ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই ম্যাচে হাতে সমকামীদের প্রতি সমর্থন জানাতে প্রাইড বাহুবন্ধনী পরেছিলেন জার্মানির অধিনায়ক ও গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার৷
বিজ্ঞাপন
বিষয়টির তদন্ত করে উয়েফা বলেছে, এর জন্য নয়ার কিংবা জার্মান ফুটবল ফেডারেশনকে শাস্তি পেতে হবেনা৷
উয়েফার নিয়ম অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক প্রতীক' নির্দেশকারী কিছু পরা বা প্রদর্শন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এর দায়ে খেলোয়াড় ও তার ফুটবল সংস্থাকে জরিমানা করা হতে পারে৷
নয়ারের প্রাইড বাহুবন্ধনী এই নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল৷ পরে উয়েফা জানায় যে, এই বাহুবন্ধনী আসলে ‘বৈচিত্র্যের প্রতীক এবং এটি ভালো কারণে পরা হয়েছে'৷ সেজন্য নয়ার বা জার্মান ফুটবল ফেডারেশনকে কোনো শাস্তি দেয়া হবেনা৷
ইউরো খেলছেন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত যে ফুটবলাররা
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ‘উয়েফা ইউরো ২০২০’৷ ইউরোপের ২৪টি দেশ এতে অংশ নিচ্ছে৷ তবে এসব দেশে আছেন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কয়েকজন ফুটবলার৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: REUTERS
কিলিয়ান এমবাপে (ফ্রান্স)
ফ্রান্স দলে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন৷ তাদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন এমবাপে৷ ২২ বছর বয়সি এমবাপের জন্ম প্যারিসে৷ তবে তার বাবা ক্যামেরুন ও মা আলজেরিয়ার৷ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অন্য ফুটবলাররা হচ্ছেন পাউল পগবা (গিনি), এনগোলো কান্তে ও মুসা সিসোকো (মালি), ডেম্বেলে (আইভরিকোস্ট) ও করিম বেনজেমা (আলজেরিয়া)৷
ছবি: REUTERS
রোমেলু লুকাকু (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা লুকাকুর বাবা-মার জন্ম ডিআর কঙ্গোতে৷ ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল বেলজিয়াম৷ লুকাকু করেছিলেন চার গোল৷ বেলজিয়াম দলে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অন্য ফুটবলাররা হলেন মিশি বাচুয়াই ও ক্রিস্টিয়ান বেনটেকে (ডিআর কঙ্গো) ও জেরেমি ডকু (ঘানা)৷
ছবি: picture-alliance/Sputnik/M. Bogodvid
আন্টোনিও রুডিগার (জার্মানি)
১৯৯০-এর দশকে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে রুডিগারের পরিবার বার্লিনে এসেছিল৷ এছাড়া লেরয় সানের বাবার জন্ম সেনেগালে, গ্নাবরির বাবা আইভরিকোস্টের ও জামাল মুসিয়ালার বাবা এসেছেন নাইজেরিয়া থেকে৷
ছবি: Gleb Garanich/Reuters
ডাভিড আলাবা (অস্ট্রিয়া)
বাবার জন্মভূমি হিসেবে নাইজেরিয়ার হয়েও খেলতে পারতেন আলাবা৷ তবে জাতীয় দল হিসেবে নিজ জন্মভূমিকেই বেছে নিয়েছেন এই ডিফেন্ডার৷ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অন্য ফুটবলাররা হচ্ছেন ভালেন্টিনো লাজারো (বাবা অ্যাঙ্গোলার) ও করিম ওনিসিয়ো (বাবা নাইজেরিয়ার)৷
ছবি: Markus Ulmer/imago images
ব্রেল এমবোলো (সুইজারল্যান্ড)
এমবোলোর (ডানে) জন্ম ক্যামেরুনে৷ ছয় বছরের এমবোলো ও আরেক সন্তানকে নিয়ে তার মা সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ এছাড়া সুইজারল্যান্ড দলের অন্য আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা হলেন ডেনিস জাকারিয়া (বাবা ডিআর কঙ্গোর, মা সুদানের) ও কেভিন এমবাবু (মা ডিআর কঙ্গোর)৷
ছবি: Christof Stache/REUTERS
মেম্ফিস ডেপায় (নেদারল্যান্ডস)
ডেপায়ের বাবা এসেছেন ঘানা থেকে৷ তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তার বাবা তাদের পরিবার ছেড়ে চলে যায়৷ তাই প্রায়ই জার্সিতে প্রথম নাম ব্যবহার করেন মেম্ফিস ডেপায়৷ নেদারল্যান্ডস দলে আরেক আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফুটবলার নেথান আকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Wire/J. Walton
উইলিয়াম কারভালিয়ু (পর্তুগাল)
অ্যাঙ্গোলায় জন্ম নেয়া ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কারভালিয়ু ইতিমধ্যে পর্তুগালের হয়ে ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন৷ শিশু বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে পর্তুগাল চলে যান৷ গিনিবিসাউতে জন্ম নেয়া ডানিলো পেরেইরাও আছেন পর্তুগাল দলে৷
ছবি: Stanley Gontha/picture-alliance/Pro Shots
আলেক্সান্ডা ইসাক (সুইডেন)
স্ট্রাইকার ইসাকের বাবা-মা এসেছেন ইরিত্রিয়া থেকে৷ একসময় জার্মানির বুন্ডেসলিগা ক্লাব মাইনৎসে খেলা ইসাকের এখনকার ক্লাব স্পেনের রেয়াল সোসিয়েডাড৷ রবিন কুয়াইসন (বাবা ঘানার) ও কেন সেমাও (বাবা-মা ডিআর কঙ্গোর) আছেন সুইডেন দলে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
গ্লেন কামারা (ফিনল্যান্ড)
সবশেষ মৌসুমে স্কটিশ ক্লাব ব়্যাঞ্জার্সের হয়ে স্কটিশ লিগ জিতেছেন এই মিডফিল্ডার৷ তার মা-বাবা সিয়েরা লিওন থেকে এসেছেন৷ তবে কামারার জন্ম ফিনল্যান্ডে৷
ছবি: picture-alliance/AP/L. Vieira
বুকায়ো সাকা (ইংল্যান্ড)
১৯ বছর বয়সি সাকার মা-বাবা নাইজেরিয়া থেকে ইংল্যান্ড গেছেন৷ নাইজেরিয়া তাকে দলে পেতে চাইলেও তিনি ইংল্যান্ডকে বেছে নেন৷
ছবি: Andre Boyers/AP/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এদিকে, নয়ারের এমন বাহুবন্ধনী পরার সমালোচনা করে টুইট করেছিলেন জার্মানির চরম ডানপন্থি দল এএফডির একজন রাজ্য সাংসদ উভে ইয়োঙ্গে৷ সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ঐ বাহুবন্ধনীকে ‘এফ*****' আর্মব্যান্ড বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ পরে সমালোচনার মুখে ক্ষমা চেয়ে তিনি সেটি মুছে ফেলেন৷ এএফডির কো-লিডার আলিস ভাইডেল, যিনি নিজেও একজন সমকামী, ঐ টুইটের সমালোচনা করেছিলেন৷
এএফডির আরেক রাজনীতিবিদ ও বুন্ডেসটাগের সাংসদ গেওর্গ পাজদেরস্কিও নয়ারের প্রাইড বাহুবন্ধনী পরার ঘটনা নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছেন৷
এদিকে বুধবার মিউনিখে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচ খেলবে জার্মানি৷ সেই সময় হাঙ্গেরির সমকামীদের প্রতি সমর্থন জানাতে স্টেডিয়ামে রংধনু রং প্রদর্শনের দাবি করা হয়েছে৷
হাঙ্গেরিতে সম্প্রতি পাস হওয়া এক আইনে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপনে সমকামীদের অধিকারের পক্ষে কিছু বলা যাবেনা৷ সমকামীদের সাধারণ মানুষ হিসেবেও তুলে ধরা যাবেনা৷ এছাড়া ঐ আইনে এলজিবিটি অধিকার সম্পর্কে অপ্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষাদানও অবৈধ করা হয়েছে৷
জেডএইচ/কেএম
গতবছর সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানির রাজনীতিতে সমকামিতা
জার্মানিতে সমকামীদের অধিকারের লড়াই দীর্ঘদিনের৷ এখন তাদের অনেক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তবে এখনো তাদের নানা ধরনের বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার হতে হয়৷ কিন্তু সমকামিতা জার্মান রাজনীতিকে ধীরে ধীরে পালটে দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
বৈধতা, বিয়ের অধিকার
প্রুশিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে নাৎসি জার্মানিতে সমকামীরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হতেন৷ সমকামিতার অভিযোগে ছিল কারাদণ্ডের বিধান৷ এমনকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জার্মানি স্থাপিত হওয়ার পরও সমকামীদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি৷ তবে কয়েক দশকে সে অবস্থানের দ্রুতই পরিবর্তন হয়েছে৷ ১৯৬৯ সালে সমকামীদের শাস্তি দেয়ার বিধান বাতিল হলেও ২০১৭ সালে এসে তারা বিয়ের অধিকার পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
পার্লামেন্টে জয়
জার্মান পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান রাজনীতিবিদরা৷ কিন্তু তখনো অনেক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিলেন৷ ক্ষমতায় থাকা দল সিডিইউ-র ৩০৯ সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছিলেন বিরোধিতাকারীদের একজন৷ তবে পরবর্তী ভোটে রাজনীতিবিদরা যাতে দলের মতাদর্শ মেনে ভোট না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ভোট দেন, সে আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/O. Messinger
প্রকাশ্যে সমকামী রাজনীতিবিদ
সমকামীদের অধিকারের আন্দোলন যত জনপ্রিয় হতে থাকে, জার্মান রাজনীতিতেও পড়ে এর প্রভাব৷ অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে থাকেন৷ ২০০১ সালের সিটি নির্বাচনে বার্লিনের এসপিডির মেয়র প্রার্থী ক্লাউস ভোভেরাইট দলের সম্মেলনে তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘‘আমি সমকামী এবং এটা খারাপ কিছু নয়৷’’ পরবর্তীতে ভোভেরাইট মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন৷
ছবি: Imago/W. Wagner
রক্ষণশীল দলে সমকামী নেতা
সমকামিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধীরে ধীরে সহনীয় করে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতিবিদরা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সফরে তার পার্টনার মিখায়েল ম্রোনৎসকে নিয়ে যেতেন৷ এখন এমনকি সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির এক নেত্রী অ্যালিস ভাইডেলও এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
সরকারে সমকামী মন্ত্রী
জার্মানির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান নিজেকে সমকামী ঘোষণা দেয়া প্রথম মন্ত্রী ৷ দলের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করা হয় স্পানকে৷ করোনা মহামারিতে নিজের দেশকে দারুণভাবে সামাল দেয়ায় দল ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি৷ ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের প্রধান হওয়ার লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে আছেন স্পান৷ জিতে গেলে তিনি হতে পারেন প্রথম সমকামী জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
এখনো রয়েছে বৈষম্য
রাজনীতিবিদ তো বটেই, জার্মান জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামীভীতি দূর হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন তারা৷ সম্প্রতি জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের এলজিবিটিকিউ ঘোষণা দেয়া ৩০ শতাংশ কর্মীই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন৷ জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না৷