1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইলেকট্রিক যানবাহন বাড়ছে কেনিয়ায়

২৭ মে ২০২০

বায়ু ও শব্দ দূষণের কারণে বিশ্বের অনেক মেগাসিটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে৷ কেনিয়ার নাইরোবিতে বৈদ্যুতিক গাড়ির মাধ্যমে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে৷ দেশটি এক্ষেত্রে আফ্রিকার জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে৷

নাইরোবির একটি ইলেকট্রিক গাড়িছবি: DW/Sophie Mbugua

লেরয় মাইনা ভোরেই সাইকেল ক্যারিয়ার নিয়ে নাইরোবির রাজপথে বেরিয়ে পড়েন৷ আশেপাশের বস্তি এলাকায় তিনি খাদ্য নিয়ে যান৷ এ দিন অস্বাভাবিক রকম বৃষ্টি পড়ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কেনিয়ায় শুষ্ক ও বর্ষার মরসুম ওলটপালট হয়ে গেছে৷ সোলার ই-সাইকেল্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে মাইনা সৌরশক্তি চালিত পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক সাইকেল ব্যবহার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন দিনে ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হলে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যায়৷ যেদিন রোদ ওঠে, সে দিন ১০০ কিলোমিটার দূরত্বও অতিক্রম করা সম্ভব৷ অনেক রোদ উঠলে সোলার প্যানেল রেঞ্জ বাড়িয়ে দেয়৷’’

মাল ভরা থাকলেও ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে সাইকেল ক্যারিয়ার চলতে পারে৷ ছাদের উপর সৌর প্যানেল শুধু বৃষ্টির সময় মাথা ঢাকে না, এমন দুর্যোগের সময়ও ব্যাটারিও চার্জ করে৷

পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রযুক্তি

লেরয় মাইনা কোয়ানজা টুকুলে নামের ক্ষুদ্র সংস্থায় কাজ করেন৷ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শহরের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে সস্তায় খাবার সরবরাহ করেন৷ এমন সাইকেল থাকায় কোম্পানির খুব সুবিধা হয়েছে৷ কোয়ানজা টুকুলে ফুডস-এর খাদিজা মোহামেদ-চার্চিল বলেন, ‘‘আমরা টেকসই পদ্ধতি অনুযায়ী চলতে চাই৷ সেটাই প্রধান উদ্দেশ্য৷ আমরা অবশ্য অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে চাই৷ মূলত দরিদ্র ক্রেতাদের সামর্থ্যের কথাও ভাবতে চাই৷ ‘সবুজ জ্বালানী' ব্যবহার করলে তাদের আরও সুবিধা হবে৷ আমরা যে সোলার বাইক ব্যবহার করি, তার জন্য জ্বালানীর কোনো খরচ নেই৷ মোটরবাইকের তুলনায় আরও বেশি মালপত্র বহন করা যায়৷’’ 

আফ্রিকার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে কেনিয়া

05:49

This browser does not support the video element.

‘সোলার ই-সাইকেলস’ নামের স্টার্ট-আপ কোম্পানি এই ইলেকট্রিক সাইকেল তৈরি করেছে৷ সোলার ই-সাইকেলস কোম্পানির ম্যানেজার আলেক্স মাকালিওয়া কেনিয়া তথা আফ্রিকা মহাদেশে বৈদ্যুতিক যানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ তিনি বলেন, ‘‘টেকসই মোবিলিটি খুবই সুন্দর, কারণ সেটি পরিবেশের জন্য ভালো৷ বিশেষ করে কেনিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ, যেখানে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরে জনসংখ্যা হু হু করে বেড়ে যাবে৷ তাই সব সময়ে পরিবেশের বিষয়টিকে জোরালোভাবে সামনে রাখতে হবে৷’’

বৈদ্যুতিক যানবাহনের বিপুল সম্ভাবনা

কেনিয়ার বিদ্যুতের প্রায় ৮০ শতাংশের উৎস পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি৷ ফলে বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের উপযুক্ত পরিবেশ সেখানে রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও মাত্র ৩০০টি বিদ্যুতচালিত যান চালু আছে৷ কেনিয়ায় ই-মোবিলিটি আরও জোরদার করতে উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন৷ বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত গাড়ি বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে না৷ এখনো পর্যন্ত দেশে কোনো চার্জিং স্টেশন নেই বললেই চলে৷ নাইটস এনার্জি কোম্পানির ফিলিক্স কামিরি মনে করেন, ‘‘বৈদ্যুতিক গাড়িকে মূল স্রোতে আনতে হলে আমাদের দ্রুত চার্জ করার ব্যবস্থার প্রয়োজন৷ সেটা করতে হলে ইলেকট্রিক গাড়ি চাই৷ তাই কিছু লোককে সবার আগে ঝুঁকি নিতে হবে৷’’

কেনিয়ার ‘নাইটস এনার্জি’ কোম্পানি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি করছে ও সৌরবিদ্যুৎচালিত চার্জিং স্টেশন বসাচ্ছে৷ নাইরোবি শহরের মধ্যে ঘোরাফেরার জন্য একবার ব্যাটারি চার্জ করে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করা যায়৷ কিন্তু দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় পৌঁছনো সম্ভব নয়৷

প্রকৃতির জন্য ভালো

প্রকৃতি ও পশুপাখির জন্য সংরক্ষিত এলাকায় সেটা কোনো সমস্যা নয়৷ যেমন নাইরোবির উত্তরে প্রায় ৪ ঘণ্টা দূরত্বে ওল পাজেতা অঞ্চল৷ একটি ল্যান্ডক্রুইজার একসময় বিকট শব্দ করে পেট্রোলে চলত৷ এখন সেই গাড়ির মধ্যে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসানো হয়েছে৷ ক্যাম্প অ্যাসিলিয়ার কর্মী স্টিফেন সিয়াপান নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘এর ফলে যে নীরবতা সৃষ্টি হয়, তা আমার খুব পছন্দের৷ প্রাণীদের কাছাকাছি গাড়ি চালালে প্রাণীগুলি কোনো শব্দ শুনতে পায় না, তাদের বিরক্ত করা হয় না৷ আমরা প্রাণীর কাছে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷ অন্যান্য জ্বালানিযুক্ত গাড়ির মতো শব্দ করে ইঞ্জিন চালু করে প্রাণীগুলিকে বিরক্ত করা হচ্ছে না৷’’

সুইডেনের ওপিবাস কোম্পানি এ সাফারি-গাড়িটির ইঞ্জিন বদলে দিয়েছে৷ নাইরোবি শহরে এই কোম্পানি বর্তমানে গাড়ি, মোটরসাইকেলের রূপান্তর ঘটাচ্ছে৷ এই কোম্পানি অদূর ভবিষ্যতে বাসেও ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসানোর কাজ করবে৷ প্রায় ৪০ জন কর্মী কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন৷ সহ প্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ ল্যোভস্ট্রোম এর মাধ্যমে কেনিয়ার জন্য শুধু পরিবেশগত সুবিধাই নয়, অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আরও গভীর স্তরে উৎপাদনের দিকে আমরা এগোবো৷ অর্থাৎ গোটা অঞ্চলে বৈদ্যুতিক যানের জন্য কেনিয়াকে আমরা কেন্দ্রীয় ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলবো৷ তখন আর আমদানির প্রয়োজন হবে না৷ এখানে যান তৈরি হলে সেগুলি এখানে আরও সহজে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে৷ তখন এমন যানের প্রসারও বাড়বে৷ তখন গোটা পরিবহণ ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও টেকসই করে তোলা সম্ভব হবে৷’’

কেনিয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ি এখনো বিরল৷ কিন্তু সে দেশে ব্যাপক আকারে এমন যান চালু করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে৷ তখন নাইরোবি শহরের বায়ু দূষণও অনেক কমে যাবে৷

টোমাস হাসেল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ