এলজিবিটিকিউ-বিরোধী আইন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই টানাপড়েন চলছে হাঙ্গেরির৷ এর মধ্যেই এই আইন নিয়ে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে এই আইন কার্যকর করায় ইউরোপীয় আদালতে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে৷ এ নিয়ে গণভোট আয়োজনকে আইনটির বিষয়ে দেশের মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা বলেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা৷
নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ওরবান বলেছেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে ব্রাসেলস (ইইউ সদরদপ্তর) এই আইন নিয়ে হাঙ্গেরিকে আক্রমণ করে চলেছে৷’’
১৮ বছরের কম বয়সিদের কাছে এলজিবিটিকিউ সম্পর্কিত কোনো বিষয় তুলে ধরা নিষিদ্ধ করে আইনটি পাস করে ভিক্টর ওরবানের সরকার৷ এরপর থেকে এ নিয়ে ইউরোপজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ বুদাপেস্ট বলছে এই আইন শিশুদের সুরক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছে৷ কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, ওরবান শিশুকামের সঙ্গে সমকামকে গুলিয়ে ফেলেছেন এবং এর ফলে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে হুমকিতে ফেলা হয়েছে৷
ওরবান জানিয়েছেন, এই গণভোটে পাঁচটি প্রশ্ন থাকবে৷ বাবা-মায়ের ‘সম্মতি ছাড়া’ স্কুলে সন্তানের সঙ্গে কেউ ‘যৌনতা নিয়ে আলোচনা’ করুক, এটা সমর্থন করেন কিনা জানতে চাওয়া হবে নাগরিকদের কাছে৷ ‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন রূপান্তর বিষয়ে কথা বলা' সমর্থন করেন কিনা, এটিও থাকবে গণভোটের প্রশ্নে৷
সব প্রশ্নের উত্তরে সকল অংশগ্রহণকারীকে ‘না’ ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ওরবান৷ এখনও এই গণভোটের কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি৷
ইসরায়েলে তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে মোবাইল ফোনে নজরদারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার দুদিনের মাথায় এই গণভোটের ঘোষণা এলো৷ হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে এই নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্তত ৩০০ স্মার্টফোন হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে৷ দেশটিতে ‘নজরদারির আওতায়’ থাকাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক সাংবাদিকও৷ হাঙ্গেরি সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও দেশটিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকেই৷
এডিকে/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
জার্মানির রাজনীতিতে সমকামিতা
জার্মানিতে সমকামীদের অধিকারের লড়াই দীর্ঘদিনের৷ এখন তাদের অনেক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তবে এখনো তাদের নানা ধরনের বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার হতে হয়৷ কিন্তু সমকামিতা জার্মান রাজনীতিকে ধীরে ধীরে পালটে দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
বৈধতা, বিয়ের অধিকার
প্রুশিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে নাৎসি জার্মানিতে সমকামীরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হতেন৷ সমকামিতার অভিযোগে ছিল কারাদণ্ডের বিধান৷ এমনকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জার্মানি স্থাপিত হওয়ার পরও সমকামীদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি৷ তবে কয়েক দশকে সে অবস্থানের দ্রুতই পরিবর্তন হয়েছে৷ ১৯৬৯ সালে সমকামীদের শাস্তি দেয়ার বিধান বাতিল হলেও ২০১৭ সালে এসে তারা বিয়ের অধিকার পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. von Erichsen
পার্লামেন্টে জয়
জার্মান পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান রাজনীতিবিদরা৷ কিন্তু তখনো অনেক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিলেন৷ ক্ষমতায় থাকা দল সিডিইউ-র ৩০৯ সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছিলেন বিরোধিতাকারীদের একজন৷ তবে পরবর্তী ভোটে রাজনীতিবিদরা যাতে দলের মতাদর্শ মেনে ভোট না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ভোট দেন, সে আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/O. Messinger
প্রকাশ্যে সমকামী রাজনীতিবিদ
সমকামীদের অধিকারের আন্দোলন যত জনপ্রিয় হতে থাকে, জার্মান রাজনীতিতেও পড়ে এর প্রভাব৷ অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে থাকেন৷ ২০০১ সালের সিটি নির্বাচনে বার্লিনের এসপিডির মেয়র প্রার্থী ক্লাউস ভোভেরাইট দলের সম্মেলনে তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘‘আমি সমকামী এবং এটা খারাপ কিছু নয়৷’’ পরবর্তীতে ভোভেরাইট মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন৷
ছবি: Imago/W. Wagner
রক্ষণশীল দলে সমকামী নেতা
সমকামিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধীরে ধীরে সহনীয় করে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতিবিদরা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সফরে তার পার্টনার মিখায়েল ম্রোনৎসকে নিয়ে যেতেন৷ এখন এমনকি সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির এক নেত্রী অ্যালিস ভাইডেলও এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
সরকারে সমকামী মন্ত্রী
জার্মানির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান নিজেকে সমকামী ঘোষণা দেয়া প্রথম মন্ত্রী ৷ দলের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করা হয় স্পানকে৷ করোনা মহামারিতে নিজের দেশকে দারুণভাবে সামাল দেয়ায় দল ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি৷ ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের প্রধান হওয়ার লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে আছেন স্পান৷ জিতে গেলে তিনি হতে পারেন প্রথম সমকামী জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
এখনো রয়েছে বৈষম্য
রাজনীতিবিদ তো বটেই, জার্মান জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামীভীতি দূর হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন তারা৷ সম্প্রতি জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের এলজিবিটিকিউ ঘোষণা দেয়া ৩০ শতাংশ কর্মীই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন৷ জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না৷