ্যা কত তা বলা হয়নি৷ আর এ নিয়ে কোনো জরিপের খোঁজও পাওয়া যায়নি৷ তবে জানা গেছে, বয়েজ অব বাংলাদেশ গ্রুপের নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি৷ আর এই গ্র্রুপের সদস্যরা শিক্ষিত, এমনকি পিএইচডি ডিগ্রীধারীও আছেন৷
২০১৫ সালের জুন মাসে সমকামীরা ঢাকায় ঘরোয়াভাবে ‘ধী-এর গল্প’ নামে সমকামীদের একটি কমিক স্ট্রিপ প্রদর্শন করেন৷ এর আগেও সমকামীরা ‘রূপবান’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন৷ প্রকাশ করা হয় সমপ্রেমী কবিতার বই ‘রুপঙতি’৷
গত বছরের ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগান এলাকায় সমকামীদের অধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘রূপবান’ সম্পাদক জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যা করা হয়৷
দু'জনের হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে গত বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন এলজিবিটিরা ‘রংধনু’ র্যালি বের করার চেষ্টাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এলাকা থেকে চার জন সমকমীকে আটক করে পুলিশ৷
সমকামিতা বৈধ এমন কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ
বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হলেও, তারা বৈষম্যের শিকার হন৷ ছবিঘরে থাকছে এমনই আটটি দেশের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্ক
১৮৫৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য সমকামিতাকে বৈধতা দেয়৷ এরপর তুরস্ক স্বাধীন হলে সেই আইন বলবৎ রাখে৷ তবে সে দেশের সংবিধানে সমকামীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন তেমনি সামাজিকভাবেও সমকামীদের এখনও বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. O. Sandal
মালি
পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সংবিধানে সমকামী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ তবে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সমকামিতা পছন্দ করে না৷ তাই বৈধ হলেও মালির সমকামীরা বেশ ভালোই বৈষম্যের শিকার হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Saget
জর্ডান
১৯৫১ সালে দেশটিতে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়৷ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের তুলনায় সেখানকার সমকামীরা বেশ ভালোই আছে৷ সরকারও আইন করে সমকামীদের ‘অনার কিলিং’-এর হাত থেকে রক্ষা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস এই দেশটিতে৷ সেখানকার আইনে সমকামিতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়নি৷ ২০০৩ সালে একবার সেরকম উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Rudianto
আলবেনিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সমকামিতা বৈধ৷ এমনকি আইন করে সমকামীদের বৈষম্যের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: SWR/DW
বাহরাইন
১৯৭৬ সালে সেখানে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়৷ তবে দেশটিতে এখনও প্রকাশ্যে ছেলেরা মেয়েদের, কিংবা মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরতে পারে না৷
ছবি: Getty Images
ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর)
পশ্চিম তীরের জর্ডান অংশে ১৯৫১ সাল থেকে সমকামিতা বৈধ৷ তবে গাজাতে নয়৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, গাজায় যে আইনের কারণে সমকামিতা নিষিদ্ধ সেটা বলবৎ হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে৷
ছবি: Shadi Hatem
ইরাক
দেশটি সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও বিষয়টি এখনও সেখানে ‘ট্যাবু’ হয়েই আছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Safin Hamed
8 ছবি1 | 8
আর চলতি বছরের ১৯ মে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের আটিবাজার ছায়ানীড় কমিউনিটি সেন্টার থেকে ২৭ জন সমকামীকে আটক করে৷ তাঁরা ওই কমিউনিটি সেন্টারে একত্রিত হয়েছিলেন৷ পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে পুলিশ রিমান্ডেও নেয়া হয়৷
নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, জুলহাজ-তনয় হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি অধিকার সংক্রান্ত তৎপরতা থমকে গেছে৷ তাঁদের ওপর পুলিশের নজরদারি এবং চাপও বেড়ে গেছে৷ যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের একাংশ দেশের বাইরে চলে গেছেন৷ আর যাঁরা আছেন, তাঁরা এখন আর প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা চালাচ্ছেন না৷
এই পরিস্থিতি নিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘তাঁদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে পদক্ষেপ নেয়ার মতো কোনো অবস্থা নাই৷ ধর্মীয় এবং সামাজিক গোষ্ঠীর চাপের মুখে তাই বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকলেও তার পক্ষেই অবস্থান নিতে হয় সরকারকে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কেউ অধিকারের কথা বললেও তা বাস্তবে এখনো সম্ভব নয়৷’’
প্রসঙ্গত, ভারতেও সমকামীতাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়৷ সকামীদের অধিকার রক্ষা এবং শাস্তির বিধান বিলোপ করতে গিয়ে আইনি লড়াই চালিয়েও শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে হেরে যায় সমকামী অধিকার কর্মীরা৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...