যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা জুলিয়ান আসাঞ্জের। তিনি দোষ স্বীকার করবেন। নিজের দেশে ফিরতে পারবেন।
আসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চরবৃত্তির অভিযোগ ছিল। ছবি: Victoria Jones/empics/picture alliance
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের বিচারের মুখোমুখি হবেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। তার ৬২ মাসের কারাদণ্ড হবে। তিনি ইতিমধ্যেই এই সময়টা যুক্তরাজ্যে জেলে কাটিয়েছেন। ফলে এবার তিনি মুক্ত হয়ে অস্ট্রেলিয়া ফিরতে পারবেন। ইতিমধ্যেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন আসাঞ্জ।
গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে মার্কিন আইন ভঙ্গ করার জন্য ক্ষমা চাইবেন জুলিয়ান আসাঞ্জ। উইকিলিকস জানিয়েছে, ''আসাঞ্জ জেল থেকে বেরিয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের বাইরে চলে গেছেন।''
সামাজিক মাধ্যমে উইকিলিকস জানিয়েছে, ''বিশ্বজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যারা লড়ছেন, আইনসভার সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আসাঞ্জের মুক্তির জন্য যে প্রচার করেছিলেন সেটা জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।''
বলা হয়েছে, ''এর ফলে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার জন্য জমি তৈরি হয়েছিল। সেই আলোচনা সফল হয়েছে।''
সমঝোতা নিয়ে যা জানা গেছে
আসাঞ্জ উত্তর মারিয়ানা আইল্যান্ডের আদালতে বুধবার যাবেন। সোমবার নথিপত্র পেশ করা হয়ে গেছে। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি একটিমাত্র আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেবেন। জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে গোপনীয় বিষয় ফাঁস করা এবং চক্রান্তের দায় স্বীকার করবেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি তিনি!
সারাবিশ্বের সংবাদমাধ্যম যাঁকে নিয়ে আলোড়িত, তাঁকে কেউ কেউ ডাকছেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ নামে৷ কে এই ব্যক্তি, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/P. Nicholls
যার পোষ্য এই বেড়াল
ওপরের ছবিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তোলা, যখন লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাস ছিল জেমস নামে এই বেড়ালটির ঠিকানা৷ এই বেড়ালের মালিক জুলিয়ান আসাঞ্জ, যার দীর্ঘ ৭ বছর দূতাবাসের ভেতর বন্দি থাকার পালা শেষ৷ এখন তাঁর ঠিকানা মধ্য লন্ডনের একটি জেলখানা৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কে এই আসাঞ্জ?
উইকিলিকসের মাধ্যমে বহু গোপনীয় নথি ফাঁস করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ গ্রেপ্তার আতঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর ভয়ে ২০১২ সালের আগস্ট থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কেন গ্রেপ্তার?
ইকুয়েডর সরকার আসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করার পর থেকে সেই দূতাবাসেই অবস্থান করছিলেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার ইকুয়েডর কর্তৃক ওই রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের সিদ্ধান্তে আসার পর গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নেয় লন্ডন পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Pinney
কেন বাতিল রাজনৈতিক আশ্রয়?
ওপরের ছবিটি লন্ডনের সেই দূতাবাসের, যেখানে আসাঞ্জকে রাখা বাবদ প্রতি বছর ইকুয়েডর সরকারের খরচ হচ্ছিল আনুমানিক এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার! ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং দৈনন্দিন প্রটোকল লঙ্ঘনের’ কারণে তাঁর অ্যাসাইলাম বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো৷ কিন্তু শুধুই কি এটাই কারণ?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leal-Olivas
অভদ্র অতিথি
প্রেসিডেন্ট মোরেনো বলেন, ‘‘আমরা এই স্পয়েলড ব্র্যাট, অর্থাৎ বখে যাওয়া ছেলের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করছি৷’’ এর কারণ আসাঞ্জের বিভিন্ন উদ্ভট অভ্যাস৷ আসাঞ্জ নাকি মধ্যরাতে দূতাবাসের ভেতর সশব্দে স্কেটবোর্ডিং করতেন৷ এছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে ছিল দূতাবাসের কর্মীদের শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ৷ এত টাকা খরচ করে যে অতিথিকে রাখছিল ইকুয়েডর সরকার, সেই দেশের দূতাবাসের দেওয়ালেই নাকি নিজের মল-মূত্র ছড়াতেন এই ইন্টারনেট-সৈনিক!
ছবি: Reuters/P. Nicholls
অফিস থেকে বেডরুম
ইকুয়েডরের দূতাবাস আয়তনে খুব একটা বড় না হলেও একটি অফিসঘরকে সাজানো হয় আসাঞ্জের শয়নকক্ষ হিসাবে৷ কিন্তু দূতাবাসের ভেতর ধীরে ধীরে পালটাতে থাকে আসাঞ্জের ব্যবহার৷ দূতাবাসের কর্মীরা বলছেন, প্রায়ই নাকি নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতেন আসাঞ্জ৷ স্নান করতেন না মাসের পর মাস৷ মধ্যরাতে স্কেটবোর্ডিং করার পাশাপাশি জোরে জোরে গানও চালাতেন তিনি, যা একটি দূতাবাসের জন্য বেমানান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Voskresenskiy
জাতীয় লজ্জা
ছোট দেশ ইকুয়েডর আসাঞ্জের কাণ্ড-কারখানাকে মোটেও ভালো নজরে দেখেনি৷ জানা গেছে, আসাঞ্জের আচরণকে দূতাবাসের ভেতর অনেকেই দেখতেন ‘ইকুয়েডরের লজ্জা’ হিসাবে৷ ফলে, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন শুধু আন্তর্জাতিক চাপে নয়, আসাঞ্জের অভদ্র আচরণের কারণেও ইকুয়েডর বাতিল করেছে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন৷ সাথে, জুটেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হবার বদনামও৷
ছবি: picture-alliance/J.Wiseman
গোপন তথ্য ফাঁস
উইকিলিকস বিখ্যাত বিভিন্ন রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য৷ এবং ইকুয়েডরের কাছে আশ্রয় পাওয়া সত্ত্বেও আসাঞ্জ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট মোরেনোর বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ফাঁস করে দেন৷ এর সাথে, গোপন অ্যাকাউন্টে থাকা বিশাল অঙ্কের অর্থের হদিশও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন আসাঞ্জ৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
আসাঞ্জের পক্ষে যারা...
উইকিলিকসের খবর সামনে আসার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে উঠে আসছিল আসাঞ্জের পক্ষে আওয়াজ৷ বৃহস্পতিবার আসাঞ্জ গ্রেপ্তার হবার পরও দেখা যায় একই রকমের প্রতিক্রিয়া৷ ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনেই প্রতিবাদে নামেন বেশ কয়েকজন৷ দাবি জানান আসাঞ্জকে মুক্ত করার৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হিসাবে খ্যাত ব্যক্তির সাথে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Stillwell
9 ছবি1 | 9
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতার ৬২ মাস মাস কারাদণ্ড হতে পারে। তিনি এই সময়কাল ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যে জেলে কাটিয়েছেন।
দীর্ঘ আইনি লড়াই
২০০৬ সালে আসাঞ্জ উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর এই ওয়েবসাইট হাজার হাজার পাতার মার্কিন সামরিক নথি প্রকাশ করে। তার মধ্যে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সামরিক নথিও ছিল। এছাড়া কূটনীতিকরা যে সব বার্তা পাঠিয়েছিলেন, সেসবও ফাঁস করে দেন তিনি।
২০১০ সালে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। আসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তিনি জামিন পান।
২০১২ সাল তিনি সাত বছর লন্ডনে ইকুয়েডোরের দূতাবাসে কাটান। ধর্ষণের অভিযোগে তাকে যাতে গ্রেপ্তার না করা যায়, তার জন্য এই কাজ করেছিলেন তিনি। আসাঞ্জের আশংকা ছিল, তাকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানে তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল। পরে সুইডেনে তার বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়।
২০১৯ সালে তাকে ইকুয়েডরের দূতাবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের জেলে ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, ''আসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলাটা দীর্ঘদিন ধরে টেনে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে নতুন করে কিছু পাওয়া যাবে না।''